মির্জা আব্বাসের বক্তব্য নিয়ে বিএনপিতে তোলপাড়!

প্রকাশ | ১৮ এপ্রিল ২০২১, ১৩:২৭ | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২১, ১৩:৩৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দলের প্রভাবশালী নেতা এম ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের পর থেকে বিএনপি এর জন্য সরকারকে দায়ী করে আসছে। পরিবারের পক্ষ থেকেও সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে। তার সন্ধান দাবিতে হরতালসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন। 

এমন অবস্থার মধ্যে হঠাৎ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দাবি করেছেন, সরকার নয়, বিএনপির লোকজন ইলিয়াস গুমের সঙ্গে জড়িত। তার এমন বক্তব্যে দলের ভেতরে বাইরে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

শনিবার এক অনুষ্ঠানে যখন তিনি এই কথা বলেন সে অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব, ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ছাড়াও তার সময়কার সাবেক ছাত্র নেতারা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

মির্জা আব্বাস এমন দাবি করে জড়িত দলের লোকদের খুঁজে বের করতে মহাসচিবের কাছে অনুরোধ করেন। অন্যথায় সামনের দিনে পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা তার।

বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মির্জা আব্বাসের মতো একজন দায়িত্বশীল নেতার এমন বক্তব্য নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছেন। কেন এই বক্তব্য তাও খোঁজার চেষ্টা করেছেন। এমন বক্তব্যকে তারা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন।

তবে এখনই কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। শনিবারের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকা একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ নিয়ে এখনো কথা বলতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সাবেক নেতা ঢাকাটাইমসকে বলেন, আব্বাস ভাইয়ের মতো মানুষ তথ্য না জেনে কথা বলবেন এটা আমরা মনে করি না। আমরাও মনে করি ইলিয়াস ভাইযের মতো মানুষ হঠাৎ হাওয়া হয়ে যাবেন সেখানে অনেক ঘটনা যুক্ত থাকবে এটা স্বাভাবিক। তবে এতদিন পর এই কথা বলার কারণ আব্বাস ভাই ভালো বলতে পারবেন।

মির্জা আব্বাস তার বক্তব্যে ইলিয়াস আলী নিখোঁজের আগের রাতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির এক নেতার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে ছিলেন বলে দাবি করেছেন। সেই নেতার নাম না বললেও নিখোঁজের পেছনে ওই ঘটনার রেষ টানার চেষ্টা করেছেন বিএনপির এই শীর্ষনেতা।

এদিকে তার বক্তব্য নিয়ে গণমাধ্যম ফলাও করে সংবাদ প্রচারের পর নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন মির্জা আব্বাস। রবিবার বিকালে শাহজাহানপুরের বাসায় তিনি সংবাদ সম্মেলন করবেন।

বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক আনসার আলী রাজধানী থেকে নিখোঁজের পর ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের ফিরে আসার অপেক্ষায় আছেন পরিবার। এখন পর্যন্ত আদালত কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে কোনো ধরনের সমাধান পায়নি তাদের পরিবার। পরিবার জানে না কোথায় আছেন ইলিয়াস আলী ও আনসার আলী।

বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বনানী থেকে নিখোঁজ হন। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদির লুনা ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। সেখানে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার স্বামীকে বেআইনিভাবে আটক করে রেখেছে। এ ছাড়া ইলিয়াস আলীর মুক্তির জন্য তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেন।

ইলিয়াস আলীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করেছে-স্ত্রীর এই অভিযোগের পর, ইলিয়াস আলীকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, সরকারকে তা জানাতে বলেন আদালত। স্বরাষ্ট্রসচিব থেকে শুরু করে থানার ওসি পর্যন্ত ১০ জনকে ১০ দিনের মধ্যে এই রুলের জবাবও দিতে বলা হয়।

এরপর ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার এ বিষয়ে আর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি এবং হাইকোর্টও এ বিষয়ে কোনো পক্ষের শুনানি গ্রহণ করেননি। ফলে বিষয়টি এখনো অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।

ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনার রুশদির লুনার আইনজীবী এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো দাবি করেছে তারা ইলিয়াস আলীকে আটক করেনি। তাই হাইকোর্টে ইলিয়াস আলীর শুনানির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। এ কারণেই এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান পাননি তার স্ত্রী।’

(ঢাকাটাইমস/১৮এপ্রিল/বিইউ/কেআর)