বাউফলে মুগডালে লেদা পোকার আক্রমণে দিশেহারা কৃষক

প্রকাশ | ১৪ এপ্রিল ২০২১, ১৭:০৩

কৃষ্ণ কর্মকার, বাউফল (পটুয়াখালী)

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মুগডাল ক্ষেতে লেদা পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পোকার আক্রমণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে একের পর এক ক্ষেত। বিভিন্ন ওষুধ দিয়েও কোনো সুফল না পেয়ে কৃষকরা হতাশ।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলায় ১৮ হাজার ৭৬২ হেক্টর জমিতে মুগ ডালের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চফলনশীল বারি-৩, বারি-৫ ও বারি-৬ প্রজাতির ১৭ হাজার হেক্টর ও দেশি প্রজাতির সোনাইমুগ খ্যাত প্রজাতির এক হাজার ৭৬২ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে।

সরজমিনে উপজেলার কয়েকটি এলাকায় মুগডাল ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, সবুজে সমারোহ প্রতিটা ক্ষেত। কাছে গিয়ে গাছে ছবি তুলতে গিয়েই ছোখে পড়ে লেদা পোকা। পোকাগুলো ক্ষেতের সবখানে ছড়িয়ে পড়ছে। কেটে কেটে ফেলে দিচ্ছে গাছ থেকে ডালগুলো।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, এই পোকাটি খুবই ভয়াবহ। ডালের ছড়ায় ছড়ায় থেকে একাধারে ডাল কাটতে থাকে। দিনের বেলায় ওষুধ প্রয়োগ করতে গেলে গাছের পাতার নীচে গিয়ে লুকিয়ে থাকে।

উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ছোটডালিমা গ্রামের কৃষক সুলতান মাহমুদ বলেন, তিনি এক একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল বারি-৬ প্রজাতির পনেরো কেজি মুগডাল চাষ করেছেন। সর্ব সাকুল্যে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার টাকা। গাছে যেভাবে ফল এসেছিল তাতে প্রতি একরে ডাল পাওয়া যেত কমপক্ষে আট মন, যার বাজার মূল্য কমপক্ষে ২৮ হাজার টাকা। অথচ লেদা পোকার আক্রমণে  ক্ষেতের ডাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রকার ওষুধ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দুই দিন আগেও ক্ষেতটা দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত অথচ পোকার আক্রমণে ক্ষেতটির দিকে তাকানো যায় না। কষ্টে চোখে পানি চলে আসে।

এ অবস্থা শুধু কি সুলতান মাহমুদের একার না। একই গ্রামের আরেক কৃষক বজলু মৃধা। তিনি দেড় একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল বারি-৫ প্রজাতির মুগডাল চাষ করেছেন। এর অধিকাংশই লম্বা-গোলাকৃতির এক ধরনের পোকার উপদ্রবের কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একই অবস্থা পাশের গ্রামের কৃষক শফিক মুন্সির। এবছর তার এক একর ক্ষেতের ৭৫ শতাংশই ডালাই পোকার উপদ্রবে নষ্ট হয়ে গেছে।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি বিভাগের উচিৎ ছিল কোনো এলাকায় ফসলে পোকার উপদ্রব হলে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা সেরকম কোনো ব্যবস্থা নেননি।

অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান হিমু বলেন, মাঠ পর্যায়ের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণেই মুগ ক্ষেতে পোকার আক্রমণ। মুগ ডালের ফলন ভালো হলেও কিছু এলাকায় ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে ডালের ছড়া ঝরে পড়ছে। ওই পোকার সংক্রামণ বেশি হলে ফল বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেকে কৃষি অফিসে যোগাযোগ করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৪এপ্রিল/কেএম)