টিসিবির দীর্ঘ লাইনে অসাধু ব্যবসায়ী!

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২১, ১৫:৫৭ | আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২১, ১৬:৪৪

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকাটাইমস

রমজানের আগেই চাল, ডাল তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে কয়েক দফা। এরই মধ্যে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধে দিশেহারা মানুষের ভরসা এখন টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্য। 

এদিকে নানা কৌশলে অপেক্ষাকৃত সস্তায় টিসিবির পণ্য কিনে ব্যবসার ধান্দায় নেমেছে কিছু অসাধু দোকানি। তারা স্ত্রী, সন্তান এমনকি ফুটপাতের মানুষদের ভাড়া করে দাঁড় করাচ্ছে টিসিবির পণ্য কেনার লাইনে। 

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সায়েদাবাদ, গোলাপবাগ, গোপীবাগ কমলাপুর মুগদাসহ প্রতিটি এলাকায় ন্যায্যমূল্যের তেল, পেঁয়াজ, ডাল, চিনি কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে যান ক্রেতারা।

মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে সামনে দাড়ানো দুটি ট্রাকের টিসিবির পণ্য নিতে কয়েকশ মানুষ দাড়িয়েছিলেন। এসময় লাইনে দাঁড়ানো মোমেনা বেগম নামে এক নারীর সঙ্গে কখা হয়। 

এই নারী ঢাকাটাইমসকে বলেন, এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে লাইনে দাঁড়াইছি। আরও বড় লাইন ছিল। আমার সামনে আরও একশ মানুষ মনে হয় কিনছে।

ন্যায্য মূল্যের লাইনে দাঁড়ানোর কারণ বলতে গিয়ে মোমেনা বলেন, দোকানে ভালো তেলের দাম ১৪০ টাকা কেজি। এখানে দুই কেজির দামে তিন কেজি তেল নিতে পারছি।

লাইনে দাঁড়ানোর কষ্টের কথাও জানান তিনি। বলেন, সেই সকাল থেকে দাড়াইছি। এখনও পাচ্ছি না। অনেক মানুষ। বাসায় ছোট ছোট বাচ্চা রেখে আসছি। কী করবো, উপায় নাই।

মোমেনার মতোই তার পেছনে দাঁড়ানো আরেক নারী বলেন, আমি একটা কারখানায় কাম করতাম, লকডাউনের কারণে কাজ কাম না থাকায় কারখানা বন্ধ করে দিছে। ঝামেলায় পইড়া গেছি।

ন্যায্যমূল্যের পণ্য নিতে লাইনের শেষে দাঁড়িয়ে আছেন পলাশ। ন্যায্য মূল্যের পণ্য নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পলাশ বলেন, অটো চালিয়ে আসতে দেরি হয়ে গেছে। সেই সকালে অটো নিয়ে বেরি হইছি। করোনার কারণে খ্যাপ একবারেই নাই। ঢাাকায় মানুষইতো নাই।

এই অটোচালক বলেন, লকডাউনে ঢাকার মানুষ সব গ্রামে চলে গেছে। রাস্তায় সকাল বা বিকেলে খ্যাপ পাওয়া গেলেও সারাদিন পাই না। কাল থেকে কিছু টাকা জমিয়ে লাইনে মাল নিতে আসছি।

নিজের ভোগান্তির কথা বলতে গিয়ে এই চালক বলেন, এইভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন পরতো ন্যায্যমূল্যের জিনিসও কিনবার পয়সা থাকবো না। যারা বাড়িতে গেছে হেরা মনে হয় না ঈদের আগে আসবে।

অনেকের একাধিক পণ্য নেয়ার তথ্যও পাওয়া যায় ট্রাক ম্যানেজারের কাছ থেকে। তারা জানান অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ন্যায্যমূল্যের পণ্য নিতে লাইনে দাড়ান।

তেল-পেঁয়াজ- চিনিসহ টিসিবির পণ্য নিতে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন এমনই এক নারী। পণ্য নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে ওই নারী বলেন, এই মাল আমার না, আমারে জায়ের। আমার কাছে দিয়ে রাখছে। আমি মাল নেবো।

টিসিবির ট্রাকে কাজ করে শরীফ নামের এক কর্মচারী। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, গত তিন দিন থেকে হাজার হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়াইতেছে। পণ্য দিতে দিতে অবস্থা খারাপ। 

শরীফের দাবি কিছু অসাধু দোকানদারও স্ত্রী সন্তানদেরকে এসব লাইনে দাঁড় করান। তারা দিনের দুই বা ততোধিক বার ট্রাক থেকে মাল কেনেন।

ট্রাকের একজন ব্যবস্থাপক নিজের নাম না বলার শর্তে বলেন, অনেক ব্যবসায়ী রাস্তার ভিক্ষুক বা পথশিশু ভাড়া করেও পণ্য কেনান। একবার পণ্য কিনতে দেন বিশ থেকে ত্রিশ টাকা। আমরা তাদেরকে প্রতিরোধ করতে পারি না। এরা সঙ্গবদ্ধ। 

(ঢাকাটাইমস/৮এপ্রিল/এসআর/কেআর)