নেয়ামত ভূঁইয়া’র অণুকাব্য (২য় কিস্তি)
১. ঘুমের দুর্ভিক্ষ
চোখে এখন নামায়না ঘুম; ঘুমপাড়ানি গান,
আর আসেনা মাসি পিসি, খায়না বাটার পান।
খাট ছিলোনা যখন ঘরে
বসতো তারা চোখের ’পরে,
এখন ঘরে খাট রয়েছে; নেই যে ঘুমের বান-
ঘুম-পরীরা গেছে উড়ে দূরের পরীস্থান।
২. ভ্রষ্ট কৃষ্টি
তালে তালে তাল দিওনা, ভুলে নিজের তাল,
পরের গালে ফুঁ দিওনা লাগলে নিজের ঝাল।
ভুলছো নিজের গানের রীতি
ধরছো তুমি লম্ফ গীতি,
কৃষ্টি-নায়ে উড়ছে যেনো পাগলা হাওয়ার পাল-
পরের দেশের কুমির আনতে নিজেই কাটো খাল!
৩. অতি আদরের চিতা
ছেলের হাতে আর গুঁজোনা উপরি টাকার তোড়া,
লাগাম টানো; নইলে যাদু চড়বে নেশার ঘোড়া।
পড়লে নেশার পাল্লায়
যাদু যাবে গোল্লায়,
নেশার ঘায়ে ফাটা কপাল আর লাগেনা জোড়া-
মা-বাবা আর ছেলের কপাল চিতায় যাবে পোড়া।
৪. কালো টাকার কারসাজি
কালো টাকা শাদা করার মন্ত্র যদি জানো,
কালো টাকার পাহাড় গ’ড়ে বস্তা ভ’রে আনো।
বিধির যতো যন্ত্র আছে
সব লুটাবে পায়ের কাছে-
নষ্ট সমাজ তোমায় দিবে যোগ্য প্রতিদানও;
তোষামোদি কোরাস তোমার গাইবে জয়গানও।
৫. হারের জিত
যতোবার হেরে যাই, ততোবারই ভাবি,
হারতে হারতে হয়তো হারিয়েই যাবো
এমন অতলে,
যেখানে হারাবার জন্যেও কেউ আমাকে
আর কোনোদিন পাবে না খুঁজে-
অবশেষে দেখি আমার কসরতের কাহিনি
সোনালি অক্ষরে লিখা আছে
হারমানা হারে সজ্জিত
অতিউচ্চ বিজয়-গম্বুজে।
জয়-পরাজয় মূল কথা নয়; লড়াই করা-ই আসল,
কসরতের ওই কাহিনিই লেখে চূড়ান্ত ফলাফল।৬. নিষ্ফলা জ্ঞান
পিঁপড়ারদের শৃঙ্খলা দেখে বলি শোনো,
‘এই কথা খাঁটি,
তোমাদের জীবনযাত্রা আরো হতো পরিপাটি;
তোমরা যদি না করে অকারণ অবহেলা,
খানিকটা শিখতে ধারাপাত,শতকিয়া, নামতা,
ব্যাকরণ,আদর্শলিপি, বিজ্ঞান ও কলা’--
পিঁপড়ারা হেসে বলে,
‘এতোসব পড়েও কি মানুষ আজ অবধি
শিখেছে কোনো শৃঙ্খলা?
মানুষের কাগুজে জ্ঞান নিয়ে আমরা
বাড়াতে চাই না কোনো উটকো ঝামেলা।
মানুষের জ্ঞান মানুষ নিজে বেঁটে খাক,
প্রকৃতির জ্ঞানই শুধু আমাদের থাক।
৭. বিবেকবোধের বিড়ম্বনা
ভাবে যারা খুব বেশি আগুপিছু,
ওই পাতে পড়বেনা ভালো কিছু।
আঙ্গুল চুষে চুষে
হাত দুটি ঘষে ঘষে,
চলতেই হবে ক’রে মাথা নিচু।৮. বিচ্ছেদ বেদনা
তোমার জন্যে জমলো আমার চোখের নিচে কালি,
ঘোর হতাশায় আশা হলো কুমড়ো ফালি ফালি।
যতো ডাকি যাচ্ছো তফাত
ভালোবাসা হচ্ছে নিপাত,
তুমি ছিলে আমার রাধা; আমি বনমালী-
কেমন করে হলেম এখন তোমার চোখের বালি?
৯. সমাজ-বাগিচার বুলবুল
চারিদিকে চাপাবাজ যতো মারে গুল,
তারা দেখি কালে কালে পেয়ে যায় কূল।
তারা যতো চাপা মারে
শ্রোতাদের মন কাড়ে,
ভক্তরা ভক্তিতে হয় মশগুল-
ভিড় করে গোলাপি ও চম্পা,পারুল।
কথা বলে যে নীতিতে
কাজ করে বিপরীতে,
আখের গোছাতে তারা ব্যস্ত ব্যাকুল,
নতুন নতুন চালে,
তারা থাকে মগডালে
সমাজের বাগিচায় সাজে বুলবুল।
১০. কলমের দিন শেষ
কলমের এখন নেই প্রয়োজন
কলমের কাজ সেল ফোনই করে,
কলম এখন স্থান করে নেবে
দেশে দেশে যাদুঘরে।
তবে এর স্মৃতি রবে অম্লান
কালে ও যুগান্তরে,
অন্তত: গত বিশ শতকের
প্রেমিকের অন্তরে।১১. কালের সখ্য
বর্তমান আর অতীত নিয়ে তর্ক হলে নিত্য,
কেউ জেতেনা; কেবল তাদের বিষাক্ত হয় চিত্ত।
বর্তমান আর অতীত যদি
বিবাদ করে নিরবধি
ভবিষ্যতই ধ্বংস হবে; খুইয়ে বেসাত-বিত্ত।বর্তমানকে ডেকে বলে অতীত মহাশয়,
আমার উদর থেকেই যে তোর জন্ম নিতে হয়।
আমায় যদি ভুলিস তবে
ভবিষ্যত ও ধ্বংস হবে;
বর্তমান আর অতীত মিলেই ভবিষ্যতের জয়।১২. পিছুটান
নাই যার সংসারে কোনো পিছুটান,
তার নাকি আনন্দ চির অফুরান।
তবে তার এক গলা গায় যেই গান,
সেই গানে নাই তাল, ছন্দ বা তান।
পিছুটানে পায় প্রাণ সমুখের গতি,
তাই এতো কসরতে অতো উন্নতি।
পিছুটানে থাকে যেই হৃদয়ের টান,
সেই টানে সভ্যতা হয় আগুয়ান।পিছুটান মুছে গেলে, সব টানই সাড়া,
বাঁচবার আশাটাও মাঠে যাবে মারা।
-
১৩. প্রেমের সত্যপাঠ
আমি তোমাকে ভালোবাসি,
তাই তোমারও আমাকে ভালোবাসতে হয়,
ব্যাপারটা আসলে সে রকম নয়;
বয়েসের যেই সিলেবাস আছে
সেটা ভালো করে আগে বুঝে নাও,
তারপর ‘আই লাভ ইউ’ বলে
গোলাপের ডাঁটা ধরিয়ে দাও।
‘ভালোবাসা’ তোমার সিলেবাসে আছে
তাই সে-পাঠও চুকাতে হয়,
এভাবে ভেবো; তাহলেই শেষে
ক্রাশ খাওয়ার আর থাকেনা ভয়।