করোনা আক্রান্ত খালেদা কতটা টেনশনে, সাহস যোগাচ্ছেন কারা?

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২১, ১৫:২৩ | প্রকাশিত : ১৯ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৩২

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে দুই বছরেরও বেশি সময় কারাভোগের পর নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা আর করোনার প্রকোপের মধ্যে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি পুরোপুরি ঘরবন্দি। পুরো সময়টিতে সার্বক্ষণিক কোনো স্বজন নেই তার পাশে। তিন বছর ধরে রাজনীতিতেও নেই সম্পৃক্ততা। এই অবস্থায় তিনি নিজেই আক্রান্ত হলেন মহামারি করোনাভাইরাসে।

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর আত্মীয়-স্বজন কেউ খালেদা জিয়ার বাসায় যাচ্ছেন না। তবে তারা টেলিফোনে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। যদিও বৃহস্পতিবার রাতে খালেদা জিয়াকে বসুন্ধরার এভার কেয়ার হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করার জন্য নেয়ার সময় তার ভাই শামীম এস্কেন্দারও ছিলেন। চিকিৎসকদের সঙ্গে অন্য গাড়িতে তিনি হাসপাতালে গিয়েছিলেন।

নেতাকর্মীসহ শুভাকাঙ্ক্ষীদের কপালে যখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ, তখনও মানসিকভাবে বেশ শক্ত আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। গত বৃহস্পতিবার রাতে এক বছর ২০ দিন পর সিটি স্ক্যান করাতে বাসার বাইরে বের হয়ে হাসপাতালে যান তিনি। সেখানে উপস্থিত বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, তাদের থেকেও খালেদা জিয়াকে আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ়চেতা মনে হয়েছে।

অন্যদিকে চিকিৎসকরাও জানিয়েছেন, করোনায় আক্রান্ত হলেও খালেদা জিয়া মানসিকভাবে শক্ত আছেন। নিজের চিকিৎসার সঙ্গে তার সঙ্গে আক্রান্তদের সবার খোঁজ রাখছেন এবং চিকিৎসার তদারকিও নিজে থেকে করছেন।

আলোচনা চলছে- পরিবার ছাড়া একধরনের নিঃসংঙ্গ জীবন যাপন করা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে সাহস যোগাচ্ছেন কারা? কীভাবে মোকাবেলা করছেন একের পর পর প্রতিকূল পরিস্থিতি।

জানা গেছে, খালেদা জিয়া তার গৃহকর্মী ও ব্যক্তিগত কর্মচারীদের নিয়েই বসবাস করছেন গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’। তবে তার বোন সেলিমা ইসলাম ও ছোট ভাই শামীম এস্কেন্দার নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। করোনার সংক্রমণ কম থাকার সময় নিয়মিত তাদের বাসায় যাওয়া-আসা ছিল। কিন্তু করোনার প্রকোপ বাড়ার পর তা কিছুটা কমে গেছে। তবে টেলিফোনে সার্বিক খোঁজখবর রাখছেন তারা।

অন্যদিকে লন্ডন থেকে বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত ভার্চুয়ালি কথাবার্তা হয় বেগম জিয়ার। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান নিয়মিত স্বাস্থ্যের খোঁজখবর রাখছেন। পাশাপাশি দেশে তার চিকিৎসার জন্য গঠিত চিকিৎসক টিমের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন ডা. জোবায়দা।

রমজানের শুরু থেকে ছোটভাইয়ের বাসা থেকে ইফতার পাঠানো হয় বেগম খালেদা জিয়ার জন্য। রমজানে ইবাদত-বন্দেগিতে সময় কাটাচ্ছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকে আসার পর থেকে নির্ধারিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। তবে পরিবারের লোকজন দূরে থাকলেও তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে কাছেই আছেন বলা যায়। সবসময় তারা খোঁজ রাখছেন। অসুস্থ হওয়ার পর আরও বেশি খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। ফলে একা থাকলেও সেই অর্থে তিনি একা নন কিন্তু! বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীরা কিছুদিন পরপর তার জন্য দোয়া করছেন, এসবও তিনি জানেন।’

খালেদা জিয়ার সার্বিক অবস্থা নিয়ে তার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে তার চিকিৎসা চলছে। ভালো ইমপ্রুভ করছে। আপনারা উনার জন্য দোয়া করবেন।’

রমজানে কেমন কাটছে তার সময় এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া-দরুদ, নামাজ পড়ে সময় কাটছে তার। আর আমরা তো টেলিফোনে নিয়মিত কথা-বার্তা বলছি।’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের একজন সিনিয়র সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘চেয়ারপারসন করোনার বাইরেও নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। কিন্তু তার সঙ্গে কথা বলার সময় বেশ সাবলীল মনে হয়। এত সাহস এবং শক্তি কোথায় পান আমরাও ভেবে পাই না। কারণ তিনি কিন্তু একা একা উঠে দাঁড়াতেও পারেন না।’

এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘অল্প সময়ে টুকটাক কথা হয়েছে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে। সাবলীলভাবেই তিনি কথা বলেছেন।’

কেমন দেখলেন তাকে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) দেখে মনে হয়েছে তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন। ম্যাডামকে দেখে মনে হয়েছে তিনি আমাদের চেয়েও আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ়চেতা।’

যেভাবে চলছে খালেদার চিকিৎসা

খালেদা জিয়ার আগের অসুস্থতার সঙ্গে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ব্যস্ততা বেড়েছে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের। লন্ডনে বসে বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান সবকিছু তদারকি করলেও দেশে একটি মেডিকেল টিম করা হয়েছে। যার নেতৃত্বে আছেন বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুস শাকুর খান, ইউরোলজিস্ট অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহ. আল মামুন।

এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গেও নিয়মিত তার চিকিৎসার বিষয় নিয়ে পরামর্শ করা হয় বলে জানা গেছে।

এদিকে সিটি স্ক্যান রিপোর্ট ভালো এলেও যতটুকু সংক্রমণ হয়েছে সেজন্য নতুন ওষুধ দেয়া হয়েছে বেগম জিয়াকে।

সার্বিক অবস্থা নিয়ে অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ম্যাডামের সিটি স্ক্যানের (চেস্ট) ফাইনাল রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। তখনই লন্ডনে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিনী ডা. জোবাইদা রহমান, যিনি ম্যাডামের সব কিছু তদারকি করছেন, তিনিসহ দেশ-বিদেশে উনার মেডিকেলে টিমের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে আমরা পুরো রিপোর্টটি পর্যালোচনা করেছি। সবার পরামর্শ নিয়ে আরেকটি ওষুধ যুক্ত করা হয়েছে। চিকিৎসায় যেসব ওষুধপত্র আগে দেয়া হয়েছে, তা ঠিক আছে। ম্যাডামের অবস্থা স্থিতিশীল আছে।’

সিটি স্ক্যান রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদ হোসেন বলেন, সিটি স্ক্যানের ফাইনাল রিপোর্টে ‘মিনিমাম ইনভলবমেন্টের’কথা বলা হয়েছে, যেটা সাময়িক রিপোর্টে বলা হয়েছিল। আমরা সবাইকে জানাতে চাই যে, সিটি স্ক্যানের ফাইন্ডিংস, সেটাকে ক্লিনিক্যালি আমরা মনে করতে পারি যে, এটি অত্যন্ত মিনিমাম, নেগলিজেবল।’

(ঢাকাটাইমস/১৯এপ্রিল/বিইউ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :