লকডাউনে খাগড়াছড়ির আনারস চাষিদের মাথায় হাত

ইসমাইল হোসেন, মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি)
| আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২১, ১৮:৫৫ | প্রকাশিত : ০৮ এপ্রিল ২০২১, ১৮:৫২

আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এসব উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ওজন কমাতেও সাহায্য করে। কারণ আনারসে প্রচুর ফাইবার এবং অনেক কম ফ্যাট রয়েছে। অনুকূল পরিবেশ থাকায় এ বছর আগাম আনারস বাজারে এসেছে। দামও ভালো ছিল। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় আনারস বড় হতে না পারলেও ফলন ভালো হয়েছে।

মানিকছড়ি ও গুইমারা উপজেলার হাট-বাজারগুলো এখন আনারসের মিষ্টি গন্ধে মাতোয়ারা। কিন্তু হঠাৎ কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ ফেলে দিয়েছে লকডাউন পরিস্থিতি। করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় প্রকোপ মোকাবেলায় সরকারিভাবে লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই আনারসের বাজারে ধস নেমেছে। পর্যাপ্ত বিক্রি না থাকায় ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে আনারস। দামও কম।

কার্যত জলের দরে বিক্রি করতে হচ্ছে আনারস। ফলে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। যে আনারস বিক্রি হতো ২০ থেকে ৩০ টাকা প্রতি পিস, তা এখন বিক্রি হচ্ছে আট থেকে ১৫ টাকায়। লাভের কথা দূরে থাক, যে টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন তাও উঠে আসবে কিনা সন্দেহ। মহাসঙ্কটে আনারস ব্যবসায়ীরা। কিভাবে তা সামলাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মানিকছড়ি উপজেলার গভামারা, ওসমানপল্লী, হাতিমুড়া, গচ্ছাবিল, জামতলা ও গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি, জালিয়াপাড়া, বড়পিলাক, সিন্দুকছড়িসহ উপজেলার বেশ কিছু এলাকার পাহাড়ি ও সমতল ভূমিতে বেশি আনারস চাষ হয়। এসব এলাকা থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পিকআপ ও জিপ বোঝাই করে হাতিমুড়া ও গুইমার বাজারে আনারস নিয়ে আসছেন চাষীরা।

সেখান থেকেও খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বিক্রি করা শুরু করেছিলেন মাত্র। কিন্তু হঠাৎ লকডাউনের কবলে পড়ে আনারসের দাম কমে যাওয়ায় ইতোমধ্যে লাখ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দাম ভালো থাকলে যেখানে লাভের আশা করেছিলেন সেখানে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশি লাভের আশায় বাগান থেকে প্রতি পিস আনারস ১০-১৫ টাকা দরে কিনেছেন তারা। বায়নাও করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বাগান মালিকের সঙ্গে শর্ত আছে যত দরে ফল কিনেছেন লাভ হোক আর ক্ষতি হোক যতদিন বাগানের ফল শেষ না হবে ততদিন ব্যবসায়ীকে আনারসগুলো দিতে হবে এবং নির্ধারিত দর অনুযায়ী দাম দিতে হবে।

প্রতি পিস আনারস ঢাকায় পৌঁছাতে আরো চার টাকা খরচ হয়। সেই হিসাবে একটি আনারসের পেছনে তাদের খরচ পড়ে ১৪-১৯ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে ঢাকায় প্রতি পিস আনারস বিক্রি হচ্ছে ৮-১৪ টাকায়। সেই হিসাবে প্রতি পিস আনারসে তাদের ক্ষতি হচ্ছে ৫-৬ টাকা করে।

ব্যবসায়ী ও চাষী উভয়ই শঙ্কার কথা প্রকাশ করে বলেন, ইতোমধ্যে বাজারে আনারসের দাম কমতে শুরু করেছে। চাষাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চাষী ও ব্যবসায়ী উভয় পক্ষই কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছে।

গুইমারা উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি অফিসার আব্দুর রহিম মজুমদার জানান, উপজেলা ঘোষণা হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সব কাগজপত্র আমাদের উপজেলায় স্থানান্তর করা হয়নি। হাফছড়ি ইউনিয়নের হিসাব থাকছে রামগড় উপজেলায়, সিন্দুকছড়ির হিসাব মহলছড়ি উপজেলাতে ও গুইমারার হিসাব মাটিরাঙ্গা থাকার কারণে গুইমার উপজেলায় কত হেক্টর জমিতে আনারসের চাষাবাদ হচ্ছে তার সঠিক হিসাব রাখা সম্ভব হয়নি।

এ দিকে মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার জানান, মানিকছড়িতে প্রায় ৬০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষাবাদ হয়ে থাকে। তবে কৃষকরা বাগানে ফল বিক্রি করাতে তাদের ক্ষতির পরিমান কম হলেও বাগান থেকে যেসব ব্যবসায়ীরা আনারস কিনেছেন তাদের ক্ষতির পরিমান অনেক বেশি।

(ঢাকাটাইমস/৮এপ্রিল/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :