ধর্মান্তরিত করে ছাত্রীকে বিয়ে, প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১০ এপ্রিল ২০২১, ২০:৩৮

হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নাবালিকা ছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করার অভিযোগে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নুরনগর আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সাথে তাকে কেন স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে না তা জানতে চেয়ে সাত দিনের মধ্যে কারণদর্শাতে বলা হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিকে প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও ভিকটিমকে উদ্ধারের দাবি জানিয়ে শনিবার বিকাল ৪টায় নূরনগর বাজারে এক মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে সুরক্ষা নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা (সুনাম) কমিটির শ্যামনগর শাখা।

শ্যামনগর উপজেলার নূরনগর গ্রামের এক মুদি ব্যবসায়ী জানান, ২০১৯ সালে তার মেয়ে নূরনগর আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাস করে। ওই বিদালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদ (৪৮) তাকে বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞানের ব্যবহারিক খাতার কাজে সহযোগিতা করতেন। আসতেন তাদের বাড়িতে। ২০১৯ সালেই কার্টুনিয়া রাজবাড়ি ডিগ্রি কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়। জন্মসনদ অনুযায়ী মেয়ের জন্ম ২০০৪ সালের পহেলা ডিসেম্বর। মেয়ে দক্ষিণ হাজীপুর গ্রামের দীঘির পাড়ে শামীম আহমেদের বাড়ির পাশে আফসার মাস্টারের কাছে প্রাইভেট পড়তে যেত। পড়তে যাওয়া ও আসার পথে মেয়ের সাথে শামীম আহমেদ মেয়েকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতেন। একপর্যায়ে গত ২ এপ্রিল (শনিবার) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে প্রাইভেট পড়ে কলেজে যাওয়ার নাম করে মেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। দুপুর ২টার দিকে বাড়ি না ফেরায় মেয়ের খোঁজে নেমে পড়েন তিনি ও তার স্বজনরা। একপর্যায়ে মেয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সম্ভাব্য সকল জায়গায় তাকে খুঁজে না পেয়ে পরদিন তিনি শ্যামনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ৭ এপ্রিল ফেসবুকে তার মেয়ে ও প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদ খুলনার এক নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে বসে ধর্মান্তরিত হওয়া ও বিয়ে সংক্রান্ত এক নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করছেন এমন ছবি দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা তাকে জানান। একপর্যায়ে ওই রাতেই তিনি শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে থানায় মেয়েকে অপহরণ ও ধর্মান্তরিত করার অভিযোগে একটি এজাহার দাখিল করেন।

আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক পলাশ দেবনাথ, আশরাফ হোসেন ও লিটন সরদার জানান, এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন প্রধান শিক্ষকের ভাই নুরনগর ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য বখতিয়ার আহমেদ। বড় ভাই সভাপতি হওয়ায় শামীম আহম্মেদ কয়েক বছর ধরে ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে জনসাধারণের হাতে লাঞ্ছিত হন। একইভাবে এক নারীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়লে নূরনগর নবীন সংঘের মধ্যে তাকে আটকে রেখে গণধোলাই দেওয়া হয়। পরে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান তিনি। হজ করার পরও ওই প্রধান শিক্ষকের চরিত্র পরিবর্তন না হওয়ায় তিনটি বিয়ে করার পরও সম্প্রতি তার বিদালয়ের এক সময়কার ছাত্রী হিন্দু নাবালিকাকে ফুসলিয়ে নিয়ে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করেছেন। এ ধরনের শিক্ষকের প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনারত ছাত্রীরা প্রধান শিক্ষকের কাছে নিরাপদ না হওয়ায় অনেকেই তাদের মেয়েকে টিসি নিয়ে অন্যত্র ভর্তি করার কথা বলেছেন।

এ ব্যাপারে আশালতা মাধমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বখতিয়ার আহম্মেদ বলেন, শামীমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে কারণদর্শানোর নোটিশের জবাব দেওয়ার পর প্রয়োজনে ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হুদা জানান, এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা শুক্রবার রাতে মামলা করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক দীপ্তেশ রায়কে আসামি গ্রেপ্তার ও ভিকটিম উদ্ধারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১০এপ্রিল/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :