ভোলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ, হাসপাতালে শয্যা সংকট

ইকরামুল আলম, ভোলা
 | প্রকাশিত : ০৬ এপ্রিল ২০২১, ১৬:১১

ভোলায় গত এক সপ্তাহ ধয়ে হঠাৎ বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। এতে হাসপতালের শয্যা সংকটের কারণে বারান্দার মেঝেতেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। তাতেও সংকুলান হচ্ছে না। এক প্রকার গাদাগাদি করেই শুয়ে আছেন রোগীরা। এক দিকে করোনা মহামারি বাড়ছে। অন্যদিকে ডায়রিয়ার প্রকোপে মনে হচ্ছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

সোমবার দুপুরে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল (সদর হাসপতাল) ঘুরে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ভেতরে ও বাইরে যেন তিল ধারনের ঠাঁই নেই। হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের জন্য নির্ধারিত ১০ বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ৫০-৬০ জন। ওয়ার্ডের ভিতরে যায়গা না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বেশিরভাগ রোগী।

অন্যদিকে একসঙ্গে এতো রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তার ও নার্সদের। তবে ডায়রিয়া আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারী।

চিকিৎসা নিতে আসা সুরাইয়া বেগম জানান, গত তিন দিন ধরে তার চার বছরের মেয়ে সুমাইয়া ডায়রিয়ায় ভুগছে। দুই দিন আগে হাসপাতালে নিয়ে এলে শয্যা না পেয়ে বারান্দার মেঝেতে রেখে সন্তানের চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখনও সে সুস্থ হয়নি।

ইয়ানুর বেগম জানান, তার ১২ বছরের মেয়ে গত তিন দিন ধরে ডায়রিয়া ও সঙ্গে বমি হওয়ায় সকালে তাকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন। কিন্তু হাসপাতালের বেড তো খালি নেই। এরপর বারান্দায়ও রাখার মতো যায়গা নেই। ফলে অন্য রোগীর বিছানায় রোগীকে শোয়ানো হয়েছে। এতে অনেক কষ্ট হচ্ছে তাদের।

বারান্দায় মেঝেতে চিকিৎসা নেয়া একাধিক রোগীর স্বজন জানান, এই করোনা মহারারির মধ্যে এরকম খোলা যায়গায় চিকিৎসা নিতে গিয়ে তারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। একই যায়গায় গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে গিয়ে সুস্থ লোকও অসুস্থ হয়ে যায়। কারণ, বারান্দার মেঝেতে দৈনিক শত শত মানুষ হাঁটাচলা করে। এদিকে এত রোগী একসঙ্গে আসায় চিকিৎসক ও নার্সরা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স নাসরিন আক্তার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৫৭ জন রোগী। নতুন করে সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আরো ২০ জন রোগী ভর্তি হয়। এর মধ্যে অনেককে রিলিজ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ৫০ জনেরও বেশি রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে এই অবস্থাতেই চলছে। এ অবস্থায় আমরা মাত্র দুজন নার্স এতো রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আমরা দুজন টানা আট ঘণ্টা করে ডিউটি করি। তারপর আবার নতুন দুজন আসে। এক কথায় বেড ও জনবল সংকট চরম আকার ধারণ করছে।

ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সিরাজউদ্দিন জানান, হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের শয্যা সংখ্যা ১০টি। বর্তমানে হাসপাতালে দৈনিক গড়ে ৬০-৭০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি থাকে। এখনও ডায়রিয়া রোগীদের জন্য পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডেও শয্যা ফাঁকা নেই। বাধ্য হয়ে রোগীদেরকে হাসপাতালর বারান্দার মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা চেয়েছি তাদেরকে নতুন ভবনে নিয়ে যেতে। কিন্তু বর্তমানে করোনা প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাই অন্য রোগী সেখানে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্স সংকট রয়েছে। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে মাত্র ১০ জন চিকিৎসক ও ৫৮ জন নার্স রয়েছে। এই চিকিৎসক ও নার্স দিয়ে হাসপাতাল চালানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে করোনা বেড়ে যাওয়ায় করোনা ইউনিটের জন্য আটজন চিকিৎসক দেয়া হয়েছে। বাধ্য হয়ে সিভিল সার্জনের মাধ্যমে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আরো আটজন চিকিৎসক এনে কোনো মতে রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও আমি সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নিকট আরো নার্স ও ডাক্তারের জন্য চিঠি পাঠিয়েছি।

(ঢাকাটাইমস/৬এপ্রিল/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :