লকডাউনে আয়ের বিকল্প উৎস ‘ঘুড়ি বিক্রি’

মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর)
 | প্রকাশিত : ১৬ এপ্রিল ২০২১, ১৬:০৭

করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারি ঘোষণায় দেশে ‘কঠোর’ লকডাউন চলছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের আয়-রোজগারের পথ। সংসারের খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন লাখো-কোটি নিম্ন আয়ের মানুষ। করোনা দুর্যোগের এই সময় অনেকেই বাধ্য হয়ে খুঁজে নিয়েছেন বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ।

লকডাউনে অবসর সময় কাটাতে শুরু হয়েছে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব। আর এই ঘুড়ি উৎসবকে কাজে লাগিয়ে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে ঘুড়ি বিক্রি করে বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করেছেন অনেকে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলার সদর ইউনিয়নের জাটিগ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব দিনমজুর ইলিয়াস শেখ তাদেরই একজন। দিনমজুরের কাজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে তিনি ঘুড়ি বিক্রি করছেন। তা দিয়েই চলছে তার সংসার। গত বছর দেশে যখন করোনাভাইরাস হানা দেয় তখন থেকেই তিনি এই ঘুড়ি বিক্রি শুরু করেন। এরপর করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে তিনি আবার দিনমজুরের কাজে ফিরে যান। এবছর নতুন করে করোনার ঢেউ শুরু হলে তিনি আবার শুরু করেন ঘুড়ি বিক্রি।

ইলিয়াস শেখ তার ভাষায় বলেন, ‘আগে কাম-কাজ কইরা সংসার চালাইতাম। কিন্তু কিছুদিন আগে লকডাউন দেয়ার পরে বেকার হইয়ে পড়ি। তহন দেহি অনেকেই শখ কইরা ঘুন্নি (ঘুড়ি) উড়াইয়া সময় কাটাচ্ছে। তাই আমিও শখ কইরা একটা ঘুন্নি বানাইয়া কয়েকদিন উড়াই। এইডা দেইখ্যা গ্রামের একজন তার বাচ্চার লাইগ্যা একটা ঘুন্নি বানাই দিতে বলে। পরে তারে একটি ঘুন্নি (ঘুড়ি) বানাই দেই। পরে তিনি খরচের কিছু টাকা দেন। এর পরেই ঘুন্নির ব্যবসার চিন্তাডা মাথায় আইছে।’

ইলিয়াস শেখ জানান, শৈশবে ঘুড়ি বানানোর কলা-কৌশল রপ্ত করেছিলেন। গত বছর করোনায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৬০০ ঘুড়ি বানিয়ে বিক্রি করেছেন তিনি। কিন্তু এ বছর ঘুড়ি বিক্রির চাহিদা একটু কম। তারপরেও গত কয়েক সপ্তাহে ১০০টি ঘুড়ি বিক্রি করেছেন তিনি। ঘুড়ি ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে ইতোমধ্যে জাটিগ্রাম বাজারে একটি দোকানঘরও ভাড়া করেছেন তিনি। এখন তিনি দোকানে বসে ঘুড়ি তৈরি ও বিক্রি করেন। ঘুড়িগুলো তৈরি করে দোকানেই সাজিয়ে রাখেন।

চার-পাঁচ রকমের ঘুড়ি বানাতে পারেন ইলিয়াস। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চলছে পতেঙ্গা ঘুড়ি, চিল ঘুড়ি ও বক্স ঘুড়ি। আকার ভেদে একেকটি ঘুড়ির দাম পড়ে ৩০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া অনেকে আগাম বলে বড় সাইজের ঘুড়িও বানিয়ে নিচ্ছেন। সেগুলোর দাম আরেকটু বেশি।

ঘুড়ি বানাতে তিনি পলিথিন পেপার ব্যবহার করেন। এতে ঘুড়ি টেকসই হয়। বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয় না। বাতাসেও ছিঁড়ে না। পলিথিন ছাড়াও বাঁশ এবং সুতা বাবদ অল্পকিছু খরচ পড়ে। সামান্য এই খরচ বাদে পুরোটাই লাভ হিসেবে থাকে তার।

শুধু জাটিগ্রামের বাসিন্দারাই নন, দূর-দুরান্ত থেকেও অনেক সৌখিন লোক এসে তার কাছ থেকে ঘুড়ি সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।

আলফাডাঙ্গা উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম আহাদুল হাসান বলেন, ‘শুধু ইলিয়াস মোল্যা না, তার মতো আরও অনেকেই ঘুড়ি বানিয়ে বিক্রি করছেন। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন ঘোষণার পর মানুষ যখন হঠাৎ ঘরবন্দি হয়ে পড়ে, ঠিক তখনই আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক হারে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব শুরু হয়। লকডাউন প্রত্যাহারের পরও তা অব্যাহত থাকে।’

গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ঘুড়ি বানানো হচ্ছে। শুধু দিনে না, রাতের আকাশেও উড়ছে শত শত রং-বেরংয়ের ঘুড়ি। অনেকে আবার ‘সনাতন ঘুড়ি’কে ইলেক্ট্রনিক প্রযুক্তির সহায়তায় ‘ডিজিটাল ঘুড়ি’তে রূপান্তর করছেন। মোবাইল ফোনের ব্যাটারির সাহায্যে ঘুড়ির ফ্রেমে যুক্ত করছেন রং-বেরংয়ের ইলেক্ট্রনিক বাতি। এর ফলে রাতের আকাশে একেকটি ঘুড়ি দেখতে উজ্জ্বল তারার মতো মনে হয়। বর্ণিল আলোকরশ্মি ছড়িয়ে জ্বলজ্বল করে।

শুধু তরুণরাই নয়, বয়স্ক নারী-পুরুষ সবাই যোগ দিচ্ছেন ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসবে। ঘুড়ি উড়িয়ে ঘরবন্দি থাকার একঘেয়েমিকে দূর করছেন তারা।

(ঢাকাটাইমস/১৬এপ্রিল/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :