স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলতে চান ব্যবসায়ীরা

সারা দেশে লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ এপ্রিল ২০২১, ২১:৪১

করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের জন্য সরকার ঘোষিত চলমান বিধিনিষেধ বা লকডাউনের মধ্যে দোকানপাট খোলা রাখার দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, গত বছরের লকডাউনে যে ক্ষতি হয়েছে তাদের, তা-ই এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি তারা। নতুন করে এবারের লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকলে পুঁজি হারিয়ে পথে বসতে হবে তাদের। তাই তারা দোকানপাটে লকডাউন চান না। স্বাস্থ্যবিধি দোকান খোলা রাখতে চান।

চলমান লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লা, জামালপুরসহ দেশের প্রায় সব জেলায় লকডাউন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকা-আরিচা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধও করা হয় মঙ্গলবার।

রাজশাহীতে লকডাউন উপেক্ষা করে দোকান খুলেছেন রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে সাহেব বাজারের আরডিএ মার্কেটের দোকানগুলো খোলেন তারা।

রাজধানীতে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর টোকিও স্কয়ারের সামনে মানববন্ধন করেন বুটিকস কারখানা মালিক ও শ্রমিকরা। বাংলাদেশ বুটিকস ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে আয়োজিত এ মানববন্ধনে যোগ দেন পাঁচ শতাধিক বুটিকস কর্মী। তাদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে মানববন্ধনে উপস্থিত হন বুটিকস হাউজের মালিকরাও।

শ্রমিকরা জানান, বুটিকস প্রতিষ্ঠানগুলোতে তৈরি পোশাক সারাদেশের বিপণিবিতানগুলোতে বিক্রি হয়। বিপণিবিতান বন্ধ থাকলে বুটিকস শ্রমিকরাও বেকার হয়ে পড়েন। গত বছর রমজানে লকডাউনের কারণে এ খাতটি বিশাল ক্ষতির মুখে পড়ে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের হাজার হাজার বুটিকস শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। তাদের দিকে তাকিয়ে চলমান অবস্থা ও লকডাউনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

অ্যাসোসিয়েশনটির একজন সদস্য আনিসুর রহমান। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি লকডাউন তুলে নিক। মার্কেট খুলে দিক। দোকান মালিকরা দোকান খুলুক। তাদের দিয়ে আমরা, আমাদের দিয়ে তারা। দোকান মালিকরা ব্যবসা করতে পারলে আমরা টাকা পাব। কর্মচারীদের চালাতে পারব, আমরা চলত পারব। নইলে করোনায় মারা যামু কি, এমনিই না খাইয়া মারা যামু।’

গত বছরের ক্ষতি এখনো পুষিয়ে উঠতে পারেননি দাবি করে আনিসুর রহমান বলেন, ‘গত বছর লকডাউনের জন্য আমাদের ব্যবসা হয়নি। আমরা বছরে একটা মাস সিজন পাই। এই রমজান মাসেই আমাদের ব্যবসা হয়। একটা মাসের জন্য আমাদের অনেক আয়োজন থাকে। লোন করে রাখছি। এখন আমরা ব্যবসার মুখ দেখব। সেই সময় লকডাউন। এখন আমরা যাব কোথায়? কারখানা ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন কোথা থেকে দেব? আমরা চলব কীভাবে?’

বাংলাদেশ বুটিকস ম্যানুফেকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের আওতাধীন দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজারের বেশি কর্মী রয়েছেন। যাদের সবাই এ মুহূর্তে বেকার হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

সকালে টোকিও স্কয়ারের সামনে মানবন্ধন শুরু হলেও বেলা ১২টায় আন্দোলনকারীরা মিছিল বের করেন। মিছিলটি রিং রোড হয়ে শ্যামলি পৌঁছায়। সেখানে মিরপুর রোড বন্ধ করে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করেন বুটিকস শ্রমিকরা। তবে পুলিশি বাধায় তারা সেখানে অবস্থান করতে পারেননি। সেখান থেকে পুরনায় মিছিল নিয়ে রিং রোড শম্পা মার্কেট এলাকায় এসে বুটিকস শ্রমিকদের কর্মসূচি শেষ হয়।

এদিকে মার্কেট খুলে দেয়ার দাবিতে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় তৃতীয় দিনের মতো নিউমার্কেট এলাকায় বিক্ষোভ করেন নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটসহ আশপাশের ব্যবসায়ী ও মার্কেটগুলোতে কর্মরত শ্রমিকরা। দুপুর পর্যন্ত এ বিক্ষোভ চলে।

একই দাবিতে মিরপুর ১ ও ১০ নম্বর এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন স্থানীয় মার্কেটগুলো মালিক-শ্রমিকরা। সকাল ১১টায় শুরু হয়ে বেলা ১টা পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ চলে।

মার্কেট খুলে দেয়ার দাবিতে ঢাকা বাইরেও চলছে লাগাতার মানববন্ধব ও বিক্ষোভ। মঙ্গলবার বেলা ১২টায় সাভার নিউমার্কেটের সামনে মার্কেট ও দোকানপাট খুলে দেওয়ার দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এতে অংশ নেন সাভার নিউমার্কেট, সাভার সিটি সেন্টার, রাজ্জাক প্লাজা, অন্ধ সুপার মার্কেট সহ বিভিন্ন মার্কেটের কয়েক হাজার ব্যবসায়ী।

এ সময় প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনটি অবরোধ করে রাখেন তারা। পরে পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন আলোচনার আশ্বাস দিয়ে তাদের সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, তারা ঋণগ্রস্ত। দেনার দায়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে সড়কে নেমেছেন।

স্থানীয় এক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা ঋণ করে দোকানে মালামাল তুলেছি, আমাদের দোকান ভাড়া গতবারের লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকা সত্ত্বেও একটাকাও মাফ করেনি, এখন ঈদের সিজন এই সিজনেও যদি মার্কেট বন্ধ থাকে তাহলে ভিখারি হয়ে যাব। মার্কেটের দোকানদার আর সেলসম্যানদের ঘরে খাবার থাকবে না। তারা না খেয়ে মারা যাবে। আমাদের দাবি, এখনই মার্কেট খুলে দেওয়া হোক।‘

সাভার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, ‘সরকার যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন তা সবার মেনে চলা উচিত। তাই আমি ব্যাবসায়ী ভাইদের অনুরোধ করছি শান্ত থাকার জন্য। ব্যবসায়ীদের বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।‘

স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সিরাজগঞ্জের ব্যবসায়ী সমাজ। মঙ্গলবার সকালে সিরাজগঞ্জ শহরের এস এস রোডস্থ এলাকায় সিরাজগঞ্জ শহর ব্যবসায়ী সমিতির আয়োজনে এ মানববন্ধন হয়। সর্বস্তরের ব্যবসায়ীরা এতে অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল সিরাজগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

লকডাউন প্রত্যাহার করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ময়মনসিংহের নান্দাইলের ব্যবসায়ীরা। সকালে নান্দাইল বাজারের ব্যবসায়ীরা লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভ মিছিলটি বের করেন। মিছিলটি নান্দাইল বাজার এলাকা প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এসে অবস্থান নেয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ধৈর্য ধারণ করতে বক্তব্য রাখেন নান্দাইল পৌরসভার মেয়র রফিক উদ্দিন ভূইয়া।

শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ঠিকমতো পরিশোধসহ বিভিন্ন দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন বস্ত্র ব্যবসায়ী কর্মচারী শ্রমিকরা। মঙ্গলবার বিকাল তিনটায় শহরের বড়বাজার সংলগ্ন ফাল্গুনি বস্ত্রালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে তারা সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার দাবিতে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করেছে। মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে বাজারের দুই শতাধিক ব্যবসায়ী এই বিক্ষোভ করেন।

কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ে অবস্থান ও বিক্ষোভ পালন করেন বিভিন্ন শপিং মল, দোকান পাটের ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। এ সময় নগরীর লিবার্টি মোড় থেকে শুরু করে কান্দিরপাড় পর্যন্ত রাস্তায় ব্যবসায়ীরা জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। বিক্ষোভের অংশ হিসেবে শহরের অন্যান্য এলাকায়ও ব্যবসায়ীরা নিজেদের দোকান-প্রতিষ্ঠান ও শপিংমলের সামনে অবস্থান নেন।

জামালপুরে দোকান খোলার দাবিতে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন মালিক-কর্মচারীরা। এই বিক্ষোভের কারণে প্রধান সড়কের দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শতাধিক দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা শহরের তমালতলায় সমাবেত হয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভের পর জামালপুর চেম্বার অব কমার্সের নেতারা বিষয়টি প্রশাসনের সাথে আলোচনার আশ্বাসে দিলেও সড়কেই অবস্থান করে বিক্ষোভকারীরা। পরে জামালপুর সদর থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

করোনার লকডাউন না মেনেই দোকান খুলেছেন রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে সাহেব বাজারের আরডিএ মার্কেটের দোকানগুলো খোলেন তারা। তবে দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম ছিল। মার্কেটের বাইরের দিকের দোকান বন্ধ রাখা আছে।

দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, আরডিএ মার্কেটের ভেতর কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্যের দোকানগুলো খোলা। ব্যবসায়ীরা দোকান খোলা রাখলেও নেই ক্রেতা। তাদের দাবি, ক্রেতারা জানে না দোকান খোলা আছে। বিষয়টি জানাজানি হলে ক্রেতার সংখ্যা আরও বাড়বে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু আসলাম জানান, সব দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/৬এপ্রিল/কারই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

র‌্যাবের নতুন মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব নিলেন কমান্ডার আরাফাত ইসলাম

ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী

ছয় দিনের সফরে আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

পাঁচ দিনে হিট স্ট্রোকে প্রাণ গেল ২৫ জনের

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি নেই: যুক্তরাষ্ট্র

ট্রেনভাড়া বাড়ছে না, ভর্তুকি প্রত্যাহার হচ্ছে: রেলমন্ত্রী

তীব্র তাপপ্রবাহ: মন্ত্রণালয়কে একগুচ্ছ সুপারিশ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির

চলমান তাপপ্রবাহ: সারাদেশে গাছ লাগানোর নির্দেশনা

উপজেলায় ভোটের আগেই ৭ চেয়ারম্যান ও ৯ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত

বিআইআইএসএসে ‘লেবার মাইগ্রেন্টস ফরম সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :