তরমুজ উৎপাদনে বিপর্যয়, ক্ষতির মুখে সুবর্ণচরের চাষিরা

মিজানুর রহমান রিয়াদ, নোয়াখালী
 | প্রকাশিত : ১১ এপ্রিল ২০২১, ১৭:০২

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের তরমুজের চাহিদার বেশির ভাগই মেটানো হয় নোয়াখালীর সুবর্ণচরের তরমুজ দিয়ে। কিন্তু বিগত তিন বছর একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তরমুজ উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। চলতি বছরে এ তরমুজের ফলনে এসেছে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তরমুজ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা।

শুরুর দিকে ভালো ফলনে চাষিদের মনে আশার আলো জ্বলে উঠলেও শেষের দিকে এসে তা হতাশায় পরিণত হয়েছে। চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত খরার কারণে তরমুজের আকার অপেক্ষাকিত ছোট হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। শত শত একর জমিতে তরমুজ পঁচে গেলেও বিক্রি করার মত পাইকার না পেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। আর এ সমস্যাকে জলবায়ুর পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব বলছেন কৃষিবিদরা। এখনই খরা সহিষ্ণু তরমুজের বীজ উদ্ভাবনের তাগিদ তাদের।

এদিকে, সেচ সুবিধা, সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় ও কৃষি বিভাগের পর্যাপ্ত সহযোগিতা এবং তদারকি না থাকায় ভালো ফলন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন চাষিরা।

সরজমিনে সুবর্ণচর উপজেলার চরওয়াপদা, চরবাটা, চরজুবলী, চরজব্বার, চরক্লার্ক ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের তরমুজ ক্ষেত ঘুরে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২-তিন বছর ধরে উপজেলায় তরমুজের আকার ছোট হতে শুরু করে। এক একর জমিতে তরমুজ চাষে খরচ হয় প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা। কিন্তু তরমুজের আকার ছোট হওয়ায় ওই এক একর জমিতে যে ফলন হয়েছে তা ১০ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারছে না চাষিরা।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এ অঞ্চলের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে জেলা শহর মাইজদী, চৌমুহনী, খাসেরহাট, হারিছ চৌধুরীর হাট, সোনাপুর, একলাশপুর, কবিরহাট, করমবক্স বাজার, ভূঁইয়ারহাট, কালামুন্সিসহ বিভিন্ন হাট বাজারগুলোতে। আকার অনুসারে প্রতিটি তরমুজ ১০, ৩০ ও ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। একটু বড় সাইজেরগুলো ৬০, ৭০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে তার সংখ্যা অনেক কম। বাজারে বড় তরমুজ না পেয়ে ক্রেতারাও হতাশ।

খাসেরহাট বাজারে তরমুজ ক্রয় করতে আসা জহির উদ্দিন বলেন, ‘এ বছর বাজারে বড় সাইজের তরমুজ নেই বললে চলে। সুবর্ণচরের তরমুজের ভালো কদর ছিল। সাইজেও এ তরমুজগুলো ছিল বড়। কিন্তু আজ তরমুজ ক্রয় করতে এসে আমি পুরোই হতাশ হয়ে পড়লাম। যতদূর দেখলাম প্রতিটি তরমুজের ওজন এক থেকে চার কেজির বেশি হবে না।’

সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নের উত্তর কচ্চপ্রিয়া গ্রামের তরমুজ চাষি রফিক উল্যাহ বলেন, ‘এ বছর আমি দুই একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু অতিরিক্ত খরা, বৃষ্টি ও পোকার আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় তরমুজের আকার ছোট হয়ে গেছে।’

একই অবস্থা ওই এলাকার তরমুজ চাষী দ্বীন মোহাম্মদ, আলমগীর হোসেন, হারুন ও জাফর আহমদের। তারা বলেন, এ বছরের পর আর তরমুজ চাষ করবেন না। আগামী মৌসুমে তরমুজ ক্ষেতে অন্য কোন শস্য চাষাবাদ করবেন।

একই গ্রামের চাষি বাবুল বলেন, ‘দুই ধাপে বিভিন্ন ক্ষেত থেকে তরমুজ বিক্রি করলেও উৎপাদন খরচের দশ ভাগও তুলতে পারিনি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৯ সাল থেকে জেলায় কমতে শুরু করেছে তরমুজের আবাদ। ২০১৯ সালে জেলায় তরমুজ আবাদ হয়েছিল নয় হাজার ২৫০, ২০২০ সালে তা কমে হয়েছে তিন হাজার ২৮৫, আর তা চলতি বছর কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র দুই হাজার ৪৮৯ হেক্টর জমিতে।

সুবর্ণচর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমাদের জনবল দরকার ছিল ৪০ জন, আছে মাত্র ১২ জন। জনবল সংকটের কারণে সময় মতো সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয় না। তবুও চাষিদের পরামর্শ দিয়েছি তরমুজ চাষাবাদের জন্য। এর পরও কোন চাষির সমস্যা হলে আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি সহযোগীতা করব। উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৩৯৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে।’

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শহিদুল হক জানান, তরমুজের আয়তন ছোট হওয়ার বিষয়টি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে শুনেছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় কৃষককে পরামর্শ দেওয়াসহ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নানা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও চরাঞ্চলের কৃষকদের চাষাবাদের জন্য সবধরনের সহযোগীতা ও সমস্যাগুলো চিহিৃত করে সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে। কিটনাশক ব্যবহার বন্ধ করে জৈব সার ব্যবহারে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে কৃষি বিভাগ কাজ করবে।

(ঢাকাটাইমস/১১এপ্রিল/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :