সাধারণ বেডও সোনার হরিণ

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২১, ১১:৩০ | আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২১, ১১:৫২

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

করোনার প্রকোপ বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ছে প্রতিদিন। বিশেষ করে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করাতে মরিয়া স্বজনরা। এ হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে ছোটাছুটির পর সুযোগ হচ্ছে ভর্তির। গুরুতর অসুস্থদের জন্য আইসিইউর পাশাপাশি এখন সাধারণ বেড পেতেও ঘাম ছুটে যাচ্ছে স্বজনদের। 

অন্যদিকে এত রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। তবে রাজধানীর তুলনায় বিভাগ ও জেলা হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কিছুটা কম।

এই অবস্থায় করোনা উপসর্গ থাকলেও অসুস্থতার মাত্রা কম থাকলে হাসপাতালে না এসে বাসায় চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা নেয়ার কথা বলছেন খোদ চিকিৎসকরা। 

এদিকে প্রতিদিন সাত হাজারের বেশি মানুষের দেহে করোনা শনাক্ত হচ্ছে দেশে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এখনই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না অনেকে।
 
বুধবারের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সাধারণ ও আইসিইউ বেডের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালের ৮৯ শতাংশ সাধারণ বেডে ও ৯১ শতাংশ আইসিইউ বেডে রোগী ভর্তি রয়েছে। একইভাবে বেসরকারি হাসপাতালের ৮৮ শতাংশ সাধারণ বেডে এবং ৯৩ শতাংশ আইসিইউ বেডে রোগী ভর্তি রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, করোনার জন্য নির্ধারিত ঢাকার ১০ হাসপাতালে ২ হাজার ৭৩৬ বেডের মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ২ হাজার ৪৪১ জন। ফাঁকা আছে মাত্র ২৯৫টি। অবশ্য বুধবার পর্যিন্ত ২৭২ জন অতিরিক্ত রোগী আছে কুর্মিটোলা হাসপাতালে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আছে ৫ জন অতিরিক্ত রোগী। 

অন্যদিকে এসব হাসপাতালে ১৩২টি আইসিইউ বেডের মধ্যে খালি আছে মাত্র ১১টি। আর বেসরকারি হাসপাতালে ৩০৫টি আইসিইউ শয্যার রোগী ভর্তি রয়েছে ২৮৫টিতে। আইসিইউ শয্যা ফাঁকা রয়েছে মাত্র ২০টি।

তথ্যমতে, ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য জায়গায় করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৯১৮টি সাধারণ বেডের মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ৪ হাজার ৭৭৫টিতে। খালি আছে ৫ হাজার ১৪৩টি। আর ৬০২টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ৪৩৩টিতে রোগী আছে। ফাঁকা আছে ১৬৯টি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মার্চের প্রথম সপ্তাহে করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষায় প্রতিদিন মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী চিহ্নিত হলেও সম্প্রতি শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ১২ থেকে ১৪ গুণ বেড়েছে। গত চার দিন ধরে প্রতিদিন গড়ে সাত হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এ সময় প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে ৬০ জনের বেশি। প্রতিদিন করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ বেড ও আইসিইউতে ভর্তি প্রয়োজন এমন রোগীর চাপ বাড়ছে।

স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ করোনা স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মেনে না চললে সামনে কঠিন বিপদ। যেভাবে নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে তার কয়েক শতাংশ রোগীকে প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি করতে হলে হাসপাতালগুলো বেডের অভাবে রোগী ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হবে। বেড ফাঁকা না থাকলে টাকা খরচ করেও চিকিৎসা পাওয়া যাবে না। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় বেড সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে।

ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মিজানুর রহমান কল্লোলের পরামর্শ কোভিডে মৃদু থেকে মাঝারি পর্যায়ে আক্রান্ত উপসর্গ রোগীদের চিকিৎসা বাসাতেই করতে হবে।

ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘সামান্য উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়ায় সিটগুলোর অপচয় হচ্ছে। পরে মারাত্মক রোগীরা জায়গা পাচ্ছেন না। মৃদু উপসর্গের রোগীরা বাসায় চিকিৎসা নিলে কিছু সিট খালি হবে।’ 

দেখা গেছে, রাজধানীর ১০টি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মধ্যে উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা হাসপাতাল, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বার্ন ইউনিটে কোনো আইসিইউ খালি নেই।  

শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে চারটি, ছয়টির সবগুলোতে, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে একটি, শহীদ সোহরাওয়ার্দীতে চারটিতে, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের একটি এবং বিএসএমএমইউতে একটি আইসিইউ বেড খালি আছে।

আর ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতাল, আসগর আলী হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল, ইমপালস হাসপাতাল, এ এম জেড হাসপাতাল এবং বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের সবগুলো বেডে রোগী ভর্তি রয়েছে।

এছাড়া স্কয়ার হাসপাতালের ১৯টির ১৬টিতে, ইউনাইটেড হাসপাতালের ১৫টির ১১টিতে এবং এভারকেয়ার হাসপাতালের ২১টির ১৯টিতে আইসিইউতে রোগী ভর্তি রয়েছে।

আইসিইউর যখন এমন অবস্থা তখন সাধারণ বেডের জন্য অনেকটা যুদ্ধ করতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের ১৬৯টি বেডের মধ্যে খালি আছে মাত্র ১১টি। ৫০০ শয্যার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ২৭৫ বেডের জায়গায় রোগী আছে ৪১১ জন। 

এ ছাড়া ১৩৬ জন করোনা রোগীকে বিকল্প ব্যবস্থা করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। 
২৫০ শয্যার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ঢাকা ১৪০ বেডের মধ্যে খালি আছে মাত্র ৫টি। ফুলবাড়িয়ার সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে ৯৪ বেডের মধ্যে ২৫টি খালি আছে। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট-২) ও বার্ন ইউনিটের ৮৮৩টি বেডের মধ্যে খালি আছে ১৮৯টি। ৫০০ শয্যার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১০টি বেডের মধ্যে খালি আছে ৬ টি। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ১৯০টি বেডের মধ্যে খালি আছে মাত্র ১৫টি।

অন্যদিকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি আছে বলে জানা গেছে। করোনা ইউনিটের ৪৮৫ বেডের মধ্যে ১৭৬টি খালি আছে। মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ১০ বেডে মধ্যে ৯টি খালি আছে। এখানে আইসিইউ বেড নেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ইউনিটে ১৮০ বেডের মধ্যে খালি আছে রোগী ভর্তি আছেন ১৮৫ জন। ৫ জনকে বিকল্প ব্যবস্থা করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে,  আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের ৯৬টি বেডের মধ্যে সবগুলোতেই রোগী ভর্তি। আসগর আলী হাসপাতালের ৬৪টি বেডের মধ্যেও রোগীতে ভরা। স্কয়ার হাসপাতালের ৬৫টির মধ্যে ৬টি খালি আছে। ইবনে সিনা হাসপাতালের ৬৭টির মধ্যে ফাঁকা আছে ১টি মাত্র সিট। ইউনাইটেড হাসপাতালের ৮০টির মধ্যে খালি আছে ১৩টি। 

এভার কেয়ার হাসপাতালের ২৮টির মধ্যে ২টি বেড খালি আছে। ইম্পালস হাসপাতালের ২৫০ বেডের মধ্যে খালি আছে ১০৬টি। এ এম জেড হাসপাতালের ৯০টি বেডের মধ্যে খালি আছে ৫টি। বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ৭৪টি বেডের মধ্যে একটিও খালি নেই।

(ঢাকাটাইমস/৮এপ্রিল/বিইউ/কেআর)