আমি খসরু স্যারকে অনুসরণ করে চলতাম

শরীফ মাহমুদ অপু
| আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২১, ১১:৪১ | প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল ২০২১, ১০:৫৮

পিতৃতুল্য মানুষকে হারালাম আমি। যিনি আমাকে স্নেহ করতেন; অনেকটা অন্ধ স্নেহ। তাঁর মতো বিশাল হিমালয়ের সামনে যখনই যেতাম অসংখ্য মানুষের মাঝ থেকে আমাকে বলতেন, 'অপু আসছো, বসো।' সবসময়ই মানুষে পরিপূর্ণ থাকতো উনার বাসা, চেম্বার। সবাইকে বিদায় দিয়ে তারপর আমার সঙ্গে কথা বলতেন।

তেমন জরুরি কথা থাকতো বলে বসিয়ে রাখতেন না। জিজ্ঞেস করতেন 'কামাল ভাই (মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) কেমন আছে? প্রধানমন্ত্রী একটা কামের কাম করছে। একটা ভদ্রলোককে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বানাইছে। আস্তে আস্তে কথা কইয়া দেশটারে ক‍্যামনে ঠান্ডা রাখছে দেখছোনি।'

তারপর আব্বার কথা, আমার দুই ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতেন। আমার বড় ছেলে সারীম শরীফতো উনার অনেক আদরের ছিল। আমিও কুশল বিনিময় পযর্ন্তই কথা বলতাম।

আমি উনাকে অনুসরণ করে চলতাম। উনার ব‍্যক্তিত্ব, সর্বস্তরে উনার গ্রহণযোগ্যতা আমাকে মুগ্ধ করতো। আমার জীবনের যতটুকু সফলতা তার পেছনে উনার উৎসাহ, প্রেরণা ও শক্তি ছিল। উনার অনুপ্রেরণা ও সাহস আমাকে জীবনের অনেক চ‍্যালেঞ্জ নিতে সহযোগিতা করেছিল। মনে একটা জোর ছিলো সে যে খসরু স‍্যার আমার সাথে আছে।

যে কোনো ভালো কাজে উনি উৎসাহ দিতেন। বুড়িচং-ব্রাহ্মণ পাড়ার দড়িয়ার পাড় ঈদগা কবরস্থানটির (কুমিল্লার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ এবং কবরস্থান- প্রায় দুই হাজার কবরের স্থান হবে) সংস্কারের কাজ উনার অনুপ্রেরণা ও উৎসাহে সম্পন্ন (প্রায়) করতে পেরেছি আমরা। কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রায়ই গাড়ি থামিয়ে আমাকে ফোন দিয়ে আর কি কি কাজ করতে হবে সে নিদর্শনা দিতেন। এভাবে আমাকে বিভিন্ন উপদেশ দিতেন। কাছে টানতেন। প্রায়ই বলতেন, 'যা ই করবি সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারবি না। আল্লাহর কাছে পাইবি।' কতক্ষণ তুমি করে বলতেন আবার তুই করেও বলতেন।

কিছু ভালোবাসা, স্নেহ অপ্রকাশিত থাকে; শুধু অনুভব করা যায়। উনার জন্মদিনে, বাবা মায়ের মৃত্যু দিবসে বড় অনুষ্ঠান হলেও বাসার সংক্ষিপ্ত ও ছোট অনুষ্ঠানে যখন আমার ডাক পড়ত তখনই আমি অনুভব করতাম তিনি আমাকে কটতা স্নেহ করেন। কারণ আমাদের মধ‍্যে তেমন রাজনৈতিক আলোচনা হতো না; ছিল না কোনো চাওয়া-পাওয়ার হিসাব।

পিতাকে যতটা মানি খসরু স‍্যারকে ততটা মানতাম। একবার কোনো একটি ব‍্যাপারে আব্বাকে ফোন দিয়ে বলেছিলেন, ' জয়নাল ভাই, অপুকে বইলেন যে..........। উত্তরে আমার পিতা বলেছিলেন, অপুতো আমার কথা শুনেই, আমার থেকে বেশি শুনে আপনার কথা।' আজকে হারিয়ে ফেললাম পিতৃতুল্য সেই অভিভাবককে। অনেক কথা বলার ছিলো; সেগুলো অব‍্যক্তই রয়ে গেল।

মৃত্যু অমোঘ সত‍্য। মৃত্যুকে মেনে নিতেই হবে। উনার মৃত্যুটা সইতে কষ্ট হচ্ছে। মৃত্যু শোক সহ‍্য করা কঠিন। সাধারণত আমি একজন কঠিন হৃদয়ের মানুষ। আপনজনের মৃত্যুতে ভেতর ভেঙ্গে গেলেও চোখে জল আসে না আমার। কিন্তু খসরু স‍্যারের মৃত্যুর সংবাদে বাচ্চার মতো কেদেঁ দিয়েছি। পারিনি নিজেকে ধরে রাখতে।

আপাদমস্তক নিরেট ভদ্রলোক মানুষটিকে সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই পরপারে ভালো রাখবেন।

লেখক: শরীফ মাহমুদ অপু, জনসংযোগ কর্মকর্তা

ঢাকাটাইমস/১৫এপ্রিল/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :