`ধানকাটা‘ শ্রমিকদের রাতভর আটকে রাখে পুলিশ!

প্রকাশ | ১৭ এপ্রিল ২০২১, ২১:৩৮ | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২১, ২৩:১৪

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

চাহিদা মতো টাকা না দেয়ায় রাতভর ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বলে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন শতাধিক ধানকাটা শ্রমিক।

শুক্রবার জেলা কৃষি অফিসের অনুমতিপত্র নিয়ে দুটি ট্রাকে করে পাবনা থেকে হবিগঞ্জে ধান কাটতে যাচ্ছিলেন  তারা। তবে পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কঠোর বিধিনিষেধ মানাতেই ট্রাক আটকে দেয়া হয়েছে।

পাবনার আতাইকুলা এলাকার ৬৫ বছরের বৃদ্ধ রবিউল ইসলাম। জীবিকার তাগিদে অনেকের সাথে ধান কাটা শ্রমিক হিসেবে যাচ্ছিলেন হবিগঞ্জে। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ তাদের বহনকৃত দুটি ট্রাক আটকে দেয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।

রবিউল অভিযোগ করে বলেন, এই বৃদ্ধ বয়সে শুধুমাত্র পেটের দায়ে বিদেশের বাড়িতে ধান কাটতে যাচ্ছি। যদি আটকেই দেবে তখন এলাকাতেই আটকে দিত। থানা, পুলিশ, প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই তো আমরা ধান কাটতে যাচ্ছি। এই বৃদ্ধ বয়সে কয় বেলা না খেয়ে থাকা যায়? এখন জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলেই বাঁচি। সেখানেই না হয় পরিবারের সাথে না খেয়ে মরব।

কঠোর বিধিনিষেধে সবকিছু বন্ধ থাকায় তার মতো আরো ১২০ জন কৃষি শ্রমিক রাতভর নানা ভোগান্তির শিকার হন বলে অভিযোগ করেন। তারা বলেন, পাবনা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে কোন সমস্যা হয়নি। এলেঙ্গা আসার পর পুলিশ তাদের ট্রাক আটকে দেয়।

এসময় টাকা দাবি করে টাকা দিতে না পারায় ট্রাক দুটি থানার সামনে নিয়ে আসে। রাতে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে। না খেয়ে রাত থেকে কষ্ট করতে হচ্ছে। পায়খানা-প্রসাবের জায়গা না থাকায় কষ্ট আরো কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। আমরা এখন কি করব কিছুই বুঝতি পারছি না।

তারা আরো বলেন, কাজ না থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছিলাম। তাই আমাদের উপজেলা কৃষি অফিসার ও চেয়ারম্যানের প্রত্যায়নপত্র নিয়ে ধান কাটতে হবিগঞ্জের দিকে যাচ্ছিলাম। পুলিশ আমাদের অনুমতিপত্র জব্দ করে রেখেছে।

ট্রাকচালক উজ্জ্বল মিয়া বলেন, শুক্রবার বিকালে পাবনা থেকে রওনা দিয়েছি। রাত ১১টার দিকে এলেঙ্গা আসলে পুলিশ এক অফিসার টাকা দাবি করে। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা ট্রাকের সব শ্রমিক নামিয়ে দিতে বলেন। শ্রমিকদের বাসে যেতে বলেন। পরে অপর এক পুলিশ অফিসার এসে শ্রমিকসহ ট্রাক ফাঁড়িতে নিয়ে আসেন। গাড়ির কাগজপত্র পুলিশ জব্দ করেছে।

পাবনা সদর কৃষি অফিসার হাসান রশিদ হোসাইনী বলেন, তাদের অনুমতিপত্র দেওয়া আছে। তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে রিকুয়েস্ট করেছি। পুলিশ হয়তো বা আইনগতভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু মানবিক দৃষ্টিতে কাজটি তেমন ভাল হয়নি। আরেকটি বাস ব্যবস্থা করে পুলিশ তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সহযোগিতা করতে পারত।

এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত টাকা দাবির বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, ‘শ্রমিকরা একটি ট্রাকে ৪৮ ও অপর ট্রাকে ৭২ জন শ্রমিক বহন করছিল। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে তারা গন্তব্যে যাচ্ছিল।

এছাড়া শুক্রবার মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হন। সবকিছু মিলিয়ে সরকারি কঠোর বিধিনিষেধের আদেশ পরিপন্থী কাজ করায় তাদের ট্রাক আটক করা হয়েছে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাসের ব্যবস্থা করে দিতে চাইলে তারা রাজি হয়নি। পরে তাদের পুলিশের নিজস্ব অর্থায়নে গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/এলএ)