প্রাণের বৈশাখে করোনামুক্তির আবাহন

'কাল ভয়ংকরের বেশে, এবার ঐ আসে সুন্দর'

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ এপ্রিল ২০২১, ১০:৪৬

আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বাংলা বর্ষ ১৪২৮। আজ নতুন আভা ছড়িয়ে নতুন সূর‌্য উদিত হলো নতুন বছরের পয়গাম নিয়ে। শুভ বাংলা নববর্ষ।

এবার এমন এক দিনে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হচ্ছে যখন সারা দেশ অদৃশ্য এক শত্রু করোনাভাইরাসে ঘরবন্দি। দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন। এর মধ্য দিয়েই আমরা নতুনের আবাহন জানাচ্ছি। প্রাণের বৈশাখে করোনামুক্তির আবাহন- 'কাল ভয়ংকরের বেশে, এবার ঐ আসে সুন্দর।'

পয়লা বৈশাখ সব সংকীর্ণতা, কূপমণ্ডূকতা ছেড়ে আমাদের উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে। মনের সব ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয় এই সর্বজনিন লোকোৎসবে। বর্ণিল আনন্দোচ্ছল পরিবেশে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় ধর্মনির্বিশেষে সব বাঙালি। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক পহেলা বৈশাখ অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে মানবকল্যাণ, শান্তি ও সমৃদ্ধির জয়গান গায়।

আজ ভোরের প্রথম আলোয় নতুনের আবাহনের সঙ্গে আছে ঘাতক করোনাভাইরাসের চোখরাঙানি, যদি না আমরা সতর্ক হই। আমাদের নতুন বছরের সব সম্ভাবনার ফুল ঝরে যাবে যদি না আমরা নিজেদের আত্মরক্ষা করি। করোনাভাইরাস মুক্ত নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা নিয়ে উদযাপিত হোক পহেলা বৈশাখ।

আজ রাজধানী জুড়ে থাকার কথা বর্ষবরণের নানা আয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের মানুষের জীবনে এখন এক অনিশ্চিত সময়। দেশে দ্বিতীয়বারের মতো করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পয়লা বৈশাখসহ সব ধরনের সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। সারা দেশে আজ থেকে সাত দিনের জন্য সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হয়েছে।

এই করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরও আমরা নববর্ষ কাটিয়েছে ঘরবন্দি হয়ে। একাত্তরের পর গত বছর নববর্ষের প্রথম প্রহরে রমনার বটমুলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান হয়নি। একই কারণে এ বছরও ছিল না ছায়ানটের নতুন বছরের বন্দনা। এবার রাজপথে বেরোয়নি হাজারো মানুষের কলকোলাহলে বাদ্যবাজনায় মুখরিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রাও। তবে, ছায়ানটের ১ ঘণ্টার অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছে বিটিভিতে। এর কিছু পরিবেশনা ছিল আগের রেকর্ড করা, কিছু পরিবেশনা ছিল ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সরাসরি।

আর দিনের অন্যতম বর্ণময়, গতিময় ও জমজমাট আয়োজন চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা 'কাল ভয়ংকরের বেশে, এবার ঐ আসে সুন্দর' প্রতিপাদ্যে এবার নিজেদের প্রাঙ্গণে ১০০ জন মিলে প্রতীকীভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর রেকর্ড করা ভিডিও আজ সকাল ৯টায় সম্প্রচার করা হয়। চারুকলার বাইরের দেয়ালে আলপনা আঁকা হয়েছে, চিরায়ত বাংলার নানা অনুষঙ্গে।

পহেলা বৈশাখের উৎসবমুখর আর যত আয়োজন থাকে রাজধানীজুড়ে, প্রতিটি স্থান এবার নিষেধাজ্ঞার কড়াকড়িতে নীরব, রঙহীন। করোনার প্রকোপ থামাতে ঘরে বসেই পহেলা বৈশাখের আনন্দ উপভোগ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের জীবন রক্ষার পাশাপাশি অর্থনীতি, জীবন-জীবিকা যাতে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে না পড়ে সেদিকে আমরা কঠোর দৃষ্টি রাখছি।

এক সময় নববর্ষ পালিত হতো ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। তখন এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির, কারণ কৃষিকাজ ছিল ঋতুনির্ভর। পরে কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে বাংলা সন গণনার শুরু হয়। হিজরি চান্দ্র সন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন।

অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটি পুরোপুরিই একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার। গ্রামে-গঞ্জে-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে তাদের পুরনো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষে তারা নতুন-পুরাতন খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করতেন। চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি আজও উদযাপিত হয়।

মূলত ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথম দিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। এসময় ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়।

আমাদের মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।

(ঢাকাটাইমস/১৪এপ্রিল/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

সংরক্ষিত আসনের এমপিদের মধ্যেও সংখ্যায় এগিয়ে ব্যবসায়ীরা: সুজন

মানবাধিকার ও ভোক্তা অধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা জরুরি: ড. কামাল উদ্দিন

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রেলকে গড়ে তুলতে হবে: রেলমন্ত্রী

ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

জিম্মি নাবিকদের মুক্তির আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডিএনসিসি কার্যালয় সরানোর মধ্য দিয়ে কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু 

বিএসএমএমইউ উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন দীন মোহাম্মদ, বললেন ‘কোনো অন্যায় আবদার শুনব না’

সাত বিভাগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে

বাংলাদেশে মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে সমর্থন অব্যাহত থাকবে: যুক্তরাষ্ট্র

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :