করোনা ভাইরাস এক ঘন্টা পর্যন্ত বাতাসে ভেসে বেড়ায়

ডা. নুসরাত সুলতানা
 | প্রকাশিত : ০৮ এপ্রিল ২০২১, ১৪:২৭

ভাইরাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এদের বংশবৃদ্ধির জন্য জীবিত কোষের প্রয়োজন। কোষের ভেতরের যন্ত্র ব্যবহার করে এরা বংশবৃদ্ধি করে। ভাইরাস নড়াচড়াও করতে পারে না। তাই একটু সতর্ক ও সচেতন হলেই ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর কোষের বাইরে ভাইরাস সর্বোচ্চ ৭২ ঘন্টা বাঁচতে পারে।

করোনা ভাইরাসের এ দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে যেসব দেশ ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রন করতে পেরেছে, তাদের মাঝে জাপান ও ভিয়েতনাম অন্যতম। তারা তিনটি বিষয় এড়িয়ে চলেছে, ১। ভীড়যুক্ত স্থান, ২। আবদ্ধ স্থান ৩। Close contact। করোনা ভাইরাস সেখানে উপযুক্ত হোষ্ট না পেয়ে একসময়ে দূর্বল হয়ে পড়েছে।

যেহেতু ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। তাই শারীরিক দুরত্ব অবশ্যই মেনে চলতে হবে। ৬ ফুট দূরত্ব মেনে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত থাকলেও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। নিশ্বাসের মাধ্যমে ছড়ায় বলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। এছাড়াও হাতে ভাইরাস লেগে গেলে তা নাক-মুখ-চোখ দিয়ে ঢুকে গিয়ে সংক্রমন ঘটাতে পারে বলে অবশ্যই ২০-৪০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।

মাস্ক কেন জরুরি? করোনা ভাইরাসের Infective dose- ১০০০। অর্থাৎ একজন মানুষের কোভিড-১৯ ইনফেকশন হওয়ার জন্য কমপক্ষে ১০০০ টি ভাইরাস প্রয়োজন। একজন কোভিড ১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির নিশ্বাস থেকে প্রতি মিনিটে ২০ টি ভাইরাস বের হয়। তার মানে, ৫০ মিনিট আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে থাকলে একজন আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু মাস্ক পড়লে সে আশংকা ৭০ শতাংশ কমে যায়। আমাদের চারিদিকে বহু উপসর্গহীন রোগী আছে বলেই মাস্ক ব্যবহারে যথেষ্ট জোর দেয়া উচিৎ। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তি কথা বললে প্রতি মিনিটে ২০০ টি ভাইরাস বের হয়, মানে ৫ মিনিট কথা বললেই আপনি আক্রান্ত হতে পারেন। আর আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি/ কাশি থেকে মিনিটে ২০০ মিলিয়ন ভাইরাস বের হয় এবং তা ১ ঘন্টা পর্যন্ত বাতাসে ভেসে বেড়ায়। অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি বা কাশি দিলে আপনি মুহুর্তে আক্রান্ত হতে পারেন। আর উক্ত ঘরে যদি কেউ প্রবেশ করেন তিনিও সংক্রামিত হবেন। এজন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে যে কোনো স্থানে গেলেই মাস্ক বাধ্যতামূলকভাবে পরা উচিৎ।

শুধু মাস্ক পরলেই চলবে না, তা সঠিকভাবে পরতে হবে। খেয়াল রাখবেন যাতে মাস্কটি পূর্ণভাবে নাক ও মুখ ঢেকে রাখে এবং কোনো ফাঁক না থাকে। মাস্ক পরার পর নিশ্বাস নিলে যদি চশমা বা ফেইসশিল্ড ঘোলা হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে মাস্ক পরা সঠিক হয়নি। কোনভাবেই মাস্কের মূল অংশে হাত দেয়া যাবে না, কথা বলার সময় মাস্ক খোলা যাবে না।

সবশেষে একটি অনুরোধ, দয়া করে প্রয়োজন ছাড়া পার্টি, সেমিনার, বিয়েবাড়ি, ঘরোয়া দাওয়াত, আড্ডা এড়িয়ে চলুন। লিফট ব্যবহার করবেন না, এটা বলব না। তবে লিফটে অবশ্যই মাস্ক পরে থাকবেন এবং কথা বলবেন না। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ভাইরোলজী বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

ঢাকাটাইমস/৮এপ্রিল/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :