তেজ কমেনি বেগুন-শসার!
রমজান এলেই চাহিদা বাড়ে বেগুনের। কারণ ইফতারের অন্যতম অনুসঙ্গ হিসেবে অনেকেই বেগুনি পছন্দ করেন। কিন্তু অন্য সময় সাধ্যের মধ্যে বেগুন কেনা গেলেও রোজা এলেই এতে অনেকটা আগুন ধরে যায়! কখনো দ্বিগুণ, সুযোগ বুঝে তিনগুণও দাম বেড়ে যায় এই সবজির।
মহামারি করোনাকালেও বেগুনের দাম সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ৩০ থেকে ৪০ টাকায় যে বেগুন কেনা যেত রমজান শুরুর আগে, এখন তা ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। অবশ্য শুক্রবারে কিছুটা কমে ৮০ টাকায়ও কিনতে পেরেছেন ক্রেতারা। শুধু বেগুন নয়, ইফতার সামগ্রীর সঙ্গে শসাও অনেকের পছন্দের। সেটির দামও বেড়েছে অনেক। ভালো মানের শসা ৭০ টাকার নিচে মিলছে না।
লক্ষ্মীবাজারে সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে ভ্যানে সবজি বিক্রেতা শরিফুল ইসলামের সঙ্গে অনেক দেনদরবার করেও ৬০ টাকায় এক কেজি শসা নিতে পারেননি বেসরকারি চাকরিজীবী মনির হোসেন। দোকানির সাফ কথা, ৭০ টাকার নিচে শসা বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। পরে এক কেজির বদলে আধা কেজি শসা কিনে বাসায় ফিরেছেন মনির হোসেন।
শুক্রবার রাজধানীর একাধিক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শুধু বেগুন আর শসাই নয়, বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম রোজার আগের থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
অবশ্য কেন দাম বেশি এর কোনো সদুত্তর নেই বিক্রেতাদের কাছে। অজুহাত লকডাউনে সরবারহ কম। যদিও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বুধবার থেকে শুরু হওয়া সর্বাত্মক লকডাউনে নিত্যপণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত যানবাহন চলাচলে কোনো বাধা নেই। বরং এসব যানবাহন থেকে কোনো চাঁদা নেয়া হলে বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক।
পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার ও লক্ষ্মীবাজার এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রোজার প্রথম দিন থেকে শুরু হওয়া নিত্যপণ্যের বাজারে দামের উত্তাপ এখনো বহাল আছে। নির্দেশনা অনুযায়ী মূল সড়কের পাশে অনেকে সবজির দোকান বসিয়েছেন।
ইফতারিকে কেন্দ্র করে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি সেগুলোর পাশাপাশি অন্য তরকারির দাম বেশি দেখা গেছে। লেবুর দামও বেড়েছে অনেক।
তবে গতকাল থেকে শুক্রবার লেবুর দাম হালিপ্রতি কিছুটা কমেছে। বড় সাইজের লেবু হালি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। আবার মাঝারি মানের এলাচি লেবু ডজন ৬০ টাকায় বিক্রি করেছেন কেউ কেউ।
বুধবার থেকে রোজা ও কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। এই সুযোগে সবজির বাজারে দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা অভিযোগ করেন, গত সোমবার রাজধানীর বাজারে বেগুন ও শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় কিনেছেন। এখন ৯০ থেকে ১০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। বাজারে সবচেয়ে কম দামি সবজি টমেটোর কেজিও ৫০ টাকায় পৌঁছেছে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলু ও পেঁপে ছাড়া বেশিরভাগ সবজির দাম বেশি। আলু কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং পেঁপে ৩৫-৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
তবে বাজারগুলোতে পালং শাক, লাল শাক, ডাটা শাকের দাম তুলনামূলক কম দেখা গেছে।
এদিকে মাছের বাজারও বেশ চড়া দেখা গেছে। লক্ষ্মীবাজারে ভ্যানে করে মাছ বিক্রেতা জামাল উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, রুই মাছ ২৮০ টাকা করে কেজি, পোয়া মাছ সাড়ে তিনশ টাকা, ফলি মাছ সাড়ে তিনশ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
নিত্যপণ্যের এমন চড়া মূল্য নিয়ে ক্ষোভ আছে ক্রেতা সাধারণের। দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এইভাবে চললে মানুষ খাইবো কী? দিন দিন শুধু দাম বাড়ে। দেখবার কেউ নাই।’
অন্যদিকে সবধরনের দেশি-বিদেশি ফলেরও দাম বেশ চড়া দেখা গেছে। খেজুর, আপেল, মাল্টা, আঙুরের দামি আগের থেকে বেশি। মানভেদে খেজুর এক হাজার টাকা কেজি চাইছেন বিক্রেতারা। আবার দেড়শ টাকাও বিক্রি করছেন কিছু খেজুর।
আঙুর ২০০ টাকার নিচে মিলছে না। মাল্টা ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা পর্ন্ত বিক্রি হচ্ছে। আপেল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা পর্ন্ত দামে ওঠানামা করছে বলে জানিয়েছেন বিক্রিতারা।
আর তরমুজ ওজন দিয়ে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা। সে হিসেবে মোটামুটি মানের তরমুজ দেড়শ টাকার নিচে মিলছে না। বাঙিও বিক্রি হচ্ছে অনেক দামে। পিস প্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গ্রীষ্মের এই ফলটি।
এছাড়া ভালোমানের সবরি কলা ৫০ টাকা হালি বিক্রি করতে দেখা গেছে। মাঝারি মানের কলা ৪০ আর আকারে ছোট কলা ২৫ থেকে ৩০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে চাম্পা কলা ডজন ৪৫ টাকা, সাগর কলা ডজন ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
(ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/বিইউ/জেবি)