শুধু বলি, যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন

মাসুদুজ্জামান
| আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২১, ১২:১২ | প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল ২০২১, ১১:২৫

মার্চের চার তারিখ। মাত্র এক মাস দশ দিন আগের কথা। মনে হলো অনেক দিন বাংলা একাডেমি যাই না, একটু ঘুরে আসি। কবি সরকার আমিন, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান আর গবেষক-কবি মোবারক হোসেনের রুম ঘুরে এলাম মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ভাইয়ের রুমে। তাঁর সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পর হঠাৎ মনে হলো, একবার উঁকি দিয়ে দেখি তো সভাপতি শামসুজ্জামান খান তাঁর রুমে আছেন কিনা।

দরোজা ঠেলেই দেখলাম স্যার আছেন আর যথারীতি কাজ করছেন। স্যার তো আমার সেই কবে থেকে চেনা। একসময় অল্প কিছুদিনের জন্যে তিনি আমার শিক্ষকও ছিলেন। আমার সঙ্গে দেখা হলেই এই কথাটা স্মরণ করতেন। উপস্থিত সবাইকে বলতেন, “ও তো আমার ছাত্র ছিল।”

তিনি যখন মহাপরিচালক কত বার যে ‘উত্তরাধিকার’ পত্রিকায় লেখার জন্যে টেলিফোন করেছেন। স্যারের টেলিফোন পেলে আমার সত্যি ভালো লাগতো। এরকম একজন মানুষের কাছ থেকে লেখার জন্যে টেলিফোন পাওয়াটা কত যে গৌরবের। বাংলা একাডেমিতে সেদিন এসব কথা ভাবতে ভাবতেই স্যারের রুমে ঢুকে পড়লাম। তিনি তার কাজের টেবিল থেকে মুখটা খানিকটা তুলে বললেন, “এসো মাসুদ, এসো।” অনেক কথা হলো ওঁর সঙ্গে। ওঁর লেখালেখি, শারীরিক অবস্থা এইসব নিয়ে।

কথায় কথায় আমি একবার ভীষণ উদ্বেগ প্রকাশ করে বললাম, “স্যার আপনি সাবধানে আছেন তো? করোনা থেকে সাবধানে থাকাটা দরকার। আপনি এই যে অফিসে আসছেন, এভাবে আপনার আসাটা তো বাধ্যতামূলক নয়। অন্যান্য অনেক জায়গাতেও যাচ্ছেন দেখছি। সাবধান হওয়া দরকার, স্যার।” কিন্তু আগের মতোই (আগে একবার ফোনে করোনা নিয়ে কথা হয়েছিল) স্যার বললেন, “কী হবে মাসুদ, যা হবার হবেই। সাহস করে এর মুখোমুখি হতে হবে।”

আমি আর কথা বাড়ালাম না। কিন্তু উদ্বেগটা আমার থেকেই গেল। কথাপ্রসঙ্গে বললাম, স্যার, আপনার সঙ্গে আমার তেমন কোনো ছবি নেই। একবার ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আমি আপনার আমন্ত্রণেই নজরুল মঞ্চের উন্মুক্ত সভায় মূল প্রবন্ধ পড়েছিলাম। আপনি সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সেদিনের সেই অনুষ্ঠানের কিছু ছবি ছাড়া আপনার সঙ্গে আমার কোনো ছবি নেই। আজ আপনার সঙ্গে কিছু ছবি তুলবো। স্যার (যিনি আক্ষরিক অর্থেই আমার শিক্ষক ছিলেন) আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললেন, এসো। স্যারের এক অফিসকর্মী আমাদের ছবি তুলছে, একসময় তিনি আমার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন।

একজন মহান শিক্ষক, স্কলার, লেখক ও গবেষকের এই আশীর্বাদে স্নাত হতে হতে ধন্য বোধ করলাম। বেরিয়ে আসার আগে বললাম, স্যার, আমি একটা ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠান করি। ওই অনুষ্ঠানে একবার আপনাকে পেতে চাই। আপনি আমাদের মুক্তবুদ্ধি আন্দোলনের বিকাশ, এর নানান দিক আর সাম্প্রতিক সংকট নিয়ে কথা বলবেন। স্যার রাজি হলেন। এর কিছু দিন পর যখন ভাবলাম, স্যারকে আমার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাবো, তখনই শুনি তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে। না, আর হলো না, হলো না তো হলোই না। অন্য এক লোকে চলে গেলেন তিনি। প্রফেসর শামসুজ্জামান খানের এই প্রস্থানে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। শুধু বলি, যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন স্যার।

লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক

ঢাকাটাইমস/১৫এপ্রিল/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :