কয়েদির পোশাকে পাপিয়ার নির্লিপ্ত দিনযাপন

প্রকাশ | ১২ এপ্রিল ২০২১, ১০:৫৩ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২১, ১১:০১

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস

একসময় হাঁকাতেন দামি গাড়ি। নিয়মিত যাওয়া-আসা ছিল পাঁচতারকা হোটেলে। অথচ সময়ের ব্যবধানে অন্ধকার জগতের ‘লেডি ডন’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ঠিকানা এখন নির্জন কারাগার। বিচারকাজ চলছে বেশ কয়েকটি মামলার। এর মধ্যে অস্ত্র মামলায় ২০ বছরের কারাদণ্ড হওয়ায় নিয়ম মেনে পরতে হচ্ছে কয়েদির পোশাক। সেই পোশাকেই কারাগারে নির্লিপ্ত দিনযাপন করছেন পাপিয়া।

দেশজুড়ে আলোচিত প্রভাবশালী এই নেত্রী তরুণীদের দিয়ে অনৈতিক ব্যবসার ফাঁদ পেতে আমোদ-প্রমোদ আর বিলাসী জীবন যাপন করতেন, এমন অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। বেপরোয়া জীবনযাপন করা পাপিয়ার ওঠাবসা ছিল সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার প্রতাপশালীদের সঙ্গে। কিন্তু নির্জন কারাবাস বদলে দিয়েছে পাপিয়ার জীবন। যারা একসময় তাকে ঘিরে ঘুরঘুর করতো তাদের কেউই এখন আর খোঁজ নেন না। এমনকি পরিবারের সদস্যরাও নিয়ম করে আর আসেন না খোঁজ নিতে। 

গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে র‌্যাবের হাতে স্বামী সুমনসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে কাশিমপুর-৩ মহিলা কারাগারে আছেন পাপিয়া।

কারাসূত্রে জানা গেছে, অন্ধকার জগৎ দাপিয়ে বেড়ানো এই নারীর কারাগারে নেই কোনো প্রভাব। স্বজনরাও তেমন একটা খোঁজ নিতে আসেন না। চলাফেরা করছেন সাধারণ কয়েদির মতো। অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য নেই কোনো অনুতাপ।  ভাবলেশহীন ও নির্লিপ্ত দিনযাপন করছেন নরসিংদী যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত এই নেত্রী।

প্রথম প্রথম পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এক ভাই দেখা করতে যেতেন। করোনা সংক্রমণের মধ্যে তা এখন বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে কারাসূত্র।

গত বছরের ১২ অক্টোবর অস্ত্র মামলায় ২০ বছরের সাজা হওয়ায় পাপিয়াকে কারাগারে কয়েদি পোশাকেই থাকতে হচ্ছে। জেলের নিয়ম অনুযায়ী, সাজাপ্রাপ্ত নারী কয়েদিরা সাদা রঙের ওপর নীল স্ট্রাইপ শাড়ি পরেন।

কারা সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম মেনে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে কয়েদির পোশাক পরতে হয়। তিনিও (পাপিয়া) তাই পরেন। পর্যাপ্ত ঘুমালেও আনলক, লকাপ, গুনতি এগুলোর নিয়ম অনুসরণ করতে হয় তাকে।

জানা যায়, কারাগারের সাধারণ খাবারই খান পাপিয়া। মাঝে মধ্যে ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে খান।  সপ্তাহে একদিন মোবাইলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পাপিয়া যে সেলে বন্দি সেখানে সাজাপ্রাপ্ত আরও একাধিক নারী রয়েছেন। তাদের সবাইকে আলাদা নজরদারির মধ্যে রাখে কারা কর্তৃপক্ষ।

সূত্রটি আরও জানায়, জেলখানায় পাপিয়া নামাজ আদায় করেন। মাঝে মধ্যে লাইব্রেরি থেকে বই এনে পড়েন, তবে সেটা খুবই কম।

এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে নিজের মধ্যে অনুশোচনা করতে দেখা যায় কি-না, জানতে চাইলে কারাগারের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অনুশোচনা তো হয়ই। কারাগারে এলে আর আটকা থাকলে সবার মধ্যে অনুশোচনা তো থাকেই। পাপিকাকেও প্রায়ই মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখা যায়।’

 

পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ ও মামলা

 

যুবলীগের এই নেত্রী (পরে বহিষ্কৃত) স্বামী ও সহযোগীসহ গ্রেপ্তারের আগে গুলশানের অভিজাত হোটেল ওয়েস্টিনের ‘প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইট’ ভাড়া নিয়ে মাসে বিল গুনতেন কোটি টাকা। প্রতিদিন হোটেলের বিল বাবদ গড়ে খরচ করতেন আড়াই লাখ টাকা। সব সময় সঙ্গে থাকত সাতজন অল্পবয়সী তরুণী। আর আনাগোনা ছিল সমাজের নানা পর্যায়ের ‘এলিট’ মানুষের। তরুণীদের অনৈতিক ব্যবহার, অস্ত্র, মাদক, চোরাচালান, জাল নোটের কারবার, চাঁদাবাজি, তদবির-বাণিজ্য, জায়গাজমি দখল-বেদখল ও অনৈতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থবিত্তের মালিক হন পাপিয়া ও সুমন দম্পতি।

গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয় পাপিয়া দম্পতি। সে সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, দুই লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জাল নোট, ১১ হাজার ৪৮১ ডলার, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের কিছু মুদ্রা এবং দুটি ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়। পরে পাপিয়ার ফার্মগেইটের ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০টি গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড উদ্ধারের কথা জানায় র‌্যাব। অভিযান চালানো হয় পাপিয়ার নরসিংদীর বাড়িতেও।

গ্রেপ্তারের পর পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করে র‌্যাব। বিমানবন্দর থানায়ও তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ এর অধীনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আর মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে সিআইডি আরেকটি মামলা করে। এছাড়া দুদকও পাপিয়ার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করছে।

তদন্ত শেষে র‌্যাবের পক্ষ থেকে তিনটি মামলার প্রতিবেদনই আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ঢাকা টাইমসকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, শেরে বাংলা নগর থানায় অস্ত্র আইনে করা মামলার প্রতিবেদন গত বছরের ২৩ মার্চ জমা দেয়া হয়। সেই মামলায় ১২ অক্টোবর ২০ বছরের সাজা হয়েছে এই দম্পতির।

একই থানার আরেকটি মামলার প্রতিবেদন ১০ আগস্ট জমা দিয়েছে র‌্যাব। আর বিমানবন্দর থানায় করা মামলার প্রতিবেদন ২৯ নভেম্বর র‌্যাবের পক্ষ থেকে জমা দেয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১২এপ্রিল/এসএস/জেবি)