ধামরাইয়ে ‘মিনি পদ্মা সেতু' দেখতে মানুষের ভিড়

প্রকাশ | ১১ এপ্রিল ২০২১, ১৭:২০ | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২১, ১৭:২২

আহমাদ সোহান সিরাজী , সাভার (ঢাকা)

‘মিনি পদ্মা সেতুর’ নির্মাণকাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ধামরাইয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র সোহাগ আহমেদ। মাটি, বাঁশ ও সিমেন্ট দিয়ে নানা কারুকাজের মাধ্যমে হুবুহু ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মূল পদ্মা সেতুর অবয়ব। যা তাক লাগিয়ে দিয়েছে এলাকার সবাইকে। তার বানানো এই মিনি পদ্মা সেতু দেখেই স্বাদ মেটাচ্ছেন আসল পদ্মা সেতু না দেখা অনেকেই ।

সেতুটি দেখতে প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধামরাইয়ের সুতিপাড়া এলাকায় তার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন অসংখ্য দর্শনার্থী।

স্থানীয় ভালুম আতাউর রহমান খান স্কুল ও কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহাগ আহমেদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ঘরের পাশের খালি জায়গায় বাঁশ ও মাটির কাঠামোতে সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে বানানো হয়েছে এই মিনি পদ্মা সেতু। মূল পদ্মা সেতু ছাড়াও রেললাইন, ল্যাম্পপোস্টসহ অনেক কিছুই রয়েছে এই ডামি সেতুতে। নিচে মাটি খুঁড়ে রূপ দেওয়া হয়েছে কৃত্রিম পদ্মা নদী। দুই লেনের মাঝখানে ফুলের চারাসহ এক প্রান্তে রয়েছে চেকপোস্ট। রাতের বেলা ল্যাম্পপোস্টগুলোতে আলো জ্বললে আরোও সুন্দর হয়ে উঠে সোহাগের এই পদ্মা সেতু।

স্কুলছাত্র সোহাগ আহমেদ বলেন, ‘প্রথম যেদিন পদ্মা সেতুর স্প্যান বসে, সেদিন থেকেই স্বপ্ন দেখেছি ওইরকম একটা সেতু বানাবো আমি। সেই লক্ষ্যে ২০১৯ সালে আমি প্রথম সেতু বানানোর কাজ শুরু করি, তবে তা টেকাতে পারি নাই। তখন মাটি দিয়ে বানিয়েছিলাম, তাই বৃষ্টির পানিতে ভেঙে গেছে। পরে গত বছরের এক নভেম্বর পুনরায় সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করি। দীর্ঘ পাঁচ মাস পর এ বছরের ২৬শে মার্চ আমার পদ্মা সেতু বানানোর কাজ শেষ হয়। তবে এবার মাটির ওপর সিমেন্ট দিয়ে প্লাস্টার করে দিয়েছি। যাতে আগের বারের মতো সেতুর মাটি গলে না যায়।’

উচ্ছ্বসিত সোহাগ আরও বলেন, ‘পড়াশুনা এবং বাড়ির কাজের পাশাপাশি আমি এই পদ্মা সেতু তৈরি করছি। এতদিনের পরিশ্রমের পর এটা বানাতে পেরে আমার খুব ভাল লাগতেছে। অনেক লোক আসতেছে আমার সেতুটি দেখতে। যেই দেখতেছে সেই প্রশংসা করতাছে।’

সাভার থেকে এই সেতু দেখতে আসা আবিদ হাসান নাফি নামে এক ইউটিউবার বলেন, ‘সেতুটি ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। তাই ফেসবুকে এর ছবি দেখে বন্ধুদের নিয়ে চলে আসলাম সেতু দেখতে। পাশাপাশি এটি নিয়ে আমার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য একটি ভিডিও তৈরি করব।’

অপর দর্শনার্থী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি পাশের গ্রামে থাকি। মানুষের মুখে বেশ কিছু দিন ধরে শুনছি এই এলাকায় একজন মিনি পদ্মা সেতু বানিয়েছে। তাই আজ দেখতে আসলাম। আসল যে পদ্মা সেতু আছে এটা দেখতে একই রকম। তার কাজে আমি সত্যিই বিস্মিত। সে আমাদের এলাকার গর্ব।’

সোহাগের বাবা সুলতান আলী বলেন, ‘প্রথম যখন সোহাগ এই সেতু বানানো শুরু করে তখন লেখাপড়ায় ব্যাঘাত হবে ভেবে তাকে অনেক বকাঝকা করতাম, ধমক দিয়ে বলতাম পড়াশোনা বাদ দিয়া কি করস এগুলা! এখন সোহাগের বানানো পদ্মা সেতু দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছে এবং প্রশংসা করছে। এতে গর্বে আমার বুক ভরে যাচ্ছে। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন যেন সে বড় হয়ে একজন ভালো মানের ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে।’

সুতিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, ‘আমি নিজে গিয়ে মিনি পদ্মা সেতুটা দেখে এসেছি। অনেক সুন্দর হয়েছে কাজটা। প্রতিদিনই নানান জায়গা থেকে লোকজন সেতুটা দেখতে আসতেছে। আমরা এলাকাবাসী সোহাগকে নিয়ে গর্বিত।’

(ঢাকাটাইমস/১১এপ্রিল/পিএল)