চৌধুরী গ্রুপের ভুয়া চেয়ারম্যানের যত ফটোশপ প্রতারণা

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২১, ১০:৩৫ | আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২১, ১৩:১৯

আল-আমিন রাজু, ঢাকাটাইমস

চাইলেই যেকোনো তরুণীকে মডেল কিংবা নায়িকা বানানোর ক্ষমতা রাখেন তিনি। তার স্বনির্ধারিত পরিচয় চৌধুরী গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান। প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন। নামের আগে লেখেন আলহাজ। আওয়ামী লীগে কোনো পদপরিচয় না থাকলেও ক্ষমতাসীন দলটি থেকে উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীও। এমন সব দাবি নিয়ে নিজেকে উপস্থাপন করেন জনে জনে। এমনই নানা কায়দায় তার ফটোশপ প্রতারণার রাজ্য। 

কিন্তু এত সব করে শেষ রক্ষা হলো না তার। ধরা পড়তে হলো গোয়েন্দাদের জালে। এর পরই বেরিয়ে আসছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার আশিক চৌধুরীর প্রতারণার অভিনব সব কৌশল।

ফটোশপে এডিট করা একটি ছবিতে আশিক চৌধুরীকে প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ঢাকা টাইমসের হাতে আসা বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন আশিক। এমনকি ফটোশপের মাধ্যমে পত্রিকার শিরোনাম এডিট করে প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হিসেবে নিজের ছবি বসিয়েছেন।

ঢাকা মহানগরীর খিলগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ে নিজের ভিজিটিং কার্ড তৈরি করেছেন। দেশের অন্যতম গ্রুপ অব কোম্পানি ‘চৌধুরী গ্রুপের’ চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের পরিচয়ও দিতেন তিনি।

ফটোশপে বদলে যায় তার পরিচয়। তার নানা কৌশলের  পরিচয় প্রকাশে বাদ যায়নি বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনও। নিজেকে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচয় দিতেন। এমনকি জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনে সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার ছবি এডিট করে সেখানে বসিয়েছেন নিজের ছবি।

বিভিন্ন মেয়েকে মডেল ও অভিনেত্রী বানিয়ে দেয়ার কথা বলে কৌশলে তুলে নিতেন আপত্তিকর ছবি। পরে সেগুলো দিয়ে করতেন প্রতারণা। চৌধুরী গ্রুপ অব কোম্পানির নাম ব্যবহার করে ভুয়া ওয়েবসাইট বানিয়ে মূল চেয়ারম্যানের ছবি সরিয়ে নিজের ছবি বসিয়ে চাকরির বিজ্ঞাপন দিতেন। এরপর সেখানে চাকরি দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা। পাশাপাশি চাকরিপ্রার্থীদের চাকরিতে যোগদানের চিঠিও দিতেন।

অর্ধশিক্ষিত এই তরুণ দিতেন এবং নিতেন মোটিভেশনাল ক্লাসও। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় তরুণদের মোটিভেশন দিতেন। হতেন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের অতিথি। তার গায়ে থাকত মুজিব কোট। বক্তব্যের শুরুতে কথা বলতেন ইংলিশে।

চৌধুরী গ্রুপের নকল এই চেয়ারম্যানের কর্মকাণ্ডে হতবাক মূল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতেই আশিককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘সে বিভিন্ন মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের দিয়ে মডেল কিংবা অভিনেত্রী বানানোর কথা বলে ব্লাকমেইল করত। গ্রেপ্তারের পর বিভিন্ন মেয়ের আপত্তিকর ছবি তার মোবাইলে পাওয়া যায়। আমরা মনে করছি সে আরও অপরাধ করতে পারে। অর্ধশিক্ষিত এই ব্যক্তি কীভাবে এমন প্রতারণার কৌশল রপ্ত করল সেটি আমরা তদন্ত করব। সে বিভিন্ন জায়গায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়সহ নানা ধরনের ভুয়া পরিচয় দিত।’

মাহবুব আলম আরও বলেন, ‘আশিকের প্রতারণার বড় কৌশল হলো একটি বড় গ্রুপ অব কোম্পানির পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করা। চাকরির প্রলোভনসহ নানাভাবে প্রতারণা করত। নিজেকে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পরিচয় দিত। এছাড়া অনেকগুলো ছবিতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে তার ছবি। এগুলো সবই সে এডিট করে বসিয়েছে। প্রতারণার পর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের সব তথ্য ডিলিট করে দিত।’

একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আশিককে গ্রেপ্তার করা হলেও তার বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে বলে জানান যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম। বর্তমানে চৌধুরী গ্রুপের করা অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে দুই দিনের রিমান্ডে আছেন আশিক।

(ঢাকাটাইমস/১এপ্রিল/মোআ)