‘পূর্বেকার সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে কমতে পারে নৌ দুর্ঘটনা’

প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২১, ২০:৩১ | আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২১, ২০:৩২

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস

বিগত সময়ে বাংলাদেশে যেসব নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছিল সেগুলোর কারণ অনুসন্ধান করে তদন্ত কমিটি যেসব সুপারিশ করেছিল সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে নৌদুর্ঘটনা কমে আসতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মীর তারেক আলী।

সোমবার নৌদুর্ঘটনা রোধে করণীয় সম্পর্কে বলতে গিয়ে ঢাকাটাইমসকে এমন পরামর্শের কথা জানান তিনি।

বাংলাদেশে নৌ দুর্ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিছুদিন পর নৌপথে দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। দুর্ঘটনার পর ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটি প্রতিবারই নিয়ম অনুযায়ী তাদের সুপারিশ দিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেসব সুপারিশের কী হয় এবং সেগুলো বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেয়া হয় কিনা পরবর্তীতে জানা যায় না।

রবিবার রাতে শীতলক্ষ্যা নদীতে বালুবোঝাই জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবোঝাই লঞ্চডুবির ঘটনার পর অন্যান্য দুর্ঘটনার মতো এবারও দুর্ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে কমিটি।

দুর্ঘটনার পরপরই তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও ঘটনার রেশ ফিকে হয়ে যাওয়ার পর তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদন এবং তার সুপারিশমালা অনেকটা আলোচনার বাইরে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত সুপারিশগুলো আলোর মুখ দেখতে পায় কিনা তা অজানা থেকে যায়।

নৌপথে দুর্ঘটনা রোধে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বুয়েটের অধ্যাপক ড. মীর তারেক আলী বলেন, আগে যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছিল সেগুলোর কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সে কমিটিগুলো সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। এমন শতাধিক প্রতিবেদন পড়ে রয়েছে, যা নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা বা কোনো কাজ হয়নি। সেসকল প্রতিবেদন নিয়ে বসতে হবে কিছুটা সময়ের ব্যবধানে হলেও তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে নৌ দুর্ঘটনা কমে আসতে পারে।

বুয়েটের নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনা নিয়মিত ঘটছে, তদন্ত কমিটি হচ্ছে। দুর্ঘটনা কমছে, কিন্তু সেভাবে কমে আসছে না। এর আগে যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে ‍সেগুলোতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কয়েকশ হবে। সে তদন্ত কমিটিগুলোর প্রতিবেদন নিয়ে বসা দরকার। কমিটির প্রতিবেদনের শেষে একাধিক সুপারিশ আছে। সে পরামর্শগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করা দরকার। একটা টার্গেট নেয়া দরকার, যে এই এই সুপারিশগুলো আগামী ৫ বছরের মধ্যে বা ১০ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করব। এভাবে যদি আগানো যায় তাহলে আমার মনে হয় কিছুটা হলেও এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।’

নৌযান সার্ভেয়ার ও সার্ভের মান বৃদ্ধির তাগিদ দিয়ে অধ্যাপক মীর তারেক আলী বলেন, ‘সার্ভেয়ারের সংখ্যাটাও বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে নৌপথে যে যানগুলো আছে, সেগুলো যে বিধিতে চলে, সে বিধিতে বলা আছে, সার্ভেয়ার যখন সার্ভে করবে তখন কি কি বিষয় দেখবে। বিধিতে যেটা বলা আছে, সেগুলো যদি ঠিক মতো পালন করতে হবে।’

শীতলক্ষ্যার দুর্ঘটনা ও গত বছর সদরঘাটের দুর্ঘটনা দুটি দুর্ঘটনাই চালকের অদক্ষতার ফল জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘গতকাল যে দুর্ঘটনাটি ঘটল এবং এক বছর আগে সদরঘাটে মার্নিং বার্ড লঞ্চের যে দুর্ঘটনাটি ঘটল দুইটা ক্ষেত্রেই চালকের বেপরোয়া ও অদক্ষতা পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান। এখানে আমাদের আরেকটা সমস্যা হচ্ছে মোট নৌযানের সংখ্যাটা কত তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। যখন আপনার কাছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই, তখন চালকের প্রয়োজন তা আপনি পাবেন না। বর্তমানে আমাদের মাস্টার বা ড্রাইভাররা যখন লাইসেন্সটা পায়, এই প্রক্রিয়াটাও কিন্তু স্বচ্ছ্ব না। এখানে অনেক ধরণের ব্যাপার আছে। পরীক্ষা দিয়ে একজন অনুমোদন পাবে এটা নিশ্চিত করতে হবে। যে পরিমাণ নৌযান আছে সে পরিমাণ চালক নাই।’

ছোট নৌযানের বিষয়ে বুয়েটের এই শিক্ষক বলেন, ‘মর্নিং বার্ড ও গতকাল যে দুর্ঘটনা ঘটল এ ধরণের নৌযানগুলো খোলের মধ্যে যাত্রী নেয়। ডেকে নিচে। কিন্তু একটা যাত্রীবাহী নৌযানের সজ্ঞায় এটা পরে না। নৌযান পানির মধ্যে কাত হবেই, সেটা আপনি যত ভালই ডিজাইন করেন। কিন্তু কাত হলেই তা ডুবে যাবে না। এ ব্যাপারে একাধিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে এগুলো চলাচলের জন্য আনফিট। এগুলো তুলে ফেলতে হবে। এগুলো রাখা যাবে না। এগুলো দুর্ঘটনা ছাড়াই যে চলতে পারছে সেটাই অনেক বড় ব্যাপার। তদন্ত প্রতিবেদনে আমরা এ নৌযানগুলোকে তুলে ফেলার সুপারিশ করেছি। কিন্তু সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই।

ঢাকাটাইমস/০৫এপ্রিল/কারই/এমআর