মির্জাপুরে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২১, ১৬:৪৯

জাহাঙ্গীর হোসেন, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল)

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গত দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে খড়ের পালা তলিয়ে পচে নষ্ট হওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। পাহাড়ি ও উঁচু এলাকায় গো-খাদ্য পাওয়া গেলেও চাহিদার তুলনায় কম থাকায় দামও অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। গো-খাদ্যের সংকট থাকায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এ উপজেলার কৃষক ও খামার মালিকরা।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ ও কৃষি অফিস সূত্র জানায়, মির্জাপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে ৩৭৩টি খামার আছে। এসব খামার ও বিভিন্ন বাড়িতে এক লাখ এক হাজার ৩৯৯টি গৃহপালিত পশু লালন পালন করা হচ্ছে। প্রতি বছর মির্জাপুরে প্রায় চার হাজার গরু কোরবানি হয়ে থাকে। এসব গরু মির্জাপুরের চাহিদা পূরণ করে অন্যত্র বিক্রি করা হয়।

এছাড়া প্রতিদিন প্রায় এক লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। এই দুধ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হয়। এসব পশু পালনে ও ভালো মানের দুধ উৎপাদনে প্রচুর গো-খাদ্যের প্রয়োজন। দেশি ছোট গরু প্রতিটির জন্য প্রতিদিন চার-পাঁচ কেজি, মাঝারি গরুর জন্য সাত-আট কেজি ও বড় আকৃতির গরুর জন্য প্রতিদিন ১০/১২ কেজি গো-খাদ্যের (খড়) প্রয়োজন।

এ বছর এ উপজেলায় ২০ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। অতি বর্ষণ ও আগাম বন্যায় প্রায় ৩৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে শ্রমিক সংকটের কারণে ধানকাটার হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান গাছের উপরের অংশ কাটায় খড় সংগ্রহ কমে যায়। অতিবর্ষণ ও বন্যায় এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ঘাষও মরে গেছে।

এছাড়া গ্রামের নিচু এলাকার মানুষ খড় সংগ্রহ করে পালা দিয়ে রাখলেও এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় তা তলিয়ে পচে গেছে। পাহাড়ি ও উঁচু এলাকায় গো-খাদ্য পাওয়া গেলেও চাহিদার তুলনায় কম থাকায় দামও অনেক বেশি। গো-খাদ্যের সংকটে বিপাকে পড়েছেন এ উপজেলার খামার মালিক ও গৃহপালিত পশু পালনকারীরা। গো-খাদ্য সংকট থাকায় বিভিন্ন এলাকা অটো ভ্যানযোগে খড় সংগ্রহ করে খাওয়াচ্ছেন পশু পালনকারীরা। ধানের খড়, কুড়ার দামও অনেক চড়া।

মির্জাপুর পৌর এলাকার বাওয়ার কুমারজানী গ্রামের বাসিন্দা সিয়াম আলী ও পরান মিয়া জানান, তারা কৃষি কাজের পাশাপাশি তিনটি করে গরু লালন পালন করেন। তাদের জমিতে উৎপাদন হওয়া ধানের খড় সংগ্রহ করে বাড়িতে পালা দিয়ে রেখেছিলেন। এবারের বন্যায় তা ডুবে পচে গেছে। এখন কচুরিপানা ও ঘাষই গরু লালন-পালনে ভরসা। কিন্তু এসব সংগ্রহ করা খুবই কষ্টকর।

একই গ্রামের কৃষক হাতেম আলী ও সাইফুল ইসলাম জানান, খড়ের দাম অনেক বেশি হওয়ায় তা কিনে খাওয়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এক বোঝা খড় ১৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা দামে কিনতে হয়। এটি দুই গরুর এক সপ্তাহের খাবার। এখন প্রতিদিনই ধান ক্ষেত থেকে ঘাস কেটে গরুকে খাওয়াতে হয়। পাহাড়ি অঞ্চলের বাজারে খড় পাওয়া গেলেও দাম অনেক বেশি।

তারা বলেন, গরুর জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করতে হয়। এজন্য তিনি ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ চালিত একটি অটো ভ্যান কিনে নিয়েছেন। বানিয়ারা গ্রামের কবির হোসেন জানান, ধল্যা বাজার থেকে ৬০০ টাকা দিয়ে একটি খড়ের আটি কিনেছেন। এতে ৪০/৫০ কেজি ওজন হতে পারে।

মির্জাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের কুইচতারা গ্রামের বাসিন্দা তাহেরুল ইসলাম জানান, তিনি তার বাড়িতে গরুর খামার করেছেন। তার খামারে ছোট বড় ২৫টি গরু আছে। খড়ের সংকট থাকায় দানাদার খাদ্য খাওয়াচ্ছেন। এতে তার খরচ অনেক বেশি বলে তিনি জানান। তবে সরকারি পৃষ্টপোষকতা না থাকলে খামার মালিকরা এ ব্যবসা থেকে সরে যাবেন বলে মনে করেন তাহেরুল।

মির্জাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটায় কৃষকের টাকা কম খরচ হয়। কিন্তু খড়ের উৎপাদন কম হয়। খড়ের সংকট থাকায় গৃহপালিত পশুদের কচুরিপনা ও পানি ঘাস খাওয়াচ্ছেন কৃষকরা।

মির্জাপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন আহমেদ সুজন জানান, মির্জাপুরে ৩৭৩টি খামারসহ বিভিন্ন বাড়িতে একলাখ এক হাজার ৩৯৯টি পশুর লালন পালন করা হচ্ছে। গড়ে আট কেজি হিসাবে প্রতিদিন প্রায় আট লাখ কেজি খড়ের প্রয়োজন। খড়ের সংকট থাকায় কচুরিপানা ও পানি ঘাষ খাওয়ানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, কচুরিপানার পুষ্টিগুন অনেক কম। দীর্ঘদিন কচুরিপানা খাওয়ালে গরুর পুষ্টিহীনতার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারি কোনো বরাদ্দও নেই বলে জানান এই কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/৮এপ্রিল/কেএম)