গণজাগরণ মঞ্চের লাকি আক্তার এখন...

আল-আমিন রাজু, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২১, ২০:২৪ | প্রকাশিত : ১১ এপ্রিল ২০২১, ১৫:১৮

প্রায় ভুলে যেতে বসা নাম গণজাগরণ মঞ্চ। অথচ কী উদ্দীপনা আর আশা জাগিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর। এখান থেকেই পরে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ। আলোচনার শীর্ষে তখন এই মঞ্চের ইমরান এইচ সরকার, লাকি আক্তার নামগুলো। দেশের সব মানুষের মুখে মুখে তাদের নাম।

আকাশের দিকে একটি তরুণী-মুখ উঁচু করে তার সামনে হাতে মাইক্রোফোন, গলার রগ ফুলিয়ে এক শ্যামলা মেয়ে 'ক-তে কাদের মোল্লা, ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগানমুখর করছে শাহবাগ, এই দৃশ্য তখন পত্রিকার পাতায় প্রিয় ছবি। হঠাৎই আড়াল থেকে বেরিয়ে এল যেন ঘুমন্ত অগ্নিকন্যা। লাকি আক্তার।

সময়টা ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর হয়ে নির্যাতন, হত্যা ও গুমের অপরাধে যাবজ্জীবন সাজা হয় জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার। এই রায়ে অসন্তুষ্ট তরুণ প্রজন্ম ক্ষোভে জ্বলে ওঠে। মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দাবি তাদের। ওই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে জ্বলে ওঠে প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ। তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি জেগে ওঠে দেশের সর স্তরের মানুষ। শাহবাগ চত্বরে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ। আরব বসন্তের আদলে এ স্ফুলিঙ্গের নাম দেওয়া হয় বাংলা বসন্ত।

সেই সময়ে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের স্লোগানকন্যা খেতাব পাওয়া লাকি আক্তার এখন কোথায় কেমন আছেন? বামধারার রাজনীতির এই কর্মী-নেতার রাজনৈতিক তৎপরতাও বেশ কিছু দিন ধরে তেমন একটা চোখে পড়ছে না।

ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত লাকি আক্তার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতিও হয়েছেন লাকি। বিয়ে করেছেন একই দলের সক্রিয় আরেক কর্মী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাবেক সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সজীবকে। তাদের ঘর আলো করে আছে এক কন্যাসন্তান।

মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ এবং সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদবিরোধী গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মাঠে নেতৃত্ব দেওয়া ইমরান এইচ সরকারও দীর্ঘদিন আলোচনায় নেই। সাম্প্রতিক দেশের বিভিন্ন আলোচিত-আলোড়িত কোনো ঘটনাতেই তাদের কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া কিংবা মতামত নেই। কেমন আছেন ইমরান?

গণজাগরণ মঞ্চের একসময়ের সামনের দুই নেতার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে ঢাকা টাইমস। অনেক চেষ্টা করে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি ইমরান এইচ সরকারের সঙ্গে। তবে ফোনে পাওয়া গেছে লাকি আক্তারকে। তিনি জানান, গণজাগরণ মঞ্চ আছে, তারা কাজও করছেন।

লাকি আক্তার তার রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি গণজাগরণ মঞ্চ ও আরও বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছেন।

বাম সংগঠনের নেত্রী বলেন, ‘আমরা গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গেও ছিলাম, আবার আমাদের একটি রাজনৈতিক দলও আছে। আমাদের আলাদা কাজ আছে। কিছু সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছি। তাদের আলাদা কাজ আছে।’

কাজেই লাকি আক্তার একেবারে নীরব তা বলা যাবে না। গণজাগরণের কোনো কর্মসূচি না থাকলেও লাকি আক্তার অন্যান্য বলয়ে নিজেদের কাজ করে চলেছেন বলে জানান।

নিজের বর্তমান অবস্থান ও কাজ নিয়ে লাকি আক্তার বলেন, ‘আমি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতির দায়িত্ব শেষ করে কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। বর্তমানে আমি বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করছি। এছাড়া বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির নারী সেলের কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে যুক্ত আছি। নারী আন্দোলন ও কৃষক আন্দোলনে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছি। রাজনীতির বাইরে আমি একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে রিসার্সের সঙ্গে যুক্ত আছি। এছাড়া আমি অনুবাদের কাজ করছি।’

গণজাগরণ মঞ্চের আলাদা কোনো কাজ নেই বলে জানান লাকি। তার মতে, একটা নির্দিষ্ট ইস্যুতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত গণ-আন্দোলন ছিল গণজাগরণ মঞ্চ। লাকি বলেন, ‘সময়ের প্রয়োজনে আমরা একীভূত হয়েছি। কাজ করেছি। কাজের ধারাবাহিকতা ছিল। সেই কাজের ধারাবাহিকতায় দেশের রাজনীতির অনেক পরিবর্তনের অবস্থাও আমরা দেখেছি। এই আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের প্রায় ২২ জনের মতো সহযোদ্ধা নিহত হন। তারপরও কিন্তু আমাদের লড়াই থেকে পিছপা হইনি আমরা।’

লাকি মনে করেন, গণজাগরণ মঞ্চ হুট করে কোনো আন্দোলন নয়। এটার একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে এবং তার একটি পটভূমি আছে। স্লোগানকন্যা বলেন, ‘সুতরাং কোনো ট্রায়ালের বিরুদ্ধে বা বর্তমান সময়ে যে অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, আমরা মনে করি নিশ্চয়ই সেই সময়ে যারা যুক্ত ছিলেন, তারা সেই সময়ে নিজ নিজ সংগঠনে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছেন। বর্তমানে পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিশ্চিয়ই এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন বলে বিশ্বাস করি।’

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় হেফাজত তাণ্ডব চালিয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি এমনকি কোনো ধরনের কর্মসূচিও দেয়া হয়নি। লাকি আক্তার বলেন, এই ধরনের কোনো বিষয়ে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচি ছিল না।

তবে তাদের পার্টির পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে জানিয়ে লাকি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে তারা কথা বলেছে। সহায়তা করার চেষ্টা করেছে। হেফাজতের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছে। ফলে আমাদের যে বক্তব্য তা মিডিয়ায় এসেছে।’

(ঢাকাটাইমস/১১এপ্রিল/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :