ছোটবেলায় মাইর খেতাম অন্যের বাড়িতে টিভি দেখার অপরাধে

প্রকাশ | ১১ এপ্রিল ২০২১, ১৪:২৭

শাহানাজ খুশি

আমাদের ছোটবেলায় বাড়ি বাড়ি টেলিভিশন ছিল না। হাতে গোনা ২/১ জন সৌখিন বিত্তবানদের বাড়িতে টেলিভিশন ছিল। আমাদের বাড়িতে তো প্রশ্নই আসে না। ঈদের অথবা বিশেষ দিনের প্রোগ্রাম দেখার জন্য আমরা যেতাম সেখানে। ঈদের আনন্দমেলা, যদিকিছু মনে না করেন, ছায়াছন্দ, হীরামন, এসো গান শিখি, টারজান এসব ছিল আমাদের সবচেয়ে প্রিয় অনুষ্ঠান।

ঈদে একটা সিনেমা দিলে, তার মধ্যে তিনবার খবর, বার দশেক বিজ্ঞাপন দিয়ে মধ্যরাত করে ফেলতো। বেশির ভাগদিনই ঘুমিয়ে পরতাম। আপারা ফেরার সময়ে ডেকে ঘুম ভাংগিয়ে আনতো। বাড়ি ফিরে আবার বড়দার হাতে লাইন ধরে পিটোন খেতাম, অন্যের বাড়ি টিভি দেখতে যাওয়ার অপরাধে।

বিজ্ঞাপনগুলো মুখস্ত ছিল, সী-বো ভ্যানিসিং ক্রীম, গ্যাকোটাচ সাবান, মিল্লাত ঘামাছি পাউডার, আনোয়ারের মালা শাড়ি, গন্ধরাজ তেল, জন্ম নিয়ন্ত্রণ ট্যাবলেট-মায়া/ওভাকন! দারুণ সব জিংগেল ছিল। আমার এখনো সব মনে আছে।

এর মধ্যে যে প্রোগ্রাম টুকু আমার ছোটবেলার বেশির ভাগ ভাবনার অংশ জুড়ে ছিল,খুব বেশি অবাক করে ভাবিয়ে তুলেছে, তা হল শ্রদ্ধেয় জুয়েল আইচ স্যার এর জাদু!

অত্যন্ত সুদর্শন এই মানুষটা অদ্ভুত এক হাসি মেলে ধরে যখন তার জাদুর ঝাঁপি নিয়ে স্কীনে ভেসে উঠতো,তখন আত্মার মধ্যে ধুকপুক করা শুরু করতো! বিশেষ করে বক্সের মধ্যে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে,হাত পা নড়ছে,কিন্তু বিশাল তরবারি বক্স ভেদ করে বের হয়ে এল! মানুষটাও জীবিত!

মাগো, কি যে ভয় পেতাম! পাশাপাশি একটা কথা মনে হতো,তাঁর ছুঁয়ে দিয়ে যে কোনো জিনিস বানিয়ে ফেলা দেখে! মনে হতো উনি তো গোপনে যখন ইচ্ছা অনেক টাকাও বানিয়ে নিতে পারেন! আহ্! কি সুখী মানুষ  তিনি।

আজ দেখলাম আমাকে ভাবিয়ে তোলা সেই অবাক করা জাদুকরের জন্মদিন। সালাম/শুভেচ্ছা/ভালবাসা/জুয়েল আইচ ভাই। যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি,তাতে করে একটা অজানা শংকায় থাকি সর্বক্ষণ। কাকে যেন হারায়? নিজের শেষ সময় আসলো নাকি!

আপনার সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু কামনা করি। আপনি অনেকদিন বেঁচে থাকেন আমাদের মাঝে। আর এই প্রজন্মের জন্য আপনি আবারো আপনার সেই মেধাপুর্ণ আনন্দময় শো করেন ভাই,প্লিজ....শুভ জন্মদিন।

লেখক: অভিনয়শিল্পী

ঢাকাটাইমস/১১এপ্রিল/এসকেএস