সর্বাত্মক লকডাউনে পোশাক কারখানা খোলা রাখার দাবি

প্রকাশ | ১১ এপ্রিল ২০২১, ১৫:২২ | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২১, ১৭:৩৪

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সর্বাত্মক লকডাউনে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের সব শিল্প কারখানা খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন মালিকরা।  রবিবার সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ‘লকডাউন চলাকালে কারখানা খোলা রাখা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই দাবি জানান।

করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী লকডাউনে গত বছর এই খাতগুলো যে সঙ্কটে পড়েছে, তা থেকে উত্তরণ ও শ্রমিকদের মজুরি, ঈদ বোনাস ও অন্যান্য খরচ মেটাতে কারখানা চালু রাখা দরকার বলে দাবি করেন তারা। এছাড়া করোনা মোকাবিলায় কারখানাগুলো প্রণোদনার ঋণ নিয়েছিল, তা পরিশোধের সময় ঘনিয়ে আসায় কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখা জরুরি বলে মনে করছেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুস সালাম লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় বিকেএমইএ সভাপতি  সেলিম ওসমানসহ অন্য নেতারাও  উপস্থিত ছিলেন।

আব্দুস সালাম বলেন, এই যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদন, সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতসহ বস্ত্র খাতের অন্যান্য সহযোগী শিল্পগুলোকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখুন। 

তিনি বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের রপ্তানি হারিয়েছে এই খাত। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি হারিয়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আরও  বলেন, বিশেষ করে ওভেন খাতে রপ্তানি সংকট চরমে পৌঁছেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ওভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। যা শুধু মার্চ মাসেই কমেছে ২৪ দশমিক ৭০ শতাংশ (২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায়)। ২০২০ সালের এপ্রিলের শেষ নাগাদ আমাদের ১১৫০ টি সদস্য প্রতিষ্ঠান ৩১৮ বিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ বাতিল ও স্থগিতের শিকার হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ৯০ শতাংশ বাতিল প্রত্যাহার হলেও মূল্যছাড় ও ডেফার্ড পেমেন্ট মেনে নিতে হয়েছে।

নেতারা বলেন, করোনা মোকাবিলায় সারা বিশ্বজুড়ে গৃহীত লকডাউন পদক্ষেপের কারণে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই পোশাকের খুচরা বিক্রয়ে ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত রয়েছে।  সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে ইউরোপে খুচরা বিক্রয় কমেছে ২৮ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে কমেছে ১৬ শতাংশ।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এর আগে থেকেই পোশাকের দরপতন শুরু হতে থাকে, যা করোনার পরে তীব্র আকার ধারণ করে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে আমাদের পোশাকের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ হারে দরপতন অব্যাহত আছে।

তৈরি পোশাক শিল্পের আন্তর্জাতিক অনেক ক্রেতা ও ব্র্যান্ড ক্রয়াদেশের বিপরীতে মূল্য পরিশোধ করেনি, অনেকে আবার দেউলিয়া হয়ে গেছে।  ফলে অনেক কারখানা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অনেকে তাদের জাহাজিকৃত পণ্য অথবা স্টকের মূল্য পায়নি, কিন্তু বাধ্য হয়ে কাঁচামালবাবদ খোলা ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় ঋণের শিকার হয়েছে।  

এই সংকটে থেকেও আমাদের শ্রমিকদের মজুরি দিয়ে যেতে হয়েছে এবং অন্যান্য খরচ মেটাতে হয়েছে। উপরন্তু, করোনা মোকাবিলায় কারখানাগুলো প্রণোদনাবাবদ যে ঋণ নিয়েছিলাম, তা পরিশোধের সময় ঘনিয়ে এসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিকারক ও মালিক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ)  নেতারা উপস্থিত ছিলেন।  

(ঢাকাটাইমস/১১এপ্রিল/আরএ/কেআর)