হাসপাতাল আছে, সেবা নেই

মিজানুর রহমান রিয়াদ, নোয়াখালী
 | প্রকাশিত : ১৬ এপ্রিল ২০২১, ১৬:২১

সৌদি সরকারের আর্থিক অনুদানে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার ঘোষবাগ ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০ শয্যার আধুনিক চর আলগী হাসপাতাল। হাসপাতলটি প্রতিষ্ঠার পর এলাকার প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের আধুনিক চিকিৎসা সেবার আশা জাগলেও ২০ বছরেও তা পূরণ হয়নি। নিয়মিত থাকেন না কোনো চিকিৎসক বা সেবিকা। আছে যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদিরও অভাব। একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটিও এখন করোনার নমুনা পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সম্প্রতি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতলটির ২০টি বেডই খালি পড়ে আছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ বেডই অনেক দিন ব্যবহার করা হয়নি। দুই তলা বিশিষ্ট হাসপাতালটির বেশির ভাগ কক্ষে ঝুলছে তালা। নিচতলার বহিঃবিভাগে একজন অফিস সহকারি, একজন ওয়ার্ডবয়, দ্বিতীয় তলায় একজন মেডিকেল অফিসার ও একজন সেবিকাকে দেখা যায়। কোন রোগী না থাকায় অলস সময় পার করছেন তারা। তারা জানান, দীর্ঘদিন পর্যন্ত ব্যবহার না থাকায় নষ্ট হয়েগেছে আল্ট্রাসনোগ্রাফি, এক্স-রে ও ইসিজি মেশিনসহ মূলবান আধুনিক যন্ত্রপাতি। এছাড়াও শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অপারেশন থিয়েটার (ওটি) সকল মূল্যবান যন্ত্রপাতি পুরোপুরিভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে একবারও ব্যবহার করা হয়নি এটি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে একজন আরএমও, পাঁচজন মেডিকেল অফিসার, ছয়জন সেবিকা ও চারজন ওয়ার্ডবয়সহ ৩২জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়ে যাত্রা শুরু করে হাসপাতালটি। যার মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৫জন। আর চিকিৎসা সেবায় একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, একজন মেডিকেল অফিসার, একজন সেবিকা বর্তমানে হাসপাতালে আছেন। এদের মধ্যে জরুরি সেবায় আছেন মাত্র একজন মেডিকেল অফিসার ও একজন সেবিকা।

প্রতিদিন হাসপাতালের বহিঃবিভাগে ছোট খাট সমস্য নিয়ে রোগিরা আসে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যায়। আবার বড় ধরনের কোনো সমস্যা হলে রোগীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা জেলা সদর হাসপাতালে চলে যায়। অজ্ঞাত কারণে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের আগ্রহ নেই বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে দেখা যায়, গত মার্চ মাসের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আবাসিক ও বহিঃবিভাগে ১ হাজার ১৭২জন রোগী আসেন। যার মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৩২জন রোগী। সবশেষ গত ৪ এপ্রিল একজন রোগী ভর্তি হওয়ার পর ৮ এপ্রিল ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালটিতে চিকিৎসক নিয়োগ কাগজে কলমে থাকলেও তারা নিয়মিত আসেন না। কয়েকজন মাঝে মাঝে আসলেও হাসপাতালে ১-২ঘন্টার বেশি থাকেন না। আরএমও বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আসেন আবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চলে যান। হাসপাতালটিতে পুর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা চালু করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।

হাসপাতালের বাইরে দেখা গেছে, হাসপাতালের সিঁড়িতে পড়ে আছে কর্তব্যরত চিকিৎসকের লেখা কয়েকটি ওষুধের স্লিপ। স্থানীয়রা বলছেন, হাসপাতাল থেকে ওষুধ না দেওয়ায় রোগীরা স্লিপগুলো ফেলে দিয়ে গেছে। বড় রোগের চিকিৎসাতো দূরের কথা ছোট-খাট রোগের চিকিৎসা করতে এলেও তাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ পাওয়া যায় না।

হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মহিবুল আলম জনবল সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, জনবল ছাড়াও পানি সংকট, চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট, বিদ্যুৎ সমস্যা, জেনারেটর মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। তারপরও শুরু থেকে চিকিৎসা সেবা উন্নতি করার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন গড়ে ৭০-৮০জন রোগীকে আমরা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। যার মধ্যে ৫-৬জন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানান, হাসপাতলটির বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে ইতোমধ্যে আমরা অবগত হয়েছি। জনবল সংকটের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওষুধের সমস্যটি সমাধান করা হবে। ইসিজি মেশিনের ব্যবস্থা করা হবে। পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি হাসপাতালটিতে পুনঃস্থাপন করে জনগনের শতবাগ সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকদের সঙ্গে হাসপাতালটির কর্মচারীদের যোগসাজ থাকারও অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন জানিয়ে সিভিল সার্জন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/১৬এপ্রিল/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :