‘ম্যানেজমেন্ট ঠিক না থাকলে শুধু চিকিৎসকের করার কিছু নেই’

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২১, ২০:৩৪ | প্রকাশিত : ০৭ এপ্রিল ২০২১, ২০:২৬

অনেক হাসপাতালে কেবল বেড দিয়ে কোভিড ইউনিট করা হয়েছে। সেখানে কোভিড রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এক্ষেত্রে রোগীর সেবায় চিকিৎসকের তেমন কিছুই করার নেই। ভালো চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

বুধবার বিকালে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রচার ও জনসংযোগ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল ঢাকা টাইমসকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান।

মিজানুর রহমান কল্লোল বলেন,‘যেকোনো হাসপাতালের কথা বলেন, সেখানে ম্যানেজমেন্ট একটা বড় ব্যাপার। ম্যানেজমেন্ট ঠিক না থাকলে একজন ব্যক্তি চিকিৎসক কিছু করতে পারবে না। রোগীদের ক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে এগিতে আসতে হবে। একটা হাসপাতালে অক্সিজেনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। অনেক হাসপাতালেই শুধু সিট দিয়ে রেখেছে, কিন্তু অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। ওই হাসপাতালে কোভিড রোগীরা তো সঠিক চিকিৎসা পাবে না।’

প্রতিটি হাসপাতালে কোভিড ও নন কোভিড রোগীদের চলাচলের জন্য আলাদা রাস্তা রাখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালগুলোকে কোভিড ও নন কোভিড এই দুই ভাগে ভাগ করে ফেলতে হবে। হাসপাতালের দুই রাস্তা থাকতে হবে। এক পাশ দিয়ে কোভিড রোগীরা চলাচল করবে, আরেক পাশ দিয়ে নন কোভিড রোগীরা চলাচল করবে।’

চিকিৎসক ও হাসপাতালে কোভিড নিয়ে আতঙ্ক কেটে গেছে বলে জানান এই চিকিৎসক। তিনি বলেন,‘গতবার অনেক হাসপাতাল রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছিল, কিন্তু এবার সেটা হচ্ছে না। তখন এটা নতুন একটা জিনিস ছিল। সবার মধ্যে আতঙ্ক ছিল। এখন সে আতঙ্কটা কেটেছে এবং মোটামুটি সব হাসপাতালে রোগী ভর্তি হচ্ছে।’

হাসপাতালগুলোতে কোভিড আক্রান্ত রোগীরা সিট পাচ্ছেন না। অনেক রোগীকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তার মতে এর কারণ হচ্ছে, মৃদু উপসর্গ নিয়েই অনেক কোভিড রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ফলে অনেক গুরুতর রোগীদের প্রয়োজন হলেও হাসপাতালে জায়গা দেয়া যাচ্ছে না।

ডা. কল্লোল বলেন, ‘কোভিডে মৃদু থেকে মাঝারি পর্যায়ে আক্রান্ত উপসর্গ রোগীদের চিকিৎসা বাসাতেই করা যায়। কিন্তু এই রোগীরা হাসপাতালগুলোতে গিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। এতে করে সিটগুলো অপচয় হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে মারাত্মক রোগীরা যখন আসছেন তারা ভর্তি হতে পারছেন না। তারা ফেরত আসছেন। গতকাল একজন রোগী ঢাকার অনেক হাসপাতালে গিয়েও ভর্তি হতে পারেননি। কারণ সিট নেই। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মৃদু যে উপসর্গ এমন রোগীদের ভর্তি নেয়ার দরকার নেই। তারা বাসায় বসেই চিকিৎসা নিতে পারেন। তারা বাসায় বসে কোভিড চিকিৎসা নিলে কিছু সিট খালি হবে।’

অনেক হাসপাতাল সরকারি নির্দেশনা মানছে না জানিয়ে তিনি বলেন,‘সরকার একটা নির্দেশনা দিয়েছে যে, সব হাসপাতালে ৫০ থেকে ১০০ বেড কোভিড ইউনিট রাখতে হবে। তবে অনেক হাসপাতাল এখনো এটা মানছে না। প্রতিটা হাসপাতালের উচিত ৫০ থেকে ১০০টা বেড কোভিড রোগীদের জন্য ব্যবস্থা করা।’

কোভিড আক্রান্ত ও তাদের স্বজনকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘যতই উপসর্গ কম হোক, মানুষ আতঙ্কিত হয়ে যায়। তাদেরকে বোঝাতে হবে। ডাক্তার বোঝাবে রোগীকে বাসায় চিকিৎসা করতে পারবে নাকি হাসপাতালে রাখতে হবে। রোগীর যদি অক্সিজেনের মাত্রা সঠিক থাকে তাহলে তাকে বাসায় রেখেই চিকিৎসা দেয়া যাবে। আর খারাপ হলে অক্সিজেন দিতে হবে। হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়াতে হবে। সব হাসপাতালে অক্সিজেনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।’

করোনারা বর্তমান অবস্থার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন তো সংক্রমণ বাড়ছে। দিনকে দিন বাড়ছে। সাত হাজারের বেশি মানুষ প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছ। মৃত্যুসংখ্যাও ৬০ জনের বেশি। এটা আমাদের জন্য একটি আশঙ্কাজনক অবস্থা। সরকার যে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছিল, সেগুলো কিন্তু বাস্তবায়িত হচ্ছে না। লকডাউন ঘোষণা করা হলো, সরকার বাধ্য হলো গণপরিবহন চালু করতে। মানুষের মধ্যে এটা মানার প্রবণতা থাকছে না। এতে করে হবে কী... জীবন আগে নাকি জীবিকা আগে, এ নিয়ে একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থেকে যাচ্ছে। জীবন যদি না থাকে তাহলে জীবিকা কীভাবে হবে? আবার এটাও ঠিক জীবিকার জন্য জীবন প্রয়োজন।’

কোভিড সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এর কারণ জনগণের উদাসীনতা ও খামখেয়ালিপনা। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে বিপদ বাড়তে পারে বলে জানান ডা. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন,‘ভাইরাসের বিভাজন হবে। যেকোনো ভাইরাস টিকে থাকার জন্য তার রূপ পরিবর্তন করে। কখনো শক্তিশালী হয়, আবার কখনো সে দুর্বল হয়ে পড়ে। এখন দেখা যাচ্ছে ভাইরাসটি শক্তিশালী হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন,‘টিকাই কিন্তু একমাত্র ব্যবস্থা না। যারা টিকা নিয়েছিল তারাও কিন্তু আক্রান্ত হয়েছে। এই টিকাটা আমাদের কতদূর কী প্রতিরোধ দেবে সেটা আমরা এখনো জানি না। কিন্তু টিকা আপনার নিতে হবে। মাস্কটা পরতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এই স্বাস্থ্য বিধান যদি আমরা নেমে না চলি তাহলে সমূহ বিপদ রয়েছে। সাত হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, কাল আট হাজার হবে। আজ ৬০ জন মারা গেছেন, কাল মৃত্যুর হার বাড়বে। হয়ত একজন মারা যাচ্ছে এটা আমাদের দৃষ্টিতে কিছুই না, কিন্তু যে পরিবারের লোক মারা যাচ্ছে, তার জন্য এটা অনেক বড় ব্যাপার।’

অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। তাদের মাধ্যমে আরও অনেক মানুষ সংক্রমিত হতে পারে। বিষয়টি সামাজিক অপরাধ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর হাতে স্বাস্থ্যবিধির প্রতিপালন প্রয়োজন বলে মনে করেন মিজানুর রহমান।

এই চিকিৎসক বলেন, ‘সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় লোকজন এখনো মাস্ক ছাড়া চলাচল করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এখানে তৎপর হতে হবে। শুধু বললেই কাজ হবে না। মানুষের মধ্যে নিয়ম নেমে চলার প্রবণতা খুব কম দেখা যাচ্ছে। সে চিন্তা করে আমার তো হচ্ছে না, আমি তো ভালোই আছি। কিন্তু সে যে আরেকজনকে ছড়াচ্ছে, তার যদিও হচ্ছে না, এটাও বলা যায় না। তার মধ্যে উপসর্গ নেই, তাই সে বুঝতে পারছে না। পরীক্ষাও করাচ্ছে না। কিন্তু যাদের মধ্যে ছড়াচ্ছে তাদের উপসর্গ থাকতে পারে, মারাও যেতে পারে। অর্থাৎ যে মানুষটা মাস্ক ছাড়া চলাচল করছে, সে কিন্তু অপরাধ করছে। এটা সামাজিক অপরাধ। সে একজন অপরাধী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে কঠোর তৎপর হতে হবে। মানুষকে বাঁচাতে হলে আইনশৃঙ্খলার একটা তৎপরতা থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নইলে আমাদের সামনে আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।’

(ঢাকাটাইমস/০৭এপ্রিল/কারই/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :