বাংলায় ইসলাম প্রচারে সাফল্য একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ: আকবর আলি খান

প্রকাশ | ১৬ এপ্রিল ২০২১, ১৬:০৪

আবু বকর সিদ্দিক

আকবর আলী খানের এই বইটি বাংলার ইসলাম কিভাবে প্রচার এবং প্রসার হয়েছিল এই বিষয়ে অতি বিখ্যাত একটি বই।  আপনারা যারা বাংলাদেশের ইতিহাস খুঁজেন কিংবা বাংলা এবং বাঙালির ইতিহাস জানার চেষ্টা করেন তাদের জন্য একটা মাস্টারপিস বই এটি। আমি প্রথমেই নির্দ্বিধায় বলে দিতে পারি আপনারা চোখ বুঝে পড়তে পারেন৷

বাংলায় ইসলাম ধর্ম কিভাবে প্রচার লাভ করেছে তা নিয়ে দেশি-বিদেশি পন্ডিত ও গবেষকদের নানা মত রয়েছে। এসব মতামত এবং তার পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সেগুলো একটা জায়গায় উপস্থাপন করতে চেয়েছেন লেখক।আমার মতো যারা ইতিহাস নিয়ে চর্চা করতে পছন্দ করেন কিংবা বাংলাদেশের ইতিহাস জানার চেষ্টা করেন এবং ইসলাম নিয়ে চর্চা করতে চান তাদের জন্য অবশ্য একটা পাঠ বই এটি।

এই উপমহাদেশে কিভাবে ইসলাম এসেছে বিশেষ করে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় কিভাবে ইসলাম প্রচার হয়েছে এবং প্রসার হয়েছে সেসব বিষয়ে আকবর আলি খান বিস্তর আলোচনা করেছেন। তিনি বিভিন্ন ইনফরমেশন তথ্য উপাত্ত প্রমাণসহ পেশ করেছেন। তিনি বেশ কিছু  লেখা রেফারেন্স দিয়েছেন। তাঁর এইসব তথ্য বইটিকে অতি শক্তিশালী একটি বইয়ে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছে।

বইটিতে আকবর আলি খান কিভাবে বাংলার মুসলমান সমাজ এক এক করে সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে তার বিস্তর আলোচনা করেছেন। লেখক  দেখাতে চেয়েছেন কীভাবে  ব্যাবসায়িক খাতিরে  এখানে এসে অনেকেই থেকে গিয়েছে। ব্যবসায়িক স্বার্থে এখানে অনেকেই বিয়ে-শাদী করেছে। এরপর ধর্মান্তরিত হয়েছে এসব থেকে ধর্ম বিস্তার হয়েছে। আবার কখনও কখনও হিন্দু ধর্মের লোকেরা নিজেদেরকে একটা সামাজিক অবস্থান এবং শান্তি মত জীবন পরিচালনার জন্য তারা ধর্মান্তরিত হয়েছে। এছাড়াও আরও দেখা গিয়েছে যে,  যেসকল উপজাতীয় ছিল তারা নিজেদের সুবিধার্থে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে।

১৮৭২ সালের আদমশুমারি আগে বাংলায় ইসলাম প্রচারের সাফল্য নিয়ে ঐতিহাসিক কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। বিশ্বাস করা হতো যে, বাংলা এবং বাঙ্গালি প্রদেশ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মতো একটা হিন্দু প্রধান দেশ ছিল।  ১৮৭২ সালের প্রথম আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেখা যায় যে, বাংলায় প্রায় ৫০  শতাংশ লোক মুসলমান। বিশেষ করে বাংলার মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ২১ দশমিক ৭ শতাংশ মুসলমান।বাংলাদেশের বেশির ভাগ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসাবে প্রমাণ মিলে।

একটা তো আমার কাছে খুব অবাক লেগেছে উনিশ শতকে সারা বিশ্বে প্রায় ২০  কোটি মুসলমান ছিল। এর মধ্যে শুধু ভারতেই ছিল প্রায় ৬  কোটি ২১  লাখ মুসলমান। অর্থাৎ গোটা পৃথিবীতে মুসলমান ছিল যা তার মধ্যে ভারতের নাগরিক ছিল তার প্রায় ৩০ শতাংশ। সত্যিকার অর্থে এই তথ্যটা আমাদের বাঙালি মুসলমানদের জন্য একটা আলাদা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কেননা সারা পৃথিবীতে যেখানে এত মুসলমান ছিল না শুধুমাত্র ভারতবর্ষেই তখনকার সময়ে প্রচুর মুসলমানদের জনসমাগম ঘটেছিল।

এটি পড়ে আমার কাছে যা মনে হয়েছে। ইতিহাস ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে আমি যা পেলাম বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারে কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৭০০ বছর পর্যন্ত সময় লেগেছে।

শুধুমাত্র বইটির রিভিউ লিখতে গেলে একটা পুরোপুরি প্রবন্ধ হয়ে যাবে। আমি সে দিকে যেতে চাচ্ছি না। শুধু একটা মাত্র বিষয়ে আমার বলার দরকার যে, আকবর আলি খান এই বইটিতে খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কিভাবে কাদের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার এবং প্রসার হয়েছিল।  অনেক সময় গ্রাম অঞ্চলের মানুষেরা নিরাপত্তার জন্য একসাথে থাকতে চেষ্টা করেছ। বিভিন্ন অর্থনৈতিক কারণে কেউ কেউ ধর্মান্তরিত হয়েছে। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে অনেকে ধর্মান্তরিত করেছেন বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।

১৮ শতকের আগ পর্যন্ত বাংলার এই অঞ্চলে কিভাবে ইসলাম প্রচার হয়েছিল এর আদৌ কোনো রেফারেন্স কেউ পায় নি। ব্রিটিশ পিরিয়ডে যখন তারা আদমশুমারি করেছিল তখন থেকেই বাস্তবে এর একটা তত্ত্ব বের হয়ে এসেছিল। কিভাবে এই অঞ্চলে এতো মুসলমান একসাথে হলো তা বিস্তর আলাপ হয়েছে৷ অনেক লেখালেখি হয়েছে কিন্তু কেউ সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেন নি।

তখনকার সময়ে উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলমানদের সমাগম হয়েছে এই বাঙালি পাড়ায়। তবে আমার অবজারভেশন বলছে বেশিরভাগেরই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার মূলে ছিল পীর-মাশায়েখদের প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা।  নিজেদের জীবনের স্বাচ্ছন্দ ফিরিয়ে আনার জন্য তারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন।

হযরত খানজাহান আলী হযরত শাহজালাল থেকে শুরু করে প্রমুখ পীরদের কথা এই বইটিতে বিস্তর আকারে আলোচনা করা হয়েছে। তারা কিভাবে ইসলাম প্রচারে এই মুল্লুকে বিশাল বড় অবদান রেখেছেন তাও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে পেশ করা হয়েছে।

আকবর আলি খান অনেক  গবেষণা করে এই বইটি পাঠকের সামনে দাঁড় করিয়েছেন তা এক নিমিষেই বইটি হাতে  নিলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

বইটি যারা ইতিহাস চর্চা করতে চান কিংবা সমাজবিজ্ঞান বা রাষ্ট্র বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করেন বা নৃতত্ত্ব নিয়ে যাদের আগ্রহ তারা অবশ্যই পাঠ করবেন।

আমি আকবর আলী খানের নেক হায়াত কামনা করছি। সবাইকে ধন্যবাদ।

পাঠ পর্যালোচনাঃ আবু বকর সিদ্দিক, লেখক ও সংগঠক

ঢাকাটাইমস/১৬এপ্রিল/এসকেএস