সরকারের ঘোষণার পরও এলপি গ্যাসের বাড়তি দাম

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ এপ্রিল ২০২১, ১৪:০৪

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বাসা-বাড়িতে রান্নায় ব্যবহৃত লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাসের (এলপিজি) দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পরও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রিতে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে।

বুধবার সকালে সরেজমিনে রাজধানীর বনশ্রী, শেখের জায়গা, মুগদা, মান্ডাসহ বেশ কিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে বোতলজাত ১২ ও সাড়ে ১২ কেজির এক একটি এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম রাখা হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।

অথচ বিইআরসির নির্ধারণ করে দেয়া মূল্য অনুযায়ী বেসরকারি খাতে ১২ কেজি সিলিন্ডারের এলপি গ্যাসের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৯৭৫ টাকা। আর রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৯১ টাকা। গত সোমবার (১২ এপ্রিল) অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে সিলিন্ডারের এ দাম নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিমন-বিইআরসি।

সরকার ঘোষিত মূল্যে অতিরিক্ত রাখার কারণ জানতে চাইলে রাজধানী মান্ডা এলাকার ব্যবসায়ী ছাতা এন্টার এন্টারপ্রাইজের মালিক বলেন, আমাদেরও একটা বোতল কেনা ৯৮০ টাকায়। পাঁচ টাকা কমে বেচমু কেমনে? তার উপর লেভার কস্ট, দোকান ভাড়া, বিদুৎ বিল।

এই ব্যবসায়ীর মতো একই যুক্তি প্রায় সব এলপিজির খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের। রশিদুল নামে বনশ্রীর এক ব্যবসায়ী বলেন, ১০ পাঁচ টাকা লাভ করে এলপিজি বিক্রি করা যায় না, এটা তো মুদি মাল না। অনেক খরচা আর পুঁজি লাগছে।

মূল্য নির্ধারণী অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, গণশুনানি শেষে সবকিছু বিচার-বিবেচনা ও দাখিল করা তথ্য যাচাই করে একাধিক সভার মাধ্যমে দাম চূড়ান্ত করেছে কমিশন। এই দাম আজ (১২ এপ্রিল) থেকে কার্যকর হবে।

অন্যদিকে গাড়িতে ব্যবহৃত এলপি গ্যাসের দামও নির্ধারণ করেছে সংস্থাটি। প্রতি লিটার ৪৭ টাকা ৯২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও বিইআরসির আদেশে বলা হয়।

এলপিজি গ্যাসের মূল্য সারাদেশে অভিন্ন থাকবে বলেও জানিয়েছেন বিইআরসি চেয়ারম্যান। একইসঙ্গে সরকার অনুমোদিত বা লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী কমিশনের আদেশ বাস্তবায়ন বাধ্য থাকবে বলেও জানান তিনি।

সরকারিভাবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এলপিজি সরবরাহ করে। বেসরকারিভাবে বসুন্ধরা এলপিজি, এনার্জিপ্যাক, বেক্সিমকো, পেট্রগ্যাজ, যমুনা, টোটাল গ্যাস, ওরিয়ন, নাভানাম ওমেরা এবং বাংলাদেশ অক্সিজেন কোম্পানিসহ (বিওসি) ৪৪টি কোম্পানি বাজারে এলপিজি সরবরাহ করে। এছাড়া, আরও প্রায় একশ কোম্পানিকে এলপিজি সরবরাহের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে

গত বছরের ডিসেম্বরে বিইআরসিতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় এলপি গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো। গণশুনানির আগে তাদের প্রস্তাব মূল্যায়ন করে বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। আর চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ নিয়ে গণশুনানি করে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি।

এলপি গ্যাসের ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২৫৯ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলো। আর রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৬০০ থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা প্রস্তাব করে।

তবে এই প্রসঙ্গে বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ভিন্ন এক প্রস্তাব করে। তাদের প্রস্তাব, বেসরকারি খাতের বোতলজাত গ্যাসের মূল্য ৮৬৬ টাকা ও সরকারি খাতে এলপিজিএলের দাম ৯০২।

বোতলজাত গ্যাসের দাম নির্ধারণে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ২০১৬ সালে রিট আবেদন করে। তাদের আবেদনের ভিত্তিতে এক মাসের মধ্যে গণশুনানির মাধ্যমে দাম পুনর্নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে গত বছরের ২৫ আগস্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত।

উচ্চ আদালতের বেঁধে দেয়া সময়েরে মধ্যে দাম নির্ধারণ করতে না পারায় আদালতের কাছে ক্ষমা চেয়ে সময় বাড়িয়ে নেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।

উচ্চ আদালতের আদেশ এবং এতো দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষার পর বিইআরসি যখন বোতলজাত গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করলো সেটাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গ্রাহকদেও কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা।

ঢাকাটাইমস/১৪এপ্রিল/এসআর/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :