যাদুকাটা নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গঙ্গাস্নান

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ
| আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২১, ১৫:৪৯ | প্রকাশিত : ০৯ এপ্রিল ২০২১, ১৫:৪২

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তের যাদুকাটা নদীতে জেলা প্রশাসনের জারিকৃত সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হাজার হাজার হিন্দু ধর্মের অনুসারী গঙ্গাস্নান করছেন। একইভাবে শাহ আরেফিনের ওরসেও তার ভক্তরা এসেছেন।

শুক্রবার ভোর থেকেই হাজার হাজার ভক্ত কোনো রকম কার্যবিধির তোয়াক্কা না করে গঙ্গাস্নান করেন যাদুকাটা নদীতে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতেই হিন্দু ধর্মের সাধক ও বারুণি স্নানের প্রবর্তক অদ্বৈত আচার্য্যের জন্মস্থান যাদুকাটা নদী তীরে নবগ্রামে গিয়ে পৌঁছান হাজার হাজার দর্শনার্থী। এ সময় প্রশাসন তাদের নিষেধের চেষ্টা করেও হিমশিম খায়।

কয়েকশ’ বছর ধরে জেলার তাহিরপুর উপজেলা প্রতি বছর বাদাঘাট ইউনিয়নের সীমান্তের যাদুকাটা নদীতে গঙ্গারূপী তীর্থ মনে করে মনোবাসনা পূরণের জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের অদ্বৈত আচার্যের আবির্ভাব উপলক্ষে অদ্বৈত জন্মধাম, লাউড় (নবগ্রাম) রাজারগাও গ্রাম সংলগ্ন জাদুকাটায় গঙ্গাস্নানে কল্যাণের আশায় লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়।

একই রকম মুসলিম সম্প্রদায়ের সমাগম হয় লাউড়েরগড়ের শাহিদাবাদে এলাকায় হযরত শাহ আরেফিন (রহ.) তিন দিনব্যাপী বার্ষিক ওরস উৎসবে। দুই ধর্মের দুই আধ্যাত্মিক সাধকের লাখো ভক্তের আগমনে এখানে সম্প্রীতির মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়।

প্রতি বছর জাদুকাটা নদীর দুইপাড়ে গঙ্গা স্নানোৎসব ও মেলা উদযাপন হয় একই সময়ে। এই দুটি উৎসব শত বছর ধরে হিন্দু-মুসলিমের মিলনোৎসব হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে। এবার মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে জেলা প্রশাসন গত ১ এপ্রিল পুণ্যস্নান ও ওরস উৎসব স্থগিত করে। গত বছরও একই কারণে নিষেধাজ্ঞা ছিল।

করানোভাইরাসের প্রাদুর্ভাবজনিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ বছরও নির্দেশনা জানিয়ে দেয়া হয় সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেই হাজার হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুণ্যস্নানে আসেন। দলে দলে তারা শুক্রবার সকালে পুণ্যস্নান সম্পন্ন করেন। একইভাবে শাহ আরেফিনের ওরসেও তার ভক্তরা আসছেন।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে করানোভাইরাসের প্রাদুর্ভাবজনিত পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় শাহ আরেফিন (রহ.) এর ওরস, পণাতীর্থ মেলা ও স্নানোৎসব বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি পর্যটন স্পটগুলোতে জনসমাগম এড়াতে ১৪ দিনের নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়েছে। সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় এবারের ওরস ও গঙ্গা স্নানোৎসবের সব ধরনের আয়োজন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়।

শাহ আরেফিন ওরস উদযাপন ও পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আলম সাব্বির জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী ওরস উদযাপন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দূর-দূরান্তের অনেকে আসার আগ্রহ দেখালেও আমাদের পক্ষ থেকে তাদেরকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এরপরও মানুষজন আসছে।

অদ্বৈত জন্মধাম, লাউড় (নবগ্রাম) কমিটির সভাপতি ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণ সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, পণাতীর্থ মেলার তারিখের সঙ্গে মিল রেখে লক্ষাধিক ভক্তের উপস্থিতিতে পুণ্যার্থী শাহ আরেফিন ওরস ও গঙ্গা স্নানোৎসবের সব কার্যক্রম বন্ধ। এরপরও পুণ্যার্থী ও শাহ আরেফিনের ভক্তরা আসছেন। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ তরফদার জানান, এবার করোনার কারণে যাদুকাটায় বারুণি স্নানে আসতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে তারা পুণ্যস্নান সম্পন্ন করছেন। তবে আমরা কঠোর হওয়ায় এখন তাদের উপস্থিতি কমেছে।

তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদ্মাসন সিংহ জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় শাহ আরেফিন (রহ.)-এর ওরস ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গঙ্গা স্নানোৎসবসহ সব ধরনের জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

তিনি বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ৭০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী গঙ্গাস্নান ও পণাতীর্থ বারুণী মেলা গত বছরের মতো এবারও বন্ধ আছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই ধর্মের মানুষজনকে ফিরিয়ে দিলেও অনেকে লুকিয়ে যাচ্ছেন সেখানে।

(ঢাকাটাইমস/৯এপ্রিল/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :