হাবিব-উন-নবী সোহেল হার না মানা এক বিপ্লবীর প্রতিচ্ছবি

আক্তারুজ্জামান বাচ্চু
| আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২১, ১৩:৩৩ | প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল ২০২১, ১৩:৩০

বিপ্লবী চে গুয়েভারা বলতেন, ‘আসতা লা ভিকতোরিয়া সিয়েম্প্রে।’ ‘বিজয় না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।’

হাবিব-উন-নবী সোহেল। আত্মপ্রচারবিমুখ। বরং আত্মনিবেদনে ভরপুর এবং ভোগবাদী, সুবিধাবাধী ও সিন্ডিকেট রাজনীতির বিপরীতে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত তার রাজনৈতিক জীবন। শত শত মামলার বোঝা কাঁধে নিয়ে কখনো পালিয়ে, কখনো এই জেল থেকে ওই জেলে, দিনের পর পর রিমান্ডে কাটিয়েছেন। তবু নতুন উৎপীড়কদের হাত থেকে দেশের হারানো গণতন্ত্র ও সব রকমের স্বাধীনতা জনগণকে ফিরিয়ে দেয়ার রাজপথের সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন সামনে থেকে। যেন হার না মানা এক বিপ্লবীর প্রতিচ্ছবি!

রাজপথের সংগ্রামেই কেটেছে জীবনের বেশিরভাগ বসন্ত। খুব একটা বৈষয়িক মানুষ নন, সংসার, জেলখানা, শত শত মামলার খরচ ভাবীকেই সামলাতে হয় অনেকটা! পরিবার কাছে পেয়েছে খুব কমই। যখন পেয়েছে তখন কোমরে বুলেটবিদ্ধ হয়ে যন্ত্রনায় কাতর হাসপাতালের বিছানায়! বুলেটের ক্ষত না শুকাতেই করোনা ভাইরাসের হানা পুরো পরিবারে! করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক ভিন্ন সংগ্রামে নেমেছেন। বুলেটের আঘাতের ক্ষত আর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েও অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে কাতরাতে কাতরাতে হাজির হতে হয়েছে আদালতে। অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্ত মানুষটি সময়ের সেরা বক্তা, রাজনীতি এবং রাজনীতির বাইরেও তুমুল জনপ্রিয়। অদম্য সাহস ও প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান অথচ এত বিনয়ী মানুষ আমি খুব দেখিনি। দীর্ঘদিন একসাথে আন্দোলন-সংগ্রাম ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুবাধে সম্পর্কটা রাজনীতির গন্ডি পেরিয়ে পারিবারিক পর্যায়ে গড়িয়েছে। আমার রাজনীতি অপছন্দ করা স্ত্রীও বলে, সোহেল ভাইয়ের মত মানুষ হয় না! নেতাকর্মীর সম্পর্ক এখন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। বহু রাজনৈতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে এক সাথে কাটিয়েছি। কখনো হতাশ হওয়া বা হাল ছাড়তে দেখিনি, অসম্ভব আশাবাদী মানুষ। অন্ধকার খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েও আশার আলো দেখেন সোহেল ভাই।

স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, ১/১১ সেনাশাসিত মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারবিরোধী আন্দোলন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাতের নির্বাচন পূর্ববর্তী-পরবর্তী আন্দোলন এবং ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়ার দিনসহ সব সময় রাজপথে নিজের জীবন বাজি রাখা এক সংগ্রামীর নাম হাবিব-উন-নবী সোহেল। আর কেউ রাজপথে নামুক আর না নামুক হাবিব-উন-নবী সোহেল ঠিকই নামেন!

সোহেল-সপু-বাবু ভাইয়ের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক দল মিছিলে-স্লোগানে-রাজপথে যে ভূমিকা রাখে তা দলের শীর্ষনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল স্যার প্রথম আলো পত্রিকায় একটি কলামে লিখেছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান নেতৃত্ব দেখিয়েছে সংগঠন কিভাবে গড়তে হয়! স্বেচ্ছাসেবক দলে সোহেল ভাই ছিলেন ঐক্য ও অনুপ্রেরণার প্রতীক। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে অবরোধ চলাকালীন সময়ে মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলে একটু জটিলতার কারণে আন্দোলনে ঘাটতি হবে ভেবে সোহেল ভাই চিন্তিত ছিলেন! একদিন আমাকে কিছু দায়িত্ব দিলেন। সোহেল-সপু-বাবু ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় সহকর্মীদের নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগঠনের জন্য কাজ করতে কুন্ঠাবোধ করিনি!

রংপুরে একবার জাপানি নাগরিক হোসি কুনিও খুন হন! সোহেল ভাইয়ের ছোট ভাই রাশেদ-উন-নবী বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করা হলো। অনেকগুলো জাতীয় দৈনিকে ও ক’টি টেলিভিশনে সোহেল ভাইকে মূল আসামি ঈঙ্গিত করে নিউজ করে! আমাকে সোহেল ভাই সাংবাদিকের সাথে কথা বলতে বলায় তাদের সাথে কথা বলে যেটি জানতে পারলাম যে তারা করেননি। বিশেষ একটি সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ছাপিয়ে দিয়েছে! সোহেল ভাই হয়ে গেলেন মোস্ট ওয়ান্ডেট পলাতক আসামি! পরে অবশ্য এই মামলার চার্জশিট থেকে উনার নাম বাদ দেয়া হয়েছিল।

সোহেল ভাইকে বিগত ১৪ বছর যাবৎ গুম, খুনের শঙ্কা নিয়ে কখনো পালিয়ে, কখনো রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে রাজপথে, কখনোবা জেলে থাকতে হয়েছে! মুক্ত আলো-বাতাসে খুব বেশিদিন থাকতে পারেননি! যখন যেভাবেই থেকেছেন, কখনো হাল ছাড়েননি, দলের জন্য শতভাগ করার চেষ্টা করেছেন। রাজনীতি-ই ধ্যান-জ্ঞান! আর সে কারণেই হয়ত দলের শীর্ষ নেত্রী থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অকৃত্রিম ভালোবাসাও পেয়েছেন।

রাজনীতি ও পলাতক জীবনে সোহেল ভাইয়ের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোর বেশিরভাগই ছিল উত্তেজনা, উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার। আমাকে বেশি টেনশন করতে দেখলে ভাই বলতেন, বাচ্চু এত টেনশন করো না, যা হওয়ার হবে! গান শোনো, টেনশন কিছুটা হালকা হবে! এত খারাপ সময়ও মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে গেছেন যে সব সওয়া হয়ে গেছেন অনেকটা! সব সইতে পারলেও, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতে নেয়ার ক্ষণটির অপেক্ষা, আর একাদশ সংসদ নির্বাচনে উপেক্ষা উনার সইতে কষ্টই হয়েছে!

৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়া হযরত শাহজালালের (র.) মাজার জিয়ারত করতে গিয়েছিলেন। সোহেল ভাইকে ধরার জন্যে হন্যে হয়ে খুঁজছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, অথচ উনি সিলেটে গিয়ে হাজির! ম্যাডাম সোহেল ভাইকে দেখে চিন্তায় পড়ে গেলেন। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে উনি ম্যাডামের বহর থেকে বেরিয়ে অন্য পথে আসার সময় কয়েকবার পুলিশি তল্লাশিতে পড়েও কৌশলে নিরাপদে ঢাকায় ফেরেন। কিন্তু ৬ ফেব্রুয়ারি রাত ২টার দিকে কিছু টিভি চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ আসতে থাকলো যে ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী সোহেলকে মালিবাগ থেকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ! সবাই ধরেই নিয়েছেন সোহেল ভাই গ্রেপ্তার হয়েছেন, এমনকি ভাবীও! আমি ওইদিন সিলেট যাইনি। ভাবী খবর শুনে আমাকে হোয়াটসএ্যাপে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কখন গ্রেপ্তার হয়েছে? আমি তখন ভাইয়ের সাথে না থাকায় বললাম আমি সাথে নেই, খবর নিয়ে জানাচ্ছি। আমি খবর নিয়ে কনফার্ম হলাম উনি গ্রেপ্তার হননি। ভাবীকে জানালাম সব ঠিক আছে। মহাসচিব স্যার, রিজভী ভাইয়ের সাথে কথা বলে যেসব সাংবাদিক গ্রেপ্তারের নিউজ টিভির স্ক্রলে দিয়েছে তাদের ও এনটিভির ইমরুল আহসান জনি, বাংলাভিশনের সিকান্দার রেমানসহ অনেককেই হোয়াটসএ্যাপে জানালাম যে সোহেল ভাই গ্রেপ্তার হননি। বলে রাখা ভাল গ্রেপ্তার এড়ানোর কৌশল হিসাবে সোহেল ভাই বেশিরভাগ সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না, পরিবারের কারো মোবাইলে কথা বলতেন না। ওই রাতে সোহেল ভাই নিকুঞ্ছে এক জায়গায় ছিলেন, সাথে উনার এক কাজিন ছিল।

একদিন পর ৮ ফেব্রুয়ারি ম্যাডামের মামলার চুড়ান্ত রায়, অন্যদিকে সোহেল ভাইয়ের গ্রেপ্তারের খবর ভাসছে বেশির ভাগ টিভি চ্যানেলে! সোহেল ভাই গ্রেপ্তার হননি এটা আমি ও ভাবী রিজভী ভাইকে জানিয়েছিলাম। তারপরেও কৌশলগত কারণে হয়ত ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে রিজভী ভাই সংবাদ সম্মেলন করে সোহেল ভাইয়ের সন্ধান চাইলেন! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবেও গ্রেপ্তারের ইঙ্গিত দিলেন!

৭ ফেব্রুয়ারি। সোহেল ভাইকে আমি আমার মত একটি জায়গায় নিয়ে আত্মগোপন করি। মোবাইল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। উনি সিদ্ধান্ত নিলেন ওইদিন আর বাইরে বের হবেন না। সন্ধ্যায় সোহেল ভাই আমাকে বললেন, বাচ্চু বাইরে দূরে কোথাও গিয়ে সব অঙ্গ সংগঠনের সভাপতি/সাধারণ ও শিরিন আপার সাথে আমার রেফরেন্সে বল যেকোনো মূল্যে ম্যাডামের বহরে ঢুকতে হবে, সবাই যেন প্রস্তুত থাকে। উনি দু’টি বিকল্প রুটের কথা জানাতেও বললেন। আমি বাইরে গিয়ে সবার সাথে যথারীতি কথা বলি। বাবু ভাইকে সোহেল ভাইয়ের পরামর্শ জানিয়ে বললাম যে সোহেল ভাই বলেছেন, দুটি বিকল্প রুটের কথা চিন্তা করে নেতা-কর্মীদের হাতিরঝিল, মগবাজার রেললাইনসহ এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে বলেছেন, আর রুট চেঞ্জ হলেও যাতে ম্যাডামের সাথে নেতা-কর্মী থাকে সেজন্য মহাখালী রেল ক্রসিং, কারওয়ানবাজার ও শাহবাগ, বারডেম, পিজি হাসপাতালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নিতে বলেছেন। বাবু ভাই শুধু বললেন, শাহবাগ এলাকাটা ইউনিভার্সিটির কাছে একটু রিস্কি, একবার এ্যানি ভাইয়ের উপর হামলা হয়েছিল! তারপরেও যেকোনো মূল্যে ম্যাডামের বহরে ঢুকতে হবে। শিরিন আপাকে সোহেল ভাইয়ের নির্দেশনা জানানোর পর উনি বললেন, আমিও থাকবো, আর সোহেল ভাইকে বলো যে তোমার ভাইও (খোকন ভাই) থাকবে। নিরব ভাই শুধু বললেন, সব ঠিক আছে, ম্যাডামের গাড়ি যদি খুব জোরে টেনে যায় তাহলেতো নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে পারবে না। আমি মহাসচিব স্যারকে পরিকল্পনা অনুযায়ী অঙ্গ-সংগঠনসহ সবার প্রস্তুতির কথা জানিয়ে ম্যাডামের গাড়ি যাতে ধীরে চলে সেই অনুরোধ করি।

তখন রাত সাড়ে সাতটা। মহাসচিব স্যার বললেন সব ঠিক আছে। কিন্তু সোহেল সাহেবের গ্রেপ্তার নিয়ে তুমি আমাকে জানানোর পর আমি কোনো কথা বলিনি। ম্যাডামকেও বলেছি যে সোহেল সাহেব গ্রেপ্তার হননি। তারপরেও উনি আমাকে একটা হোয়াটসএ্যাপ নাম্বার দিয়ে বললেন যে সোহেল সাহেব যেন এখনি ম্যাডামের সাথে কথা বলেন। আমি ফিরে গিয়ে সোহেল ভাইকে সব বলার পর সোহেল ভাইকে নিয়ে বের হয়ে এক জায়গায় গিয়ে চেষ্টা করেও ম্যাডামের সাথে যোগাযোগ করা গেল না! তখন রাত ৯টা প্রায়। রাত ৮: ৩৮ এ ম্যাডামের বাড়ির সামনে প্রশাসন জ্যামার বসানোয় ম্যাডামের সাথে কথা বলতে না পেরে সোহেল ভাইয়ের মনটা খুব খারাপ হলো। ভাই মহাসচিব স্যারকে জানালেন যে ম্যাডামের সাথে কথা বলা যায়নি!

সোহেল ভাই বিষন্ন মনে ফিরে আসলেন। প্রথম দিকে সোহেল ভাই মনে করেছিলেন যে ম্যাডামকে হয়ত জেলে নেবে না। পরে যখন বুঝতে পারলেন ম্যাডামকে জেলে নিয়ে যাবে, একদিকে গ্রেফতার নাটক, অন্যদিকে কথা বলতে পারেননি। সারারাত ঘুমাতে পারেননি! একটু পরপর ছটফট ছটফট করেছেন। সোহেল ভাইকে এমন উদ্বিগ্ন হতে এর আগে কখনো দেখিনি।

একটাই চিন্তা যেকোনো মূল্যে ম্যাডামের বহরে ঢুকতে হবে। রাত ৩টার দিকে ভাই আমাকে জিজ্ঞেস বললেন, বাচ্চু কী হবে? আমি বললাম ভাই টেনশন করবেন না! আপনার রাজনৈতিক জীবনে অনেক বিপদে পড়েছেন, প্রত্যেকবার আল্লাহ সহায় ছিলেন, এবারও আল্লাহ সহায় হবেন। সব পুলিশি বেষ্টনীআর ব্যারিকেড ভেঙে আপনি ম্যাডামের সামনে ঠিকই থাকবেন।

৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। আল্লাহর উপর ভরসা করে খুব সকালেই সোহেল ভাই বেরিয়ে পড়লেন। হাতিরঝিল-তেজগাঁও-সাতরাস্তা-মহাখালী-বনানী যেদিকে যাই, পুলিশের যুদ্ধংদেহী অবস্থা আর আওয়ামী লীগের লোকজন কোথাও লাঠি-সোটা-রড নিয়ে পাহারা দিচ্ছে, কোথাও কোথাও পোলাও- বিরিয়ানি খাচ্ছে গাড়িতে বসে দেখলাম! আমরা বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মেইন রোডের কাছে একটা জায়গায় গাড়িতে বসে খোঁজ-খবর নিচ্ছি ম্যাডামকে কোন পথে নিয়ে যাবে। জানতে পারলাম, ম্যাডামকে নিয়ে গুলশানের বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। গুলশান-তেজগাঁও-মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের পাশের রাস্তা হয়ে মগবাজার দিয়ে নিয়ে যাবে আদালতে।

সোহেল ভাইকে বহনকারী গাড়ি বনানী থেকে রওয়ানা হয়ে মহাখালী বাসস্টান্ডের ঠিক সামনে এসেই আটকে গেল। রাস্তা আটকিয়ে একদিকে পুলিশের কড়া পাহারা, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ লাঠি-সোঁটা-রড নিয়ে পুলিশের নাকের ডগায় মহড়া দিচ্ছে! ম্যাডাম তখনো আসতে দেরী। সোহেল ভাই গাড়ি থেকে নামলে গ্রেফতারতো হবেন-ই, আওয়ামীলীগ ও শ্রমিক লীগের হামলার শিকারও হবেন নিশ্চিত। গাড়িতে এসি চলছিল, কিন্তু সোহেল ভাই ঘামছিলেন! এরই মধ্যে আমাকে সঞ্জয় ও শিপন ফোন দিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা কই? ওরা বললো মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের উল্টোদিকে। উল্টোদিকের রাস্তায়ও প্রচুর পুলিশ, তবে রাস্তাটি আটকায়নি। আমি বললাম তোমাদের গাড়িটা ঠিক মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের উল্টোদিকে দ্রুত নিয়ে আসো, আমি রাস্তার মাঝখানের ডিভাইডারে দাঁড়ালাম। ওরা গাড়ি নিয়ে আসামাত্রই আমাদের গাড়ির দরজাটা খুলে সোহেল ভাইকে ঐ গাড়িতে তুলে মহাখালী-ফার্মগেট- হাইকোর্ট-প্রেসক্লাব হয়ে মগবাজার সিগনালে এসে থামলাম।

কতক্ষণ পর ম্যাডামের গাড়ি আসছে দেখে নেতা-কর্মীসহ সোহেল ভাইকে নিয়ে পুলিশি বেষ্টনি ভেঙে একেবারে ম্যাডামের গাড়ির সামনে। এরপরতো ইতিহাস! হাজার হাজার নেতা-কর্মী মুহূর্তের মধ্যে বাধ ভাঙা জোয়ারের মত আসতে থাকলো। হাজারো নেতা-কর্মীদের ঠেলাঠেলিতে এক সময় মনে হলো আমি আর শ্বাস নিতে পারছি না, সোহেল ভাইয়ের পা ম্যাডামের গাড়ির চাকার নিচে পড়ে সোহেল ভাইয়ের পা ফুলে গেল। পুলিশের কয়েক স্তরের বেস্টনি ভেদ করে সকল অপেক্ষা, উদ্বেগ, উৎকন্ঠার অবসান ঘটিয়ে ম্যাডামের সাথে সোহেল ভাইসহ আমরা থাকতে পারায় পুলিশের গ্রেফতার নাটকেরও অবসান হয়েছিল সেদিন!

একটি উপেক্ষার কথা বলেই শেষ করবো। সোহেল ভাই তখন জেলে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোহেল ভাই মনোনয়ন চাইলেন। ডিসি অফিসের লম্বা প্রসিডিউর শেষ করে কেরানিগঞ্জ জেলখানার প্রসিডিউর শেষ করে রাতে কাশিমপুর কারাগারে পৌছে দেখি উনাকে আকস্মিক রিমান্ডে নিয়ে গেছে ডিবি অফিসে! জেল সুপার বললেন, আসামিতো আমার কাছে নাই, সিগনেচার নেয়ার সুযোগও নাই! যাক নানা দেন-দরবার ও কায়দা-কানুন করে ডিবি থেকে কোর্টে তুলে জেলখানায় নিয়ে পরদিন মনোনয়ন ফরমে উনার সিগনেচার নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিলাম। কিন্তু উনাকে মনোনয়ন দেয়া হলো না! এই উপেক্ষা উনি সইতে পারেননি! পরদিন উনাকে কোর্টে আনা হলো। সোহেল ভাইয়ের মত দৃঢ়চেতা মানুষকেও সেদিন অনেকটা বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছিল, যেন পা টলছিল! সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন, নো কমেন্টস! পরিবারের সবাই খুব হতাশ হয়েছিল।

তারপরেও দলের প্রতি সোহেল ভাইয়ের আনুগত্য ও কমিটমেন্টের কোনো ঘাটতি দেখিনি। উনার মত আজন্ম বিপ্লবী ও আশাবাদী নেতৃত্ব দল ও দেশের জন্য খুব প্রয়োজন। সোহেল ভাই, আপনার মত মানসিক শক্তিতে বলীয়ান মানুষের কাছে করোনা পরাজিত হবে। আল্লাহর রহমতে আপনার পরিবারের সবাই সেরে উঠবেন। দ্রুতই আপনি ফিরে আসবেন সবার মাঝে ইনশাল্লাহ। দেশনায়ক তারে রহমানের নির্দেশনায় আপনার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী চেতনা পূনরুজ্জীবিত হবে, রাজপথে মুক্তির সংগ্রাম শানিত হবে, স্বৈরতন্ত্রের অবসান হবে, জনগণ তাদের কাঙ্খিত গণতন্ত্র ফিরে পাবে।

লেখক: যুগ্ম আহ্বায়ক, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :