বিএনপিতে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনা

বোরহান উদ্দিন
| আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২১, ১১:১৫ | প্রকাশিত : ১২ এপ্রিল ২০২১, ০৯:১৫

মহামারি করোনা হানা দিয়েছে বিএনপির শীর্ষপর্যায়ে। এত দিন কেন্দ্রীয় থেকে মাঠপর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী আক্রান্ত হলেও এবার খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বিশেষ করে গতকাল দলীয় প্রধানের করোনা শনাক্ত হওয়ার খবর প্রকাশের পর তা সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে ভাবিয়ে তুলেছে। যার যার অবস্থান থেকে চেয়ারপারসনসহ সবার সুস্থতার জন্য দোয়া চাইছেন তারা।

এদিকে করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করার পর আগামী ঈদ পর্যন্ত সাংগঠনিক সব কার্যক্রম স্থগিত করেছে বিএনপি। শুধু জরুরি সংবাদ সম্মেলন করা হচ্ছে আপাতত।

দলীয় তথ্যমতে, চেয়ারপারসন ছাড়াও দেশব্যাপী বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক নেতা করোনায় এখনো আক্রান্ত। তাদের মধ্যে আছেন চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, গৃহকর্মীও। তাদের কেউ হাসপাতালে আবার কেউ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আর গত বছরের মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিএনপির প্রায় সাড়ে চার শ নেতাকর্মী মারা গেছেন বলে দলটির দাবি। তাদের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাও আছেন।

চেয়ারপারসনের করোনা শনাক্তের পর সবার মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে এমন মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘স্বাভাবিক কারণেই নেতাকর্মীরা খুবই উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। তার বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় নিলে চেয়ারপারসনের করোনা পজিটিভ হওয়ার খবর উদ্বেগের। ইতিমধ্যে আমরা অনেক বরেণ্য ব্যক্তিকে হারিয়েছি। আশা করি তার চিকিৎসাসহ সার্বিক বিষয়ে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে।’

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ঢাকা টাইমসকে জানান, করোনা সংক্রমণে এ পর্যন্ত বিএনপির ৪৪০ জন নেতাকর্মী মারা গেছেন। এখনো শতাধিক নেতাকর্মী আক্রান্ত হয়ে আছেন।

করোনায় আক্রান্ত যারা

গতকাল সবশেষ খালেদা জিয়া ছাড়াও তার বাসার গৃহকর্মীসহ নয়জনের করোনা শনাক্ত হয় বলে জানা গেছে। এর আগে থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গাজী মাজহারুল আনোয়ার, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, ড্যাবের সাবেক সভাপতি ডা. এ কে এম আজিজুল হক।

তাদের মধ্যে রুহুল কবির রিজভী স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন। একই হাসপাতালে স্ত্রীসহ চিকিৎসা নিচ্ছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন সেলিমা রহমান ও ফরহাদ হালিম ডোনার। স্ত্রী-মেয়ে এবং গৃহপরিচারিকা, গাড়ির চালকসহ করোনায় আক্রান্ত ডা. জাহিদ। তবে সবাই ভালো আছেন বলে ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন তিনি।

করোনায় যাদের হারিয়েছে বিএনপি

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, করোনা সংক্রমণে এ পর্যন্ত বিএনপির ৪৪০ জন নেতাকর্মী মারা গেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সভাপতি এম এ হক, সাবেক মন্ত্রী টি এম গিয়াস উদ্দিন, ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, কুমিল্লা বিভাগ সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খান, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. মামুন রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন সরকার প্রমুখ।

স্থগিত সাংগঠনিক কার্যক্রম

মার্চের শুরুর দিকে মাঠের কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। পরে এপ্রিলের শুরুতে দেশে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্যনিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নেতা-কর্মীদের জনসমাগম ঘটে এ রকম ‘রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক’ কার্যক্রম স্থগিত করে দলটি।

দলের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, করোনার পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে জনগণ, দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থকদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা বিবেচনায় বিএনপির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হলো। মোবাইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করা হবে।

করোনার কারণে গত বছর টানা ছয় মাসের মতো বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বন্ধ ছিল। এরপর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু হলেও করোনার কারণে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি দলটি। আবার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচিও স্থগিত করে দলটি। যদিও বিএনপি গঠিত ‘জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেল’ এর মধ্যে তাদের কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

পরিস্থিতি মোকাবেলা কীভাবে সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে শামসুজ্জামান খান দুদু বলেন, ‘করোনা এখন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে দেশে। এটাকে রাষ্ট্রীয় ও দলগতভাবে মোকাবিলা করতে হবে। তাই সব ভেদাভেদ ভুলে সর্বদলীয়ভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় উদ্যোগ না নেওয়া হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।’

(ঢাকাটাইমস/১২এপ্রিল/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :