সন্তানের চিন্তা করেই বাতেনের তরমুজ চাষ

সুজন সেন, শেরপুর
| আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২১, ১৪:৪৩ | প্রকাশিত : ০৬ এপ্রিল ২০২১, ১৪:৪১

বাজার থেকে কেনা তরমুজ খেয়ে এক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে, টেলিভিশনে এমন সংবাদ দেখে সন্তানকে বাজার থেকে কেনা তরমুজ খাওয়াবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন। সেই চিন্তা থেকে নিজেই তরমুজ চাষ করেন শেরপুরের আব্দুল বাতেন। ভালো ফলন ও লাভবান হওয়ায় পরবর্তীতে বাণিজ্যিকভাবে এ সুস্বাদু ফল চাষ করেন তিনি।

শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতীর ৩ নম্বর নলকুড়া ইউনিয়নের হলদি গ্রামের মফিজ উদ্দীনের ছেলে আব্দুল বাতেন। তিনি পেশায় চিফ জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালতের একজন গাড়িচালক।

বাতেন বলেন, ২০২০ সালে নিজের পাহাড়ি জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ২০-২৫টি তরমুজের চারা রোপণ করি। এর কিছুদিন পর লক্ষ্য করি পাহাড়ি মাটিতে তরমুজের ফলন খুব ভালো হয়েছে। ওই সময়ে প্রায় ৭০-৮০টি তরমুজ পাই যার প্রতিটির ওজন ছিল ১২-১৮ কেজি। ফলে আমার বাচ্চাকে নিরাপদ তরমুজ খাওয়াতে পেরেছি এবং আমরাও খেয়েছি। ওই তরমুজগুলো খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টি এবং কালারও (রং) খুব সুন্দর ছিল। তরমুজগুলো ছিল ট্রপিকেল ড্রাগন জাতের। পরে চিন্তা করলাম ফলন যেহেতু ভালো হয়েছে তাহলে বাণিজ্যিকভাবে তা চাষ করা সম্ভব। তাই এ বছর বাণিজ্যিক আকারেই তরমুজের আবাদ করেছি।’

তরমুজ মূলত বেলে দোঁআশ মাটির ফসল। কিন্তু পাহাড়ি এলাকার এটেল বা এসিডিক মাটিতে এ ফসল উৎপন্ন হওয়ায় এ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এখন প্রায় প্রতিদিনই পাশের শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষকরা তরমুজের ফলন দেখতে বাতেনের বাগানে ভীড় করছেন। কেউ কেউ পরের বছর তাদের পাহাড়ি জমিতে তরমুজের আবাদ করবেন বলে ইচ্ছা পোষণ করেছেন। আবার কেউ পাহাড়ে তরমুজ ফলানোর বিষয়টিকে সন্তানের জন্য বাবার ব্যতিক্রমী উপহার হিসেবে দেখছেন।

বাতেন জানান, বাড়তি আয়ের আশায় ২০১৩ সালে হলদি গ্রামের পাহাড়ি টিলার নিজস্ব ৭৫০ শতাংশ জমিতে নানা জাতের ফলের মিশ্র বাগান গড়ে তোলেন তিনি। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেন আম, কাগজি ক্রস লেবু, সিডলেস এলাচি লেবু, মাল্টা, পেঁপে, জাম্বুরা ও কমলা। আর এ বাগান থেকে আশানুরুপ লাভও পান। এপর সন্তানকে বিষমুক্ত ফল খাওয়ানোর ইচ্ছা থেকে তরমুজ চাষ করা হয়। সেখানেও সফলতা আসে। তাই চলতি বছর ১০০ শতাংশ জমিতে মাল্টা বাগানের ফাঁকে ফাঁকে বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করেন তরমুজ। এজন্য তার এক লাখ টাকা খরচ হয়।

তিনি বলেন, স্থানীয় কৃষি অফিসের বীজের ডিলারের মাধ্যমে থাইল্যান্ডের ট্রপিকেল ড্রাগন জাতের একশ গ্রাম তরমুজ বীজ সংগ্রহ করেন। এর দাম পড়ে আড়াই হাজার টাকা। আর এ থেকে প্রায় আড়াই হাজার চারা পাওয়া যায়। এর মধ্যে অসাবধানতাবশত একশ চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর তিনি দুই হাজার চারশ চারা মাল্টা বাগানের ফাঁকে ফাঁকে ৭-৮ ফুট দুরত্ব রেখে বপন করেন। প্রতিটি গাছে ৭-৮টি করে তরমুজ এসেছে। বর্তমানে বয়স ভেদে এক একটি তরমুজের ওজন হয়েছে ৩-৫ কেজি। গেল অগ্রাহায়ণ মাসে ওইসব চারা রোপণ করা হয়েছিল। আর চৈত্র মাসের শেষে ফল পরিপক্ক হলে প্রতিটি তরমুজের ওজন হবে প্রায় ১২-১৮ কেজি। পোঁকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত স্প্রে ব্যবহার না করে পুরো তরমুজ বাগান জুড়ে বসিয়েছেন সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ। ওই বাগান থেকে ১২ হাজার ৫০০টি তরমুজ পাওয়া যাবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা।

আবাদ কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তরমুজ বীজ বপন করার আগে তা ১৮ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর পানি থেকে বীজ আলাদা করে ছয় ঘণ্টা রোদে শুকাতে হয়। পরে এক ঘন্টা ঠান্ডা স্থানে রাখার পর তা রোপণ করার জন্য উপযুক্ত হয়। বপনের এক সপ্তাহের মধ্যে বীজ থেকে চারা অঙ্কুরোদগম হয়। আর আশানুরুপ ফলন পেতে আগে থেকে ক্ষেতে জৈব সার প্রয়োগ করতে হয়। ওই জমিতে চারা রোপনের পর টিএসপি, পটাস ও বরুণ সার দিতে হয়। তবে তিনি তরমুজ দ্রুত বৃদ্ধি করতে ক্ষতিকর হরমোন ব্যবহার করেন না বলে জানান।

সরেজমিনে ওই তরমুজ চাষির ক্ষেতে গেলে কথা হয় বাগান পরিচর্যাকারী কোপেন কোচ, রেহানতি কোচ, ময়না কোচ ও সুমি কোচের সাথে।

তারা বলেন, জেলার পাহাড়ি এলাকায় এবারই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ হচ্ছে। তাই এর উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরে রাখতে বাগানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন তারা। প্রত্যেকে এর পারিশ্রমিক হিসেবে দিনে ৩০০ টাকা করে পেয়ে থাকেন।

ঝিনাইগাতীর কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, তরমুজ বাগান পরিচর্যার বিষয়ে বাতেনকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সকল প্রকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই বাগান বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৬এপ্রিল/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :