দু’মুঠো ভাতের অভাব শিক্ষক মুজিবুর রহমানের

প্রকাশ | ১৫ এপ্রিল ২০২১, ১৩:৪৮ | আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২১, ১৪:৪৮

নূরে আলম সিদ্দিকী নূর, বিরামপুর, দিনাজপুর

মুজিবুর রহমান মন্ডল। দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার ২নং মুকুন্দপুর ইউনিয়নের পটুয়াকোল গ্রামের বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ৮০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ ১৯৮০ সালে চাকরি নিয়েছিলেন জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার বলিভদ্রপুর দাখিল মাদ্রাসা। কারি পদে দীর্ঘ ৩৪ বছর চাকরি করে ২০১৪ সালে অবসর নেন। তারপর থেকেই এই শিক্ষকের জীবন পড়েছে অভাবে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, এখন দুমুঠো ভাতের জন্য ঘুরতে হয় মানুষের দ্বারে দ্বারে। আর গত দুই মাস ধরে অসুস্থ থাকায় সেই উপায়ও নেই। অনাহারে-অর্ধাহারেই দিন কাটে তার।

স্থানীয়রা জানান, মুজিবুর রহমান যখন অবসরে যান তখন সরকারের তরফ থেকে এককালীন কিছু টাকা পেলেও তা দিয়ে ব্যাংক ঋণের অংশবিশেষ পরিশোধ ও মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বসত ভিটা ছাড়া আর কোনো জমিজমা নেই মুজিবুর রহমানের। তবে ১২ শতকের সেই জমির অর্ধেক মোহরানা হিসেবে দিয়েছেন স্ত্রীকে। বাকি অর্ধেক লিখে দিয়েছেন ছেলে আবুল কালামকে। সেই জমিতে টিনের ছাউনি দেয়া এক ঝুঁপড়ি ঘরেই থাকেন।

সংসারে অভাব-অনটন যখন নিত্যসঙ্গী তখন মাথার ওপর এক লাখেরও বেশি টাকার ব্যাংক ঋণ চেপে রয়েছে। এ ঋণ কীভাবে শোধ দেবেন সেই চিন্তায় মাঝেমধ্যে ভেঙে পড়েন বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মুজিবুর রহমান।

গত কয়েক মাস আগেও তিনি পেটের জন্য দু’মুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতে শুক্রবার করে এলাকার বিভিন্ন মসজিদে-মসজিদে গিয়ে সাহায্যের জন্য হাত পাততেন। একজন ভালো শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় তার জনপ্রিয়তা থাকায় অনেকেই তার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ হলো দুই হাত-পায়ে ব্যথার কারণে তিনি আর বাইরে চলাফেরা করতে পারছেন না। করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে লকডাউন ঘোষণায় তিনি অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছেন।

সংসারে অভাবের কথা বলতে গিয়ে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘যখন গায়ে শক্তি ছিল তখন বাড়ি থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে সাইকেল চালিয়ে মাদ্রাসায় চাকরি করেছি। অবসর নেওয়ার পর থেকেই রোগে-শোকে আর আগের মত চলাফেরা করতে পারি না। নিজের কোনো জমাজমি নাই। কোনো আয়-রোজগারও নাই, তার উপর আবার ব্যাংক ঋণের বোঝা। এসব মনে পড়লে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। আল্লাহর দয়ায় কোনোমতে বেঁচে আছি।’

মুকুন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ আলী মাস্টার বলেন, “মুজিবুর রহমান অত্যন্ত ভালো মানুষ। অবসর নেয়ার পর তিনি আর্থিক অনটনে অনেকটাই অসহায় পড়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের নিকট অনুরোধ করছি, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মুজিবুর রহমানের মত একজন ভূমিহীন ও অসহায় মানষকে সরকার থেকে মুজিব শতবর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে একটি বাড়ি দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিমল কুমার সরকার বলেন, “আমাদের সমাজে একজন মানুষ গড়া কারিগরের জীবনের শেষ সময়ে এসে এরকম ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক যা আমাদের কারো কাম্য নয়। এই মুহূর্তে সরকার থেকে শিক্ষক মুজিবুর রহমান মন্ডলের জন্য আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সরকারিভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বাড়ি করে দেওয়ার বরাদ্দ আসলে তার জন্য বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে। আর অন্য কোনোভাবে সরকারি সুযোগসুবিধা দেওয়ার সুযোগ থাকলে তা অবশ্যই তাকে দেয়ার চেষ্টা করা হবে।’

ঢাকাটাইমস/১৫ এপ্রিল/পিএল