ন্যাশনাল ব্যাংক নিয়ে সিকদার পুত্র-কন্যার ফাটল প্রকাশ্যে

প্রকাশ | ২০ এপ্রিল ২০২১, ১০:২৪ | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২১, ১১:১৮

রহমান আজিজ

বেসরকারি খাতের প্রথম প্রজন্মের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড। বড় মূলধন ও সম্পদে শক্তিশালী ব্যাংকটি দীর্ঘদিন ধরে অধিকাংশ সূচকে নিচের দিকে নামছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে অনিয়মের কথা বলছেন ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা। সবার সামনে আসছে ব্যাংকে  সিকদার পরিবারতন্ত্রের কথা।

ব্যাংক নিয়ে সিকদার পরিবারের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যাংকের অন্য পরিচালকদের কোনো বাধা কাজে আসেনি। তাই পছন্দের এমডি নিয়োগ দিয়ে যখন-তখন বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছাড়াই নামমাত্র প্রতিষ্ঠানকে মোটা অঙ্কের ঋণ দিয়েছে ব্যাংকটি। আর তাতে খেলাপির পাল্লা ভারী হতে থাকে দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংকটির। এভাবে শক্তিশালী ব্যাংকটির অবস্থা দুর্বল হতে থাকে দ্রুত। কিন্তু ব্যাংকটির চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের কারণে কেউ তখন কথা বলতে পারেনি।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি জয়নুল হক সিকদারের মৃত্যুর পর ব্যাংকটিতে দুটি পক্ষের মখোমুখি অবস্থা সৃষ্টি হয়। দুই পক্ষেরই দাবি, তারা দুর্বলতা কাটিয়ে ফের শক্তিশালী অবস্থানে যেতে চায়। একটি পক্ষ ব্যাংকটির সব অনিয়ম কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায়। আরেক পক্ষ অনিয়ম অব্যাহত রাখতে চায়। এ নিয়ে খোদ সিকদার পরিবারের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভক্তি। 

জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ন্যাশনাল ব্যাংক পর্ষদ সভার অনুমোদন ছাড়াই ৬২৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এমনকি এসব ঋণের বেশির ভাগের কোনো নথিপত্র ব্যাংকটিতে মিলছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা কয়েক দফা ব্যাংকটির কাছে এসব নথিপত্র চেয়ে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকে তা এখনো  জমা পড়েনি।

জানা গেছে, এসব ঋণ দেওয়া হয়েছে ব্যাংকটির পরিচালক পদে থাকা সিকদার পরিবারের এক সদস্যের নির্দেশে। এ সময় ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন এ এস এম বুলবুল। এ কারণে জয়নুল হক সিকদারের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার ব্যাংকটির দায়িত্ব নিলেও প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব লেগেছে পুত্র ও কন্যাদের মধ্যে।

এ এস এম বুলবুলকে পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ না দেয়া, অনুমোদনহীন ঋণের অনুমোদন না দেয়াসহ অনিয়ম ঠেকাতে কন্যা পারভীন হক সিকদারের সঙ্গে পুত্রদ্বয় রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদারের নেতৃত্বে দুটি গ্রুপ তৈরি হয়।

জানা গেছে, ন্যাশনাল ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদারকে নিয়ন্ত্রণ করছেন ছেলে ব্যাংকের পরিচালক রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদার। এ ছাড়া সিকদার গ্রুপের কর্মকর্তা নাইমুজ্জামান ভূঁইয়া ও বদিউল আলমও ব্যাংকটির পরিচালক এবং দুই ছেলের পক্ষে।

তাদের বিপরীতে অবস্থান নেওয়া মেয়ে পারভীন হক সিকদারকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন দিচ্ছেন কেডিএস গ্রুপের খলিলুর রহমান, হোসাফ গ্রুপের মোয়াজ্জেম হোসেন ও মাবরুর হোসেন এবং জাকারিয়া তাহের। তারা চাইছেন ব্যাংকটিতে নতুন করে আর অনিয়ম না হোক।

গত ১৩ এপ্রিল ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান পারভীন হক সিকদারের আহ্বানে ৪৪৪তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এ এস এম বুলবুলকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চলতি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে শাহ্ সৈয়দ আব্দুল বারীকে।

এভাবেই দেশের পুরোনো ও প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল ব্যাংক একটি পরিবারের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে টালমাটাল অবস্থায় পড়েছে। এই দ্বন্দ্ব শিগগির শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।

(ঢাকাটাইমস/২০এপ্রিল/মোআ)