মিল্কী হত্যা মামলার আসামিরা কে কোথায়?

প্রকাশ | ১৬ এপ্রিল ২০২১, ০৮:৪১ | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২১, ০৯:১৫

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস

প্রায় আট বছর আগে রাজধানীর গুলশানে ফিল্মি স্টাইলে খুন করা হয় 

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কীকে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটির ১৮ আসামির মধ্যে চারজন পলাতক রয়েছেন। বাকি ১৪ জন আছেন জামিনে। আলোচিত এই মামলার বিচারকাজ এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। 

পলাতক চার আসামির মধ্যে প্রধান আসামি সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল আমেরিকায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া মিল্কীর ড্রাইভারের স্ত্রী ফাহমিদা ইসলাম লোপাসহ তিন আসামি জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছেন। তাদের ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই মামলাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারো কাছে।

নিহত রিয়াজুল হক খান মিল্কীর একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, আসামিদের মধ্যে ১৪ জন নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিলেও চারজন পলাতক রয়েছেন। তাদের মধ্যে লোপাকে ২০১৩ সালের ৩ আগস্ট গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০১৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তাকে ছয় মাসের জামিন দেয় হাইকোর্ট। এরপর পলাতক হন তিনি।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার বিচার চলছে ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে। এই মামলায় নিহত মিল্কীর ছোট ভাই ও মামলার বাদী মেজর রাশেদুল হক খান এবং মিল্কীর গাড়ি চালক মারুফ রেজা সাগরসহ তিনজন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে রিয়াজুল হক খান মিল্কীকে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার ছোটভাই মেজর রাশেদুল হক খান বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটির প্রথম তদন্তের দায়িত্ব পান র‌্যাবের সহকারী পুলিশ কাজেমুর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল ১১ জনকে অভিযুক্ত করে তিনি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দেন মামলার বাদী। পরে  আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের সিআইডিকে নির্দেশ দেন। ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস অধিকতর তদন্তে আরও সাতজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

মামলায় চার্জশিটভুক্ত ১৮ আসামি হলেন সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, সোহেল মাহমুদ ওরফে সোহেল ভূঁইয়া, চুন্নু মিয়া, আরিফ ওরফে আরিফ হোসেন, সাহিদুল ইসলাম, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, জাহাঙ্গীর মণ্ডল, ফাহিমা ইসলাম লোপা, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, শরীফ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে পাপ্পু, তুহিন রহমান ফাহিম, সৈয়দ মুজতবা আলী প্রকাশ রুমী, মোহাম্মদ রাশেদ মাহমুদ ওরফে আলী হোসেন রাশেদ ওরফে মাহমুদ, সাইদুল ইসলাম ওরফে নুরুজ্জামান, সুজন হাওলাদার, ডা. দেওয়ান মো. ফরিদউদ্দৌলা ওরফে পাপ্পু ও মামুন উর রশীদ। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে লোপাসহ ছয়জন বিভিন্ন সময় আদালতে স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

অন্যদিকে মামলার শুরু থেকেই পলাতক এই মামলার অন্যতম প্রধান আসামি ঢাকা মহানগর যুবলীগের (উত্তর) তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া অপর দুই আসামি শরিফ উদ্দীন চৌধুরী পাপ্পু ও সৈয়দ মুজতবা আলীর ব্যাপারে কোনো তথ্য জানা যায়নি।

ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই মামলায় এখন সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। তবে আসামিরা এখন কে কোথায় রয়েছে তা মামলার নথি না দেখে বলতে পারবো না।’

হত্যাকাণ্ডের পর ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে গুলশান থানায় মামলা করেন মিল্কীর ভাই মেজর রাশেদুল হক খান। আর হত্যাকাণ্ডের পর যুবলীগের (দক্ষিণ) যুগ্ম সম্পাদক এস এম জাহিদ সিদ্দিক তারেক ও চঞ্চলকে আওয়ামী যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের পর ২৯ জুলাই তারেককে উত্তরার ফরচুনা হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরদিন ৩০ জুলাই র‌্যাবের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান তারেক।

হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার বিষয়ে মামলার চার্জশিটে বলা হয়, রিয়াজুল হক খান মিল্কীর দ্রুত রাজনৈতিক উত্থান হয় এবং মতিঝিল এজিবি কলোনি এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। একারণে আসামি তারেক ওরফে কিলার তারেকের (ক্রসফায়ারে নিহত) এককভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে, পূর্ব মতিঝিল ডিভিশন, ডিপিডিসি, বিএডিসি, খাদ্য, সিএমএমইউ, ক্রীড়া পরিষদ, কৃষিসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে টেন্ডারগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই মিল্পীকে তারেক একমাত্র পথের কাঁটা মনে করে একাধিকবার হত্যার উদ্যোগ নেন। তবে প্রতিবারই তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় মতিঝিল এলাকার বাইরে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কিলার তারেক মিল্কীর ড্রাইভার সাগরের স্ত্রী আসামি লোপার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। লোপার মাধ্যমে মিল্কীর অবস্থান জেনেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উত্তম কুমার বিশ্বাস ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এখন মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। শুনেছি বাদী ও নিহত মিল্কীর গাড়িচালক মারুফ রেজা সাগরসহ তিনজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আমি এখনো সাক্ষ্য দেয়ার চিঠি পাইনি। আমি এই মামলার সর্বশেষ সাক্ষী।’

(ঢাকাটাইমস/১৬এপ্রিল/এএ/জেবি)