আহলান সাহলান মাহে রমজান

মাওলানা ওবায়দুল হক
 | প্রকাশিত : ১৩ এপ্রিল ২০২১, ১৫:২০

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয় হলো রমজান মাসের রোজা। রমজানের তিন দশককে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। প্রথম দশক রহমত। দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত। আর তৃতীয় দশক নাজাত। রোজা হলো সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা গুনাহের কাজ ও যৌনসঙ্গম থেকে বিরত থাকা। রমজান মাসে ইবাদত করলে সত্তর গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।

রমজান মাসে করণীয় বিষয়সমূহ: সেহেরি খাওয়া, সালাতুত তারাবিহ পড়া, কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা, সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়া, বেশি বেশি দান-সদকাহ করা, উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা, ই‘তিকাফ করা, দাওয়াতে দ্বীনের কাজ করা, সামর্থ্য থাকলে উমরা পালন করা, লাইলাতুল কদর তালাশ করা, বেশি বেশি দো‘আ ও কান্নাকাটি করা, ইফতার করা ও ইফতার করানো, তাওবাহ ও ইস্তেগফার করা, তাকওয়া অর্জন করা, ফিতরাহ দেয়া, কুরআন মুখস্থ বা হিফয করা, আল্লাহর যিকর করা, মিসওয়াক করা, অনুষ্ঠান, ভ্রমণ ইত্যাদি রমজানপূর্ব সময়ে সেরে নেওয়া ভালো, রোগ-ব্যাধি থাকলে রমজানের আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করা, হাট-বাজার রমজানে যথাসম্ভব কম করা, রমজানে পালনীয় ইবাদত-বন্দেগি সংক্রান্ত বিধিবিধান রমজানের আগেই জেনে নিতে হবে।

রমজান মাসে বর্জনীয় বিষয়সমূহ: অযথা বিলম্বে ইফতার করা, সেহরি না খেয়ে রোজা রাখা, অযথা কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকা, মিথ্যা বলা ও গীবত করা, অপচয় ও অপব্যয় করা, জামা‘আতের সাথে ফরয সালাত আদায়ে অলসতা করা, বেশি বেশি খাওয়া, লোক দেখানো ইবাদাত (ইফতার, দান) করা, অপ্রয়োজনে বেশি বেশি ঘুমানো, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করা, অশ্লীল সিনেমা দেখা।

রমজান মাসের উল্লেখযোগ্য ইবাদত:

(ক) লাইলাতুল কদর: লাইলাতুল কদর হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। কদরের রাতে সওয়ারের আশায় ইবাদত করলে, অতীতের গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়ার ওয়াদা করা হয়েছে। লাইলাতুল কদর খুঁজতে রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় তারিখে (২১, ২৩, ২৭, ২৯) ইবাদত করতে হবে। তবে রমজানের ২৬ তারিখে দিবাগত রাতে শবেকদর হবার বেশি সম্ভাবনা রয়েছে।

(খ) ইতিকাফ: ইতিকাফ হলো রমজান মাসের শেষ দশদিনে রোজাদার সওয়াবের আশায় এক বা একাধিক দিন নিকটবর্তী মসজিদে দিনানিপাত করেন। ইতিকাফ হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। বিনা প্রয়োজনে অর্থাৎ গোসল, খাবার, প্রস্রাব–পায়খানা ব্যতীত অন্য কোনো অজুহাতে মসজিদ হতে বের হওয়া যাবে না। সারাদিন মসজিদে থেকে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, নফল নামাজ ইত্যাদিতে মশগুল থাকবে।

(গ) তারাবি নামাজ: এশার সালাতের পর বিতরের আগে দুই রাকাত করে মোট ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত। খতম তারাবি আদায় করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।

রমজান মাসের মর্যাদা: প্রকাশ্যে পানাহার না করা, গান-বাজনা, প্রাণীর ছবি ও প্রাণীমূর্তির প্রদর্শনী, বেপর্দা চলাফেরা না করা, দিনের বেলা হোটেল-রেস্তোরাঁয় পানাহার বন্ধ রাখা, পুরুষেরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতে আদায় করা, রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা।

করোনা সময়ে রমজানের ইবাদত: করোনা সময়ে রমজান মাসে সতর্কভাবে চলাফেরা ও কাজকর্ম করতে হবে। অযথা বাইরে ঘুরাঘোরি না করে বাসায় বসে ইবাদত করা সবচেয়ে নিরাপদ। জামাতে নামাজ পড়ার জন্য অনেকে মসজিদে না গিয়ে বাসায় কয়েকজনে মিলে তারাবিহসহ জামাতের ব্যবস্থা করে থাকেন।

গত বছরে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের পরলোকগমন: গত এক বছরে দেশের ইসলামী ব্যক্তিত্বসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের করোনাসহ বিভিন্ন কারণে জান্নাতবাসী হওয়ার কারণে দেশের মধ্যে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে সে শূন্যতা পূরণ করার জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ হতে সবাইকে মহান আল্লাহর দরবারে পবিত্র রমজান মাসে ফরিয়াদ করতে হবে। আল্লাহ যেন রমজান মাসের উসিলায় দেশকে সুন্দরভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জান্নাতবাসী হওয়ার কারণে মেধার শূন্যতার অভাব হতে আমাদের রক্ষা করেন।

হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল কিন্তু গোনাহ মাফ করতে পারল না তার মতো হতভাগ্য আর নেই। তাই রমজান মাসে বেশি বেশি ইবাদত করে সত্তর গুণ বেশি সওয়াব ও গোনাহ মাফ করে নিষ্পাপ হয়ে ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগ করতে হবে।

লেখক: প্রিন্সিপাল, মাদরাসা ই নেজামিয়া

মেইল:obaidulhoqbdgmail.com

ঢাকাটাইমস/১৩এপ্রিল/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :