মাছ চাষে শাওনের সফলতা

প্রকাশ | ১৫ এপ্রিল ২০২১, ১৩:১০

এসকে হালদার, কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সফল মাছ চাষি শাওন খান। মাছচাষ করে তিনি লাখোপতি হয়েছেন। বর্তমানে তার মাসিক আয় দেড় লাখ টাকা। মাছ বিক্রির টাকায় ১০ বিঘা জমি কিনেছেন, বাড়ি বানিয়েছেন। কিনেছেন একটি মোটরসাইকেলও।

জেলার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের কুশাবাড়ীয়া-চরপাড়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে শাওন খান। বর্তমানে তার মাছের খামারে অনেকেরই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে শাওনকে দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক মাছ চাষ শুরু করেছেন। অনেকেই শাওনের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।

তিনি জানান, গ্রামের স্কুলে তার পড়ালেখার হাতেখড়ি। গ্রামের স্কুল খেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ভর্তি হয় আমলা সদরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে তার পড়ালেখা বাধাগ্রস্থ হয়। সপ্তম শ্রেণিতে উঠার পর শাওন পড়ালেখা বন্ধ করে দেন। পরে আবার পড়াশোনা শুরু করেন। ২০১৫ সালে আমলা সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। শুরু হয় বেকার জীবন যাপন। কিন্ত নিজের বুদ্ধি, মেধা ও সততাকে কাজে লাগিয়ে বেশি দিন তাকে বেকার হয়ে থাকতে হয়নি। হয়ে উঠেছেন একজন সফল মাছ চাষি। 

শাওন বর্তমানে ৬০ বিঘা পুকুরে মাছচাষ করছেন। পৌত্রিক সূত্রে বাবার ১০ বিঘা জমি ছিল। সেইসঙ্গে কিনেছেন আরও জমি।

তিনি বলেন, ‘যখন বেকার জীবনযাপন করছি। ঠিক তখনই এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারি মিরপুর উপজেলায় মাছ চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেই মোতাবেক উপজেলা মৎস্য অফিসে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। এরপর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সহযোগিতায় এক বিঘা পুকুরে মাছচাষ শুরু করি।’

বর্তমানে বছরে তার আয় ৬৫-৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা খরচ হয়। খরচ খরচা বাদ দিয়ে বছরে তার লাভ থাকে ১৫-১৬ লাখ টাকা।

শাওন খান আরো বলেন, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ৬০ বিঘা পুকুরে বিভিন্ন জাতের মাছচাষ করছেন। তার মধ্যে নিজের ২০ বিঘা পুকুর। আর গ্রামের বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ৪০ বিঘা পুকুর ইজারা নিয়েছেন। প্রতি বিঘায় বছরে ২০ হাজার টাকা ইজারা দেন। শাওনের পুকুরে রুই-কাতলা, পাবদা, শিং, মৃগেল, সরপুঁটি, লাইলোটিকা ও সিলভার কার্প রয়েছে।

বাবা গিয়াস উদ্দিন বলেন, উপজেলা মৎস্য অফিসে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরই মাছচাষে উদ্বুদ্ধ হয় শাওন। ২০১৫ সালে আমার ও মৎস্য কর্মকর্তার সহযোগিতা এবং পরামর্শে বাড়ির পাশের এক বিঘা পুকুরে মাছ চাষ শুরু করে। বছর শেষে ভালো লাভ হয়। ২০১৬ সালে মৎস্য অফিস থেকে লোন নিয়ে তিনটি পুকুর ইজারা নিয়ে মাছচাষ করে। ২০১৭ সালে আরও পাঁচটি পুকুরে নেয়।

শাওনের মাছের খামারের কর্মী আইয়ুব আলী, আশিকুল ও মনি বলেন, শাওন খুব কর্মঠ ছেলে। রাতদিন পরিশ্রম করে। তার খামারে আমরা ১১ জন কাজ করি।’

মিরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাজিউল ইসলাম বলেন, ‘শাওন মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। মৎস্য অফিস থেকে শাওনকে সকল প্রকার সাহায্যে সহযোগীতা করা হয়েছে।’

মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন বলেন, ‘শাওন উপজেলার মডেল মাছ চাষী। সে অনেকের কর্মসংন্থান সৃষ্টি করেছে। শাওনের মতো শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি কেউ মাছ চাষ করতে চায়। তাদের উপজেলা মৎস্য অফিস খেকে সব ধরনের সাহায্যে সহযোগীতা করা হবে।’

কুষ্টিয়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাজদার রহমান বলেন, বর্তমানে কুষ্টিয়ার যুবকরা মাছ চাষে ঝুকে পড়েছে। ইতোমধ্যে অনেক বেকার যুবক মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। যারা মাছ চাষ করছেন, তাদের জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১৫এপ্রিল/পিএল)