আবারও কোরিয়ার ভিসা নিষেধাজ্ঞার কবলে বাংলাদেশ

প্রকাশ | ১৬ এপ্রিল ২০২১, ২৩:০৩

মোহাম্মদ হানিফ, দক্ষিণ কোরিয়া

বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য আবারও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। শুক্রবার সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাসের দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় আগত যাত্রীদের মধ্যে কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্তের হার বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আজ শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।’

সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ থেকে করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় এসে করোনা পরীক্ষায় যাত্রীদের অনেকের পজিটিভ ধরা পড়ায় কোরিয়া সরকারের এমন কঠিন নিষেধাজ্ঞা।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে চিঠি পাওয়ার পরই বাংলাদেশ দূতাবাস এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

গত দুই মাসে দেশ থেকে নেগেটিভ সনদ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছে করোনা পরীক্ষায় বাংলাদেশিদের অনেকের ফল পজিটিভ এসেছে। সেই কারণেই কোরিয়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে এ দেশের সরকার।

তবে নিষেধাজ্ঞার পূর্বাভাস দিয়েছিলো গত ৫ এপ্রিল মঙ্গলবার ঢাকার দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাসের দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে। যেখানে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। যা কোরিয়ান কর্তৃপক্ষের জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছিল কোরিয়ার পক্ষ থেকে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ফেব্রুয়ারিতে নিষেধাজ্ঞা ওঠার পর মার্চে ১৭ জন ও চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ১৬ জন বাংলাদেশ থেকে করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে কোরিয়া গিয়ে পরীক্ষায় পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে, বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) সূত্র মোট ১৯ জনের পজিটিভ হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে।

গত বছরের ২৩ জুন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর নতুন ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ বিমান চলাচল স্থগিত করে কোরিয়া সরকার। এর ফলে কোরিয়া গমনেচ্ছু বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং ইপিএস কর্মীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে ।

এরপর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে প্রায় আট মাস পর চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি তা প্রত্যাহারে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। কিন্তু আবারও সেই একই নিষেধাজ্ঞার কারণে শিক্ষা ও কর্মজীবন হুমকির মুখে ইপিএস কর্মীসহ   বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের।

প্রবাসী সাংবাদিক ওমর ফারুক হিমেল বলেন, অতীত নিষেধাজ্ঞা থেকে কেউ শিক্ষা নেননি বিধায় আবারও এমন পরিস্থিতির মুখমুখি হতে হয়েছে। সংস্থাগুলো যদি আন্তরিক হতো, তাহলে আজ আবারও এমন নিষেধাজ্ঞা আসত না।

তিনি বলেন, কোরিয়ায় যাওয়ার পর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পরও কিন্তু কোনো সংস্থার টনক নড়তে দেখছি না। অথচ কোরিয়া দূতাবাস আমাদের সর্তক, সচেতন করার জন্য এগিয়ে এসেছে। তারাও চাইছে না নিষেধাজ্ঞা। তাদের বিজ্ঞপ্তি শেয়ার দিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসও সর্তক করেছে। কিন্তু, বৈদেশিক শ্রমবাজার কর্মযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত প্রধান সংস্থাগুলো একেবারেই নির্বিকার, এমনকি কোরিয়ান দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরও কারও সাড়া নেই।

(ঢাকাটাইমস/১৬এপ্রিল/কেএম)