আপা আমরা ভালো নেই...

প্রকাশ | ২০ এপ্রিল ২০২১, ১০:৩৬

ডা. আশ্রাফুল হক সিয়াম

আব্বার মন খারাপ । কাল ফোন করে আদি (৯) আর আযফীর (৫)-কে দেখতে চাচ্ছে। সন্দিহান ওদেরকে আব্বার দেয়া ওয়াদা কি পূরণ করতে পারবে এই জীবনে? ওরা দুজনই দাদা ভক্ত, দাদার সাথেই সবসময়। আব্বাকে নিরাপদ রাখার জন্য আব্বা এখন বড় ভাইয়ের বাসায় । আব্বার মনে সন্দেহ যদি ওদের সাথে আর খেলা না হয়।

ডা. ওয়াহিদা আর ডা. মঞ্জুর। আমার টিমে কর্মরত দুজন জুনিয়র চিকিৎসক। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে কর্মরত এই দুজন আমার ইউনিটের সব কটা রোগীর সবসময়ের সঙ্গী। অপারেশনের আগে, অপারেশনের সময় এবং পরে যে বিশাল কর্মযজ্ঞ তার মূল সেনা এরাই।

গত একটা বছর চলমান মহামারির সময় হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে এরা কোভিড নন কোভিড বিচার করেনি, কাজ করে গেছে একই উদ্যমে। অনেক রকম প্রণোদনা, পুরস্কার,  প্রশংসার আশ্বাস পেলেও শেষমেশ যে প্রাপ্তিটুকু তাদের ঘরে পৌঁছেছে তা  হলো তাদের দুজনই সপরিবারে কোভিড পজিটিভ। আবার বৃদ্ধ বাবা-মাসহ।

আজ শুনলাম ওয়াহিদা তার বৃদ্ধা মাকে বিদায় জানানোর অপেক্ষায়। গতকাল বক্ষব্যাধি হাসপাতালের মফিজ ভাইও তার  বাবাকেও বিদায় দিলেন। এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে।

যখন নকল মাস্ক সরবারহ করা হলো, তার কভার অল গাউন অন্য পেশার লোকেরা পরে ফটোসেশনে মত্ত ছিলে, যখন তাদের মতো অসংখ্য চিকিৎসক সেবিকা আক্রান্ত হচ্ছিলে, তখনও কেউ তাদের খবর নেয়নি।

আপার (প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ) ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের মা-বাবাই বরং তাদের ঠেলে দিয়েছিলে মানবতার সেবায়। তাদেরই প্রাণান্ত প্রচেষ্টায় যখন কিছুটা লাগাম ধরা সম্ভব হয়েছিল পরিস্থিতির, তখন আপনারাই অবাধ অস্বাস্থ্যকর চলাচলের মাধ্যমে তাকে লাগামছাড়া করেছেন।

প্রতিদিন প্রতিটি চিকিৎসক বাড়ি ফিরে যায় এক অজানা আতঙ্ক নিয়ে। হয়তো আজই সে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছে ভয়ংকর ভাইরাসটিকে। বাড়িতে গিয়েই সে আপনার মতো নিজের সন্তানকে জড়িয়ে ধরতে পারে না। নিজের বাবা-মাকে ছুতে পারে না। গত একটা বছর ধরেই পারে না।

আর আজ সেই সেবাদানের পথে প্রতি পদে পদে তার পরিচয় খুঁজতে উঠে পরে লাগা তাকে পীড়া দেয় বৈকি। সে পীড়াটুকু বোঝার মতো 'বোধ' আপনাদের মাঝে রাষ্ট্র তৈরি করতে পারেনি। এ ব্যর্থতা তো রাষ্ট্রেরই।

সরকারকে ভাবতে হবে এই হয়রানি বন্ধ করতে হবে অযথা irritate না করার ব্যবস্থা করতে হবে। আপা আপনার একক প্রচেষ্টায় সফলতাগুলোকে থামানোর কোনো নতুন পাঁয়তারা না তো? সাদা এ্যাপ্রোন পরে কেউ অন্যায় করে না। তবে অন্যান্য বিশেষ পোশাক ব্যবহার করে যে অন্যায় হয় তা হরদমই পত্রিকায় আসে। সাদা এ্যাপ্রোন চিকিৎসকই বোঝায়। প্রশ্ন অন্যান্য বিশেষ পোশাক নিয়েই থেকে যায়।

একটু ভালো ব্যবহার আর একটু সন্মানই তো? এতদিনের অপমানের জমাটবাধা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশই কিন্তু। সাবধান....

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট