কঠোর অবস্থানে পুলিশ, মুভমেন্ট পাস না পেলে বাসায় ফেরত

প্রকাশ | ১৪ এপ্রিল ২০২১, ১৪:৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

শাওন আহমেদ। মতিঝিলের একটি ব্রোকারেজ হাউজে চাকরি করেন। সরকার ঘোষিত আট দিনের সর্বাত্মক লকডাউনে সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকলেও তার অফিস বন্ধ নেই। সেজন্য বেরিয়ে পড়েন অফিসে যাওয়ার জন্য। সড়কে চলতে যেন বাধা না পান সেজন্য সংগ্রহ করেন ‘মুভমেন্ট পাস’। বেলা ১১টার দিকে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে রিকশাযোগে অফিসের পথে রওনা হওয়ার পর অফিসে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত তাকে পাঁচ জায়গায় পুলিশকে দেখাতে হয়েছে মুভমেন্ট পাস। মোবাইলে ঢাকাটাইমসকে এমনটি জানিয়েছেন শাওন।

শাওন আহমেদ বলেন, অফিসের প্রয়োজনে বেলা ১১টার দিকে মোহাম্মদপুর থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। এর আগে অফিস থেকে আসা যাওয়ার জন্য পাস নিয়েছি। সকালে অফিসে আসতে পাঁচ জায়গায় পুলিশকে ‘মুভমেন্ট পাস’ দেখাতে হয়েছে। পুলিশ অনেক রাস্তা বন্ধ রেখেছে। রিকশাও যেতে দিচ্ছে না। পাস দেখালে ছাড়ছে। না হলে ফিরিয়ে দিচ্ছে। বিকল্প পথও ব্যবহারের সুযোগ কেউ পাচ্ছে না।

শুধু শাওন নয়, জরুরি কাজে যারা ঢাকার সড়কে বের হয়েছেন তাদের সবাইকে পড়তে হচ্ছে পুলিশি তল্লাশিতে। যাদের কাছে পাস নেই তাদের বাসায় ফেরত যেতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দিচ্ছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি মোড়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে পুলিশ ধানমন্ডি সিটি কলেজ, বাটা সিগন্যাল, শাহবাগ, মৎসভবন এবং পল্টন মোড়ের সব রাস্তা বন্ধ রেখেছে। রিক্সা, মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি সবই থামানো হচ্ছে। পাস থাকলে গন্তব্যে পৌঁছানোর সুযোগ মিলছে। না হলে বাসায় ফেরত যেতে হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনকহারে বাড়তে থাকায় আজ থেকে দেশজুড়ে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হয়েছে। ভোর ছয়টা থেকে শুরু হওয়া বিধিনিষেধ আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বহাল থাকবে। সরকারের দেয়া প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার ইত্যাদি অতি জরুরি প্রয়োজনীয় কাজে বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে। তবে, রাজধানীর মূল সড়কগুলোতে মানুষের তেমন দেখা যাচ্ছে না।

চেকপোস্ট তাদারকিতে এসে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির একজন কর্মকর্তা জানান, যৌক্তিক কারণে যারা বাইরে বের হয়েছেন তাদের আমরা ছেড়ে দিচ্ছি। আর মানুষও লাকডাউন মানছে। কারণ, মহামারী থেকে রক্ষা পেতে হলে সবাইকে সতর্ক হতে হবে এবং সরকার ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে সহযোগিতা করতে হবে।

কিছু জায়গা দেখেছি মানুষের সমাগম একদমই নেই। অন্যান্য সময়ের লকডাউন বেশ কঠোরভাবে সবাই মানছে। আজ পহেলা বৈশাখের একটি দিন কিন্তু রাস্তায় মানুষের কোন সমাগম বা আগ্রহ নেই।

লকডাউনের মধ্যে জরুরি কাজে বের হওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ‘মুভমেন্ট পাস’ ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মিলনায়তনে অ্যাপটির উদ্বোধন করেন পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সীমিত কারণে বের হওয়া লাগতে পারে। তারা ‘মুভমেন্ট পাস’ নেবেন। রাস্তাঘাটে কোনো আড্ডা দেবেন না। বিভিন্ন সড়কে, মোড়ে আড্ডা দেবেন না। দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে তরুণেরা কেউ বের হবেন না। বের হতে হলে অবশ্যই দ্রুত ঘরে ফিরতে হবে।’ গাড়ি বের করার বিষয়েও নিরুৎসাহিত করে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই মুভমেন্ট পাস নেবেন।’

ঢাকাটাইমস/১৪এপ্রিল/এসএস/এমআর