আমেরিকার বৃত্তি পেয়েও ভিসা জটিলতায় উদ্বিগ্ন তিন হাজার শিক্ষার্থী

প্রকাশ | ১৯ এপ্রিল ২০২১, ১৮:৩৫ | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২১, ২১:২৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবৃত্তি (স্কলারশিপ) ও ফেলোশিপ পাওয়া প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী করোনা লকডাউন ও ভিসা জটিলতায় অনিশ্চয়তার মুখে। ঠিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিতে না পারায় কারও কারও ফান্ডিং চলে যাওয়ার পথে। কেউ কেউ ডেফারেল করে আগামী সেশনের অপেক্ষায়। এবার যোগ দিতে না পারলে তাদের স্বপ্ন পুরোপুরি ভেঙে যাবে।

অথচ একই সঙ্গে বৃত্তি পাওয়া অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে ক্লাস শুরু করেছেন। কেবল বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ডেফারেল করতে হচ্ছে। সরকার সহযোগিতা করলে অন্য দেশের মতো তাদের ভিসা জটিলতা কেটে যেতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে দেশে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ চলছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আমেরিকান দূতাবাস তাদের পূর্বনির্ধারিত সব ভিসা ইন্টারভিউ বাতিল করে। গত বছরও একই পরিস্থিতির কারণে ভিসা জটিলতা সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, প্রতি বছর তিন-চার হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবৃত্তি ও ফেলোশিপ নিয়ে পড়তে যান। গত বছর অন্তত তিন হাজার শিক্ষার্থীর ভাগ্যে স্কলারশিপ ও ফুল ফান্ডিং নিয়ে আমেরিকায় পড়ার সুযোগ আসে। অনেক সাধনায় এটি অর্জন করলেও ভিসা জটিলতায় তারা এখনো আমেরিকায় যেতে পারেননি। আর তাতে দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগে দিন কাটছে ওই মেধাবীরেদর।

এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহায়তা চাইছেন শিক্ষার্থীরা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তরফে তাদের আশ্বস্ত করা হলেও এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। আর আমেরিকান দূতাবাস বলছে, সরকার থেকে কোনো ধরনের অনুমতি না পেলে তাদের কিছু করার নেই। তবে তারা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন। শিক্ষার্থীদের ভিসা পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন তারা।

দেশে চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও বিধিনিষেধ পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দূতাবাস ভিসা আবেদন বন্ধ রেখেছে। নতুন করে ভিসা ইস্যু করছে না দূতাবাসগুলো। গত বছর একই ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে অনেকে স্কলারশিপ পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিতে পারেননি।

জানা গেছে, একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন থেকে শুরু করে ভিসা আবেদন পর‌্যন্ত খরচ হয় এক থেকে দুই লাখ টাকা। অনেকে ঋণ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করে থাকেন ফান্ডিংয়ের আশায়। কিন্তু যখন ফান্ডিং নিশ্চিত, তখন শিক্ষার্থীদের মুখের হাসি কেড়ে নেয় ভিসা জটিলতা।

সূত্রমতে, করোনার কারণে গত বছর মাস্টার্স ও পিএইচডিতে ফুল ফান্ডিং স্কলারশিপ পেয়েও ভিসা জটিলতায় যেতে পারেননি অনেক শিক্ষার্থী। চলমান লকডাউনের একই পরিস্থিতি এ বছরও। আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামার, ফল ও স্প্রিং- এই তিন সেমিস্টারে বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করেন। তাদের একটি বড় অংশ ফুল ফান্ডিং নিয়ে পড়াশোনা করতে যান সেখানে। তাদের অনেকেই নিজেদের বিশ্ববিদ্যলয়ের পৌঁছার কার্যক্রমের অগ্রগতি হারিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভিসা প্রদানে দূতাবাসের কার্যক্রম সচল রাখার দাবি জানান তারা।

আমেরিকান ভিসাপ্রত্যাশী একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘করোনার কারণে দুবার আমার ভর্তি পিছিয়েছি। প্রথমবার ফল ২০২০ থেকে স্প্রিং ২০২১-এ, আর এখন ফল ২০২১-এ। আমার প্রফেসর আমাকে দুবার ছাড় দিয়েছেন,  কিন্তু এবার না যেতে পারলে আমার ফান্ডিং বাতিল হওয়ার শঙ্কা রয়েছে ।‘

যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী তানিন যায়েদ বলেন, সঠিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পৌঁছাতে না পারলে তাদের ডিফার করতে হয়। সেক্ষেত্রে এক সেমিস্টারে ভর্তি হতে না পারলে পরবর্তী সেমিস্টারে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকে। তবে কতবার ডিফার করা যায় সেটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নির্ভর করে। এছাড়া ফান্ডিংয়ের বিষয়টিও একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নির্ধারণ করে থাকে।

তানিন যায়েদ আরও বলেন, বাংলাদেশে যেভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে, আমেরিকাতেও একই অবস্থা। বৈশ্বিক এই মহামারির কথা চিন্তা করে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন করে ভাবনা-চিন্তা করছে। যারা আসতে পারেনি, হয়তো তাদের বিষয়টি বিবেচনা করবে।‌

আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ পাওয়া এক শিক্ষার্থীর আগামী মে থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। এখন চলছে এপ্রিল মাস।  এর মধ্যে কীভাবে ভিসার স্লট পাবেন এ নিয়ে তিনি চিন্তিত।  এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘সময়মতো উপস্থিত হতে না পারলে আমার ফান্ডিং চলে যাবে। প্রফেসরেরা তাড়া দিচ্ছেন আমার অবস্থা জানাতে, যাতে করে আমি না গেলে আমার জায়গায় অন্য কাউকে ফান্ডিং দিতে পারেন। এখন চলমান লকডাউনে ভিসা কার্যক্রম বন্ধ। আমার মতো আরো অনেক শিক্ষার্থীই এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।’

ভিসা জটিলতায় ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিতে না পারা কিংবা ডেফারেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা এই মুহূর্তে শতাধিক। এটা তাদের শেষ সুযোগ। তাদের একজন বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ঠিকসময়ে পৌঁছাতে না পারায় আমাকে ডিফার করতে হয়। পুরো ব্যাচে একমাত্র আমিই ডিফার করতে বাধ্য হয়েছি। আর স্প্রিং সেশনে ডিফার করার অপশন ছিল না বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তাই আমাকে আবার ফল ২০২১-এর অপেক্ষায় থাকতে হয়।’

এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা চাইছেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, এই মুহূর্তে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীনেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের ভিসা কার্যক্রম সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চালু রাখা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এফ ক্যাটাগরির স্টুডেন্ট ভিসা দিতে দূতাবাস এখনো কোনো বিশেষায়িত কর্মসূচি নেয়নি।

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘একটা বছর অপেক্ষায় থাকার পর আমার সামনে আবার সেই একই জটিলতা। আমার মতো শতাধিক শিক্ষার্থী ২০২১-এ ডিফার করতে বাধ্য হয়েছে। এ বছরই আমাদের জন্য শেষ সুযোগ। কেননা অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় একাধিকবার ডেফারেলের সুযোগ দেয় না, বা দিলেও ফান্ডিং পাওয়া যায় না।’

ভিসা সংকট নিরসনে উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল  পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে সমস্যা সমাধানের। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানা গেছে।

আর আমেরিকান দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, সমস্যাটি সম্পর্কে তারা অবগত আছে। তবে সরকার থেকে কোনো ধরনের অনুমতি না পেলে তারা এ ব্যাপারে কিছু করতে পারছেন না। কেননা সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে তারা ভিসা আবেদন বন্ধ রেখেছে।

পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে একজন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে জানান, তারা শিক্ষার্থীদের ভিসা জটিলতা নিরসনে কাজ করছেন। আশা করছেন শিগগিরই এর সমাধান হবে। 

 

(ঢাকাটাইমস/১৮এপ্রিল/মোআ)