কোথায় লুকোলেন হারিছ চৌধুরী?

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২১, ১২:১১ | প্রকাশিত : ১৬ এপ্রিল ২০২১, ১২:০৯

কোথায় আছেন হারিছ চৌধুরী? সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দাপুটে এই রাজনৈতিক সচিব এখন লাপাত্তা। তিনি কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন, জানেন না দলের নেতাকর্মীরা। সিলেট বিএনপির নেতারা বলছেন, হারিছ চৌধুরী বিদেশে আছেন, এমন তথ্য চাউর আছে। কিন্তু কোন দেশে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলতে পারবে না কেউ। শোনা যায়, তিনি লন্ডনে আছেন। যদিও তার সঙ্গে দেশের কারো যোগাযোগ নেই বলে দাবি হারিছের একসময়ের রাজনৈতিক সহকর্মীদের।

বিএনপি নেতারা বলছেন, একাধিক মামলার সাজা মাথায় থাকায় কার্যত নিরুদ্দেশ হয়ে আছেন একসময়ে ‘হাওয়া ভবনে’র এই কুশীলব।

নিজ জেলা সিলেট বিএনপির রাজনীতিতেও আলোচনায় নেই হারিছ চৌধুরী। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার কারণে সিলেটের স্থানীয় রাজনীতিতে তত সক্রিয় ছিলেন না হারিছ চৌধুরী। ফলে তার অনুপস্থিতি খুব একটা ভাবাচ্ছে না তাদের।

সিলেট মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘হারিছ চৌধুরী নিজের জীবন বাঁচাতে দেশ ছাড়ার পর কোথায় কীভাবে আছেন, কেমন আছেন আমরা জানি না। দেশ থেকে চলে গেছেন এটাই জানি। আশা করি তিনি যেখানে আছেন, ভালো আছেন।’

সিলেটের রাজনীতিতে হারিছ চৌধুরী আলোচনায় আছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক আমলে নতুন নতুন নেতার তৈরি হয়। যেখানে ইলিয়াস আলীর মতো নেতা কোথায় আছেন জানি না, সেখানে হারিছ চৌধুরী আসলে আলোচনায় নেই। কারণ ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। তাই ইলিয়াস আলীকে অনুভব করলেও হারিছ চৌধুরীকে সেইভাবে নেতাকর্মীরাও অনুভব করে না।’

কবে থেকে খোঁজ নেই?

বিএনপির ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ক্ষমতাকালীন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন হারিছ চৌধুরী। অভিযোগ আছে, দায়িত্ব অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে বসলেও তার প্রভাব বিস্তারের উৎস ছিল আলোচিত ‘হাওয়া ভবন’কে ঘিরে। তবে দাপুটে হারিছ চৌধুরী ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ইয়াজউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার গঠনের পর থেকে হঠাৎ লাপাত্তা হয়ে যান।

একযুগেরও বেশি সময় পার হয়েছে অথচ এক সময়ের দাপুটে হারিছ চৌধুরী কোথায় আছেন, জীবিত না মৃত তাও কেউ জানে না। অনেক নেতার গুম-নিখোঁজ ইস্যুতে দলীয় কর্মসূচি বা বক্তৃতা বিবৃতি থাকলেও হারিছ চৌধুরীর কথা কাউকে মুখে নিতেও দেখা যায় না।

তবে সিলেটে বিএনপির নেতাকর্মীদের মুখে এক ধরনের আলোচনা আছে যে, দেশ ছাড়ার পর ভারতের পাঞ্জাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করলেও পরে লন্ডনে যান হারিছ চৌধুরী। এর বাইরে ইরানে যাওয়া-আসা করার খবরও শোনা গেছে।

হারিছ চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায়। তার নানাবাড়ি ভারতের করিমগঞ্জে। নানাবাড়িতে যাওয়া-আসার সুবাদে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল সম্পর্কে আগে থেকেই জানাশোনা ছিল তার। তাই দেশ ছাড়ার পর পাঞ্জাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে থিতু হয়েছিলেন এমনটা শোনা গেলেও সেটা বেশ আগের খবর। সবশেষ তথ্য নেই কারো কাছে।

আছে তার অসুস্থতার খবরও। একসময় গণমাধ্যমে তার মুখভর্তি দাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। হারিছ চৌধুরী ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন এমন খবরও শোনা গেছে। এজন্য নিয়মিত রক্ত পরিবর্তন করতে হয়।

২০১৪ এবং ২০১৫ সালে দুইবার তিনি আমেরিকাতে চিকিৎসা করালেও আরোগ্য লাভ হয়নি বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।

ছিল দেশে আসার গুঞ্জনও:

বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশ ছাড়ার পর বিভিন্ন সময়ে দেশে ফেরার চেষ্টা করেছেন হারিছ চৌধুরী। ২০১০ সালে একবার দেশে ফেরার পরিকল্পনা করেও পিছু হটেন। পরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় জড়ানোর আগেও একবার দেশে আসতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে মামলায় জড়ানোয় আর দেশে আসা হয়নি।

আলোচিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সিলেট-১ আসনে হারিছ চৌধুরীকে প্রার্থী করার দাবি জানিয়ে পোস্টারিং করেছিলেন তার শুভানুধ্যায়ীরা। তিনিও চেয়েছিলেন দেশে ফিরে নির্বাচনে অংশ নিতে। কিন্তু বিএনপি সে নির্বাচন বর্জন করায় তার দেশে ফেরা ভেস্তে যায়।

ঝুলছে তার সাজার খড়গ:

দেশজুড়ে আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর।

একইবছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটাবল ট্রাস্ট ‍দুর্নীতি মামলায় হারিছ চৌধুরীর সাতবছরের জেল ও দশ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে। এই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও সাজা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১১ সালের আগস্টে তেজগাঁও থানায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অজ্ঞাত সূত্র থেকে টাকা সংগ্রহের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়ার সঙ্গে হারিছ চৌধুরীসহ আরও তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

এদিকে গত বছরের ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যার এক মামলায় হারিছ চৌধুরী, সিলেটের মেয়রসহ ২৮ জনের জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৬এপ্রিল/বিইউ/এইচএফ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

রং মাখানো তুলি কাগজ ছুঁলেই হয়ে উঠছে একেকটা তিমিরবিনাশি গল্প

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :