খালেদা জিয়া কি করোনায় আক্রান্ত?

প্রকাশ | ১১ এপ্রিল ২০২১, ১৩:২৬ | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২১, ১৬:০৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দেশে করোনার ঊর্ধ্বগতির মধ্যে হঠাৎ আলোচনায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাসায় অবস্থান করা খালেদা জিয়ার করোনার রিপোর্ট। আইসিডিডিআরবির ল্যাবরেটরিতে তার নমুনা পরীক্ষার পর রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে এমনটা বলা হলেও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা বলছেন, এর কোনো সত্যতা নেই। তার কোনো পরীক্ষা করা হয়নি এমন দাবি চিকিৎসকদের।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও তার ভাগ্নে ডা. মামুন জানান, এমন ঘটনার কোনো সত্যতা নেই। আমিই তার রেগুলার চেকআপ করি। রেগুলার চেকআপের অংশ হিসেবে ব্লাড টেস্ট করতে হয়। এটার জন্য তার ব্লাড নিতেই টেকনেশিয়ান নিয়ে ফিরোজায় গিয়েছিলাম। এটা কোনো করোনা পরীক্ষার অংশ না। খালেদা জিয়ার করোনা পরীক্ষার খবর নিতান্তই বিভ্রান্তিমূলক।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাক্তার মামুনের উদ্ধৃতি দিয়ে চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান নিশ্চিত করেছেন বেগম খালেদা জিয়ার করোনা টেস্ট করানো হয়নি। যেটা করানো হয়েছে সেটি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা।

অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাঈদুল ইসলাম প্রধানের দাবি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। সেখান থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়া করোনা পজেটিভ।

যদিও এখন পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করা হয়নি। 

এদিকে একটি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকালে ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়ার করোনার নমুনা নেয়া হয়। পরে রাত ৭টায় রিপোর্ট পজেটিভ আসে। পরে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আইসিডিডিআরবি থেকে রাত সাড়ে ৭টায় নমুনা নেয়া হয়। আজ তাতেও পজেটিভ রেজাল্ট আসে।

যদিও নমুনা বেশি সংগ্রহ করায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশ বিলম্বে এখন করোনার রিপোর্ট দেয়া হয় সেখানে এত তাড়াতাড়ি কিভাবে তার রিপোর্ট আসল তার কোনো সদুত্তর মেলেনি। 

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খালেদা জিয়ার নাম, বয়স ও গুলশানের ঠিকানা দিয়ে করোনার যে রিপোর্টের কপি ঘুরে বেড়াচ্ছে তাতে সবুজ নামের একজনের ফোন নম্বর দেয়া রয়েছে। যিনি পেশায় একজন টেকনোলজিস্ট। একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি চাকরি করেন। 

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মামুনের সঙ্গে তিনি প্রয়োজন হলে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় যেয়ে থাকেন। 

ওই নম্বরে ফোন করলে সবুজ ঢাকা টাইমসকে বলেন, সকাল থেকে আমাকে আরও অনেকে ফোন করে বেগম খালেদা জিয়ার করোনার রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি এই রিপোর্টের বিষয়ে জানি না। আমার মোবাইল নম্বর এখানে কেন দেয়া হয়েছে তাও জানি না।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফারেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতের রায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে খালেদা জিয়ার কারাবাস শুরু হয়। এক বছরেরও বেশি সময় নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি জীবন অতিবাহিত হয় তাঁর। এরপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে আসা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিন ব্লকের প্রিজন সেলে।

কারাবাসের প্রথম বছরে বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য তিনবার বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নেয়া হয়। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল, একই বছরের ৬ অক্টোবর এবং ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল তাঁকে হাসপাতালে নেয়া হয়। আগের দু’বার হাসপাতাল থেকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হলেও শেষবার অর্থাৎ ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে পরবর্তী প্রায় ১১ মাস বিএসএমএমইউ হাসপাতালে কারা নজরদারিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন খালেদা জিয়া।

এরপর ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর উপধারা ১ ধারা অনুযায়ী বয়স বিবেচনায় মানবিক কারণে সরকারের নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে ৬ মাসের জন্য বেগম জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়া হয়। শর্ত অনুযায়ী, মুক্ত থাকাকালীন খালেদা জিয়াকে নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। তিনি কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পাবেন না। পরিবারের লোক ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।

২ বছর ১ মাস ১৯ দিন বন্দিদশায় থাকার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বিকেলে ৬ মাসের অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় যান খালেদা জিয়া। গেল বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর মুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই শর্ত অপরিবর্তিত রেখে সরকার খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ আরও ৬ মাস বৃদ্ধি করে সরকার। ২৪ মার্চ বর্ধিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আরও ৬ মাস মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।

শর্তসাপেক্ষে পাওয়া মুক্তি নিয়ে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় থেকে চিকিৎসাধীন নিচ্ছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

(ঢাকাটাইমস/১১এপ্রিল/বিইউ/কেআর)