লকডাউনেও পথে মানুষ, নিজেদের স্বার্থেই হতে হবে সতর্ক
লকডাউনের মধ্যেও মানুষ পথে নামছে হরহামেশা। পথে নামার ছুঁতো খুঁজছে। কেউ বাধ্য হয়ে, কেউ আবার ফাঁকা ঢাকা দেখতে। এই শ্রেণির মানুষের কারণে বিপাকে পড়তে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও। বিশেষ প্রয়োজনে যাদের বাইরে বের হতেই হচ্ছে তাদের জন্য মুভমেন্ট পাস ইস্যু করছে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, মুভমেন্ট পাস চালু করার দ্বিতীয় দিনে পাস পেতে আবেদনের জন্য ওয়েবসাইটটিতে হিট পড়েছে প্রায় আট কোটি। এর মধ্যে আবেদনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছেন ৩ লাখ ১০ হাজার জন। আবেদন ইস্যু করা হয়েছে আড়াই লাখ। এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, বাইরে বের হতে মানুষের ব্যাকুলতা কতটা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছরের মার্চে লকডাউনের পর থেকে কয়েক মাসে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যাস গড়ে উঠেছিল। মানুষ করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সতর্ক ছিল। যে যার মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করেছে। এতে করোনায় সংক্রমণের হারও কম হয়েছে। ধীরে ধীরে ভালো অবস্থাতেই যাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হঠাৎ করে সাধারণ মানুষের উদাসীনতা এবং ঢিলেঢালা চলাফেরার জন্য ফের করোনা থাবা ফেলেছে আমাদের যাপিত জীবনে।
বুধবার করোনায় ৯৬ জনের প্রাণহানির খবর এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাধারণ মানুষ করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন না হলে এই হার আরও বাড়বে। এখানে আরও একটি বিষয়কে তারা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। সেটি হচ্ছে, উপসর্গহীন করোনা সংক্রমিত রোগী। যাদের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে অথচ কোনো ধরনের উপসর্গ নেই, তারা হয়তো বিভিন্ন জায়গায় করোনা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন অথচ নিজেরাও বুঝতে পারছেন না।
বিগত কয়েক মাসে সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার না করা, প্রয়োজনীয় স্যানিটাইজ ব্যবস্থার অনুসরণ না করার ফলে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। তাছাড়া মানুষ ইদানীং জনসমাগমেও কোনো বাধানিষেধ মানেনি। এতে সংক্রমণ বেড়েছে।
বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে লকডাউনের মধ্যে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হলেও মানুষ বিকল্প উপায়ে ঠিকই পথে বের হচ্ছে। গণপরিবহন বন্ধ হলেও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছে মানুষ। অনেকে আবার এই ব্যক্তিগত গাড়িকে গণপরিবহনের মতো ব্যবহার করছেন। কয়েকজন মিলে গাড়ি ভাড়া নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। এতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যে নির্দেশনা সরকার দিয়েছে তা ব্যাহত হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতদিন পর্যন্ত মানুষ নিজেরা সচেতন না হবে, নিজেদের জীবনের কথা না চিন্তা করবে ততদিন করোনা ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। যারা নিয়ম মানছেন না তারা ঘরে থাকা তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্যও ঝুঁকির কারণ হচ্ছে। তারা ভাইরাস বয়ে ঘরে এনে তা অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এজন্য নিজে সতর্ক থাকতে হবে শুধু নিজের জন্য নয়, নিজের পরিবারের সদস্যদের জন্যও।
সরকার আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সার্বিক জীবনযাত্রা বা চলাফেরায় যে বিধিনিষেধ দিয়েছে, সেটি শতভাগ মেনে না চললে এই বিধিনিষেধ আরও দীর্ঘ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এতে শুধু যে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাই ব্যাহত হবে তা নয়, মানুষে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে, বাড়বে মৃত্যুর হারও।
(ঢাকাটাইমস/১৫ এপ্রিল/এইচএফ)