রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল নিয়োগে দুর্নীতি, দুদকের মামলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০১ এপ্রিল ২০২১, ১৭:১৯

রেলে খালাসি পদে ১৯ জনকে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এক কোটি দুই লাখ ৪৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপকসহ চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই মামলায় দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত খালাসি, ঠিকাদার, স্কুল শিক্ষক, পিয়ন, রেলের ড্রাইভারসহ আরও আটজনকে আসামি করা হয়েছে।

বুধবার দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

আসামিরা হলেন- রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ফারুক আহমেদ, মহাব্যবস্থাপক (প্রকল্প) মিজানুর রহমান, সহকারী মহাব্যবস্থাপক জোবেদা আক্তার, টিএসও রফিকুল ইসলাম, জিএমের গাড়ি চালক হারাদন দত্ত, শাহাজাহানপুর রেলওয়ে স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ সুরাইয়া সুলতানা, স্কুলের অফিস সহকারী আক্তার হোসেন, খালাসি আবুল বাশার খান, প্রধান সহকারী (সিপিও) খোন্দকার সাইফুল ইসলাম মামুন, টিকিট প্রিন্টিং স্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি দাশ, রেলের ঠিকাদার আমিরুজ্জামান আশীষ ও পারভিন আক্তার।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৪ জুলাই ৮৬৩ জন খালাসি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর সেই নিয়োগের পরীক্ষা নেয়া হয় ২০১৫ সালে। পরীক্ষার পর পরই নিয়োগ কমিটির এক সদস্য মারা যান এবং এক সদস্য বদলি হন অন্য মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু তাদের ওই দুইজনের স্থলে কাউকে সংযুক্তি না করেই ২০১৯ সালের ১১ মে ফলাফল ঘোষণা করেন কমিটির বাকি তিন সদস্য। এরপর থেকেই এ নিয়োগ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পরে দুদক তদন্তে নেমে রেলের সাবেক জিএমসহ চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পায়।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ খালাসি পদে নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, সচিব জোবায়দা আক্তার ও সদস্য রফিকুল ইসলাম মামলার অপর আসামি তৎকালীন জিএম সৈয়দ ফারুক আহমদকে ছয় পাতার কার্যবিবরণীতে অনিয়মে নিয়োগ পাওয়াদের নিয়োগ দিতে সুপারিশ করেন। কিন্তু নিয়োগ অনুমোদনের জন্য ৪০ দিন সময় নিলেও সৈয়দ ফারুক আহমেদ নিয়োগবিধি মানা হয়েছে কিনা যেমন- একজনের দুই চাকরি, এক পরিবারে দুজনের চাকরি, বয়স্ক লোককে চাকরি, এক স্কুল থেকে একাধিকজনকে চাকরি, জাল সনদে চাকরিতে নিয়োগ করা হচ্ছে কি না এসব দেখেননি।

এছাড়া কোটা মানা হয়েছে কি না, নিয়োগ কমিটির কমপক্ষে চারজনের সুপারিশ নেই কেন, এসবের কিছুই যাচাই করেননি। পরবর্তীতে দুদকের তদন্তেও তিনি এর সদুত্তর দিতে পারেননি। তদন্তে দুদক দেখতে পায়, আসামিরা পরস্পরের সহযোগিতায় ২০১৩ সালের ৪ জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এসব অপরাধ ঘটান।

দুদকের অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে, রেলওয়ের জিএমসহ আসামিরা পরস্পরের যোগসাজসে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিয়োগ কমিটির সদস্য এম এ জিন্নাহর মূল্যায়ন নম্বর যোগ না করে, অন্য সদস্য খলিলুর রহমানের স্বাক্ষর না নিয়ে তাদের সুবিধামত মার্কশিটে নম্বর বসান।

এছাড়াও নিয়োগকৃত এক পরিবারের দুই ভাইয়ের বয়সের পার্থক্য পাঁচ দিন হওয়া, ১৯ জনকে জাল সনদে চাকরি দেয়া এবং একজন বয়স্ক প্রার্থীকে জাল সনদে চাকরি দিয়েছেন। রেলের চার কর্মকর্তার এসব অপরাধের পাশাপাশি জিএমের চালক হারাধন দত্ত প্রভাব খাটিয়ে তার আত্মীয়ের বয়স্ক স্ত্রীকে জাল সনদে চাকরি দিয়েছেন।

ঢাকার শাহজাহানপুর রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুরাইয়া সুলতানা জালিয়াতির মাধ্যমে ১২ জনকে অষ্টম শ্রেণির সনদপত্র দেন। তাকে সহযোগিতা করেন স্কুলের অফিস সহকারী আক্তার হোসেন।

খালাসি আবুল বাশার খান তার নিকটাত্মীয় টিকিট প্রিন্টিং স্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি দাশ ও প্রধান সহকারি (সিপিও) খোন্দকার সাইফুল ইসলাম মামুনের সহযোগিতায় জাল সনদ দিয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। আর তাকে সহযোগিতা করায় মৃণাল ও মামুন তারাও একই অপরাধ করেছেন বলে তাদেরও আসামি করা হয় মামলায়।

এছাড়া রেলওয়ের ঠিকাদার ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের মালিক আমিরুজ্জামান আশীষ খালাসি পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে এস এ পরিবহণের মাধ্যমে ১৩ জন প্রার্থী থেকে ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। একই কায়দায় ঢাকার নাখালপাড়ার পারভীন আক্তার নয়জনকে চাকরি দেয়ার নাম করে ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। মোট আসামিরা এক কোটি দুই লাখ ৪৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন এই নিয়োগের মাধ্যমে।

দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘রেলের বিশাল এ নিয়োগে আমরা তদন্তের শুরুতেই ১৯ জনের দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছি। পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সেখানেও যাদের সম্পৃক্ততা পাব তাদের আসামি করা হবে। এছাড়া এখন যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১এপ্রিল/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :