বিশ্বের বিপজ্জনক সেতু, ভিতুদের যেতে মানা (পর্ব-২)

নাঈম লাবিব
| আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২১, ১০:১২ | প্রকাশিত : ১৪ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৫২

সেতু মানবজাতির ইতিহাসে এক অন্যতম সেরা নির্মাণমূলক আবিষ্কার। এই সেতু বহুকাল ধরেই আমাদের পূর্বপুরুষদের পানির উপর দিয়ে বা প্রতিকূল পথের জায়গাগুলোতে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যেতে বিরাট ভূমিকা পালন করে আসছে। অনেক পুরনো সেতুর বয়স শেষ হয়ে গেলেও আপনি দেখে অবাক হবেন যে এগুলো এখনো পূর্বের মতো দাঁড়িয়ে আছে যা পর্যটকরা ব্যবহার করছে। অন্যদিকে কিছু আধুনিক সেতু রয়েছে যা আপনার শ্বাসরুদ্ধকর উচ্চতায় নিয়ে যায় এবং অবশ্যই এগুলো ভিতু লোকদের জন্যে নয়। এমনই ৮ টি সেতুর বিবরণ এই পর্বে তুলে ধরা হলো।

ট্রিফট ব্রিজ (সুইজারল্যান্ড)

হ্যাঁ যদিও এই সেতুটি একেবারে সেরকম অত্যাশ্চর্য কিছু না, তবুও আমরা এটা অতিক্রম করার সাহস করবো না। কারণ সেতুটি সুইজারল্যান্ডের হিমবাহের উপর দিয়ে ৫৫৮ ফুট উঁচুতে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩২৮ ফুট উপরে অবস্থিত। আপনি চাইলে সুইস আল্পসের গাদমেন শহরের সেতুটিতে ভ্রমণ করতে পারবেন।

যদিও সেতুটি ২০০৪ সালে স্থাপিত হয় কিন্তু এর পূর্বে সুইজারল্যান্ডের বাতাসের কারণে অনেক বছর ধরেই বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল নির্মাণের সময়। অতঃপর ২০০৯ সালে স্থিতিশীল তার সংযোজনের মাধ্যমে সেতুটিকে আরও নিরাপদ করা হয়।

লংজিয়াং সাসপেনশন ব্রিজ (চীন)

লংজিয়াং সাসপেনশন ব্রিজ আরও একটি নামে পরিচিত। সেটি হলো লং রিভার ব্রিজ। চীনের ইউনান এবং বাওশানের স্থানীয়দের মধ্যেই এই নাম বেশি প্রচলিত। এই সেতুটি মূলত বাওশান এবং টেংচং শহর দুটিকে যুক্ত করে। লং রিভার ব্রিজ সমগ্র এশিয়ার মধ্যে দীর্ঘতম এবং সর্বোচ্চ সাসপেনশন ব্রিজ। এটি নির্মাণ করতে ৫ বছর সময় লেগেছিল এবং ২০১৬ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল।

সেতুটির দৈর্ঘ্য মোট ৩৯০০ ফুট এবং নদী থেকে এটি ৯২০ ফুট উপরে অবস্থিত। এই সেতু অতিক্রম করার চেয়ে বরং বাওসান থেকে টেংচং পর্যন্ত ৮.৪ মাইল পথ পাড়ি দেওয়া ভালো। তবে এটি শুধু দুর্বল হৃদয়ের মানুষের জন্য। আর যারা সাহসি তাদের জন্য অভিনন্দন।

ইউ বেইন ব্রিজ (মিয়ানমার)

এই সেতুটি মূলত সংস্কারাধীন অপর একটি সেতুর বিকল্প হিসেবে সাময়িকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই সেতুটিকে এভাবেই দেখা যাচ্ছে। সেতুটি মিয়ানমারের টুংথামান হ্রদটি অতিক্রম করে যা ১.২ কিলোমিটার দীর্ঘ। ১৮৫০ সালে নির্মিত এই সেতুটি বিশ্বের প্রাচীনতম সেগুন কাঠের সেতু হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, যেখান থেকে সূর্যাস্তের কিছু সুন্দর মুহূর্ত ধারণ করা যায়। এখানে স্থানীয়রা তাদের বিভিন্ন শৈল্পিক কারুকার্য বিক্রি করে। আপনি চাইলে এই সেতুটি পায়ে হেঁটেও অতিক্রম করতে পারবেন।

লিভিং রুট ব্রিজ (মেঘালয়)

এই সেতু মেঘালয়ের বিশেষ আকর্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এগুলো প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এভাবেই আছে। খান বংশ তাদের রাবার গাছের শিকড় গুলোকে এভাবে পেচিয়ে নদীর অপর প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিল। সময়ের সাথে সেগুলোর সাথে আরো শিকড় জড়িয়ে একটি মজবুত কাঠামো গড়ে তোলে যা একটি সম্পূর্ণ সেতুতে রূপ নেয়। এই সেতু এমন শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে একসাথে ৫০ জনের বেশি ওজন ধরে রাখতে পারে।

শিকড়গুলো এখনো জীবিত এবং এরা আরো ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বাড়তে পারে যা সেতু টিকে আরো পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে সক্ষম। পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়ে গেলে সেতুটি আরো ৫০০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

মেরিন ব্রুউইক (জার্মানি)

মেরিন ব্রুউইক সেতুটি দ্বিতীয় ক্রাউন প্রিন্স ম্যাক্সিমিলিয়ান তার বন্ধু ম্যারির জন্মদিনে উপহার দিয়েছিলেন। তারা দুজনই পাহাড় আরোহণ করতে পছন্দ করতেন এবং এই সেতুটি তাদেরকে সেই কাজে বিশেষভাবে সহায়তা করার একটি নিদর্শন। সম্প্রতি সেতুটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। সেতুটি দৈর্ঘ্যে ছোট হলেও বেশ উঁচুতে অবস্থিত। আশেপাশের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য গুলো উপভোগ করার জন্য কেবল মানুষ এখানে ঘুরতে যায়।

স্ল্যাটারস ব্রিজ (ইংল্যান্ড)

এই সেতুটি ইংল্যান্ডের সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং বৃহত্তম জাতীয় উদ্যান লেকল্যান্ডে অবস্থিত। প্রতিবছর ১৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ এইসব বৃহত্তম হ্রদ, জঙ্গল, পর্বতমালা ইত্যাদি ভ্রমণ করতে আসে। এই সেতুটি মূলত দুটি অংশে বিভক্ত এবং সম্পূর্ণ সেতুটি হস্তনির্মিত। সেতুটি দীর্ঘ স্লেট স্ল্যাব দিয়ে গঠিত যা ব্রাথে নদীর উপর দিয়ে অতিক্রম করে এবং লিটল ল্যাংডেল কে এলটারওয়াটার পর্যন্ত সংযুক্ত করে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ২০১৭ সালে সেতুটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে মনোনীত হয়েছিল।

রয়েল জর্জ ব্রিজ (কলোরাডো)

এই সেতুটি দেখলে কমবেশি সকলেরই মাথা ঘুরানোর উপক্রম হয়। রয়েল জর্জ ব্রিজ পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সাসপেনশন ব্রিজ। সেতুটি আর্কানসাস নদীর উপরে ৯৫৫ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এই সেতুটি ১৯২৯ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের দীর্ঘতম সেতুর খেতাবটি ধরে রেখেছিল। সেতুটি এখন পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ এবং এই স্থানটি বর্তমানে রয়েল জর্জ ব্রিজ এন্ড পার্ক নামে পরিচিত। সম্পূর্ণ পার্কটি ৩৬০ একর জমি নিয়ে নির্মিত। সাহসী দর্শনার্থীরা এই সেতু দেখতে এসে কেবল কারে উঠে কলোরাডোর অসম্ভব সুন্দর দৃশ্যও উপভোগ করতে পারেন।

রুট ব্রিজ (ভারত)

যে বা যারা এই সেতুটি নির্মাণ করেছেন বা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা বনের ভেতরেই বনের উপাদান ব্যবহার করে এই সেতু নির্মাণের দ্বারা নিঃসন্দেহে একটি ভালো কাজ করেছেন। যদিও এটা এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।

সেতুটি মূলত বনের প্রাকৃতিক উপাদান থেকেই জন্মেছিল। ফিকাস ইলাস্টিক গাছের জঞ্জাল প্রকৃতির শিকড় গুলো নিজেরাই একটা আরেকটার সাথে পেচিয়ে যে কোনো কাঠামো তৈরি করতে পারে। তবে যুদ্ধপরায়ণ দুই উপজাতি যুদ্ধ-খাসি ও যুদ্ধ-জাইন্তিয়াস, এই গাছের শিকড় গুলোকে এরকম একটি সেতু বানানোর লক্ষ্যে নির্দিষ্ট দিকে মুখিয়ে দেয় যার কারণেই মূলত এই সেতুটির প্রায় ৮০-৮৫ শতাংশ নিজে থেকেই তৈরি হয়ে গিয়েছে এবং বাকিটুকুও ধীরে ধীরে পূর্ণ হয়ে যাবে।

প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

ঢাকাটাইমস/১৪এপ্রিল/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :