ত্রিশালে ‘এনালগ সিস্টেমে’ চলছে ‘ডিজিটাল সেন্টার’

প্রকাশ | ১১ এপ্রিল ২০২১, ২১:২২

মেহেদি জামান লিজন, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ)

বর্তমান প্রজন্ম প্রযুক্তিরনির্ভর। তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে গুগলে সার্চ দিলেই সব তথ্য সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষের দোরগোঁড়ায় সরকারি সব সেবা পৌঁছে দিতে দেশের প্রতিটি সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে।

এ সেবা গ্রামীণ পর্যায়ে পৌঁছে দিতে ত্রিশালের প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন ও পৌরসভায় রয়েছে ডিজিটাল সেন্টার। তবে সেগুলো চলছে আগের মতোই ‘এনালগ সিস্টেমে’।

ত্রিশাল উপজেলার সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নের অনেকগুলো ওয়েবসাইটে লগইন করে দেখা যায়, দুই-একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোন ওয়েবসাইটে কোন আপডেট নেই। অনেকগুলো উপজেলা ও ইউনিয়নের বর্তমান পরিষদের নামগন্ধই নেই।

ওয়েরসাইটগুলোতে উপজেলা/ইউনিয়ন সম্পর্কিত, পরিষদ, কর্মকর্তাবৃন্দ, সরকারি অফিস, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, ই-সেবা, ফটো গ্যালারি, নোটিশ বোর্ড, আমাদের বিষয়, সেবাসমূহ, অভিযোগ, আইনবিধি, কর্ম সম্পাদনা, বিভিন্ন বাতায়ন, জরুরি কল, কার্যাবলী, নোটিশ ও বিজ্ঞপ্তি অনেকবার আছে। এগুলোর ভেতরে আছে আরো অনেক ক্যাটাগরি। কিন্ত বারগুলোতে ক্লিক করে দেখা যায়, এগুলো শুধু নামেই আছে, কোন তথ্য নেই। কিছুকিছু তথ্য থাকলেও সেগুলো এক-দেড় বছরের পুরনো।

নোটিশ বোর্ডে কয়েক বছরের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোন নোটিশই হয়নি। তথ্য বা সেবার কথা থাকলেও কোন তথ্য পাওয়া যায় না। যে কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন দুই বছর আগে, ওয়েবসাইটে সেই কর্মকর্তার নাম এখনো বহাল। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের নেই নাম-ঠিকানা।

উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নের অধিকাংশ ওয়েবসাইটগুলোর শেষ আপডেট হয়েছে বছর/দুই বছর আগে। আর সাইটগুলোও অনেক দুর্বল।

সাইটগুলো পরিচালনা বা নিয়মিত আপডেট দেয়ার জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আলাদা কর্মকর্তাও আছেন। উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নের জন্য সরকারি প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরি করা হয়েছে। দেশের সবক’টি উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নের উদ্যোক্তাদের দেয়া হয়েছে নতুন কম্পিউটার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। গড়ে তোলা হয়েছে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার।

এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য সৌরবিদ্যুৎও দেয়া হয়েছে। তাদের কাজের পাশাপাশি ওয়েবসাইট আপডেট করার কথা।

ত্রিশালের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নের অনেকগুলো ডিজিটাল সেন্টার ঘুরে দেখা যায়, সেগুলো একেকটা হয়ে উঠেছে শুধুমাত্র ফটোকপির দোকান। সেবাগ্রহিতারা আগের মতোই ‘এনালগ সিস্টেমে’ সেবা নিচ্ছেন।

ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চুক্তি সম্পাদনপত্রে উল্লেখ রয়েছে, উদ্যোক্তরা সেন্টারগুলো পরিচালনার পাশাপাশি প্রতিদিন ইউনিয়ন ও উপজেলার কার্যক্রমগুলো নিয়মিত আপলোড করবেন। ডিজিটাল সেন্টার ম্যানেজমেন্ট থেকে প্রতি মাসের রিপোর্ট আপলোড করার নোটিশও দেয়া হয়। তবু ত্রিশালের কোন উদ্যোক্তা তা মানছেন না বলেই হয়তো নিয়মিত আপলোড হচ্ছে না বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।

এদিকে, সব সরকারি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটগুলোর তথ্য ঘাটতি বা নিয়মিত আপলোড না করায় জনসাধারণ বা সেবাপ্রার্থীদের বিড়ম্বনা ও বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এসব ওয়েবসাইট থেকে সাধারণ সেবাগ্রহিতারা সেবা পাচ্ছেন কিনা সে বিষয়গুলো দেখার যেন কেউ নেই।

ত্রিশাল উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে সরে জমিনে জানা যায়, ডিজিটাল সোনার বাংলা গড়তে এমন পদক্ষেপ উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র স্থাপনের ফলে গ্রামীণ জনগণের অবাধ তথ্য প্রবাহে অংশগ্রহণসহ দ্রুততম সময়ে তথ্য ও সেবা পাওয়ার পথ সুগম হয়েছে। এই মাধ্যমটিকে টিকিয়ে রেখে নিয়মিত আপডেট প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নাসরিন সুলতানা জানান, শুরুতে জেলা থেকে ওয়েবসাইটগুলো পরিচালনা করা হতো। পরে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে লোকবল তৈরি করে পরিচলানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে দুইবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কেন তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে না এই বিষয়ে আবার চিঠি প্রেরণ করব।

ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ডিজিটাল সেন্টারে নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ ও আপলোড করা হচ্ছে না কেন- তা তদারকি করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১১এপ্রিল/এলএ)