এখন কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি না

প্রকাশ | ২০ এপ্রিল ২০২১, ১১:২৪ | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২১, ১১:৪৬

আফজাল হোসাইন রিমন

শ্রেষ্ঠত্বের বড়াই করে পৃথিবীর বহু মানুষ মিশে গিয়েছে কালের গর্ভে। আমাদের এক সময় শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার ছিল না। ছিল না বলেই হয়তো মুক্তিযুদ্ধের মতো একটা সফল সংগ্রাম করতে পেরেছিল আমাদের বাঙালি জাতি।

না হয়, শ্রমিকের পাশে থেকে কোনো ধনীর ছেলে যুদ্ধ করতে চাইতো না। গ্রামের অক্ষরজ্ঞানহীন কৃষকের সাথে যুদ্ধের ট্রেনিং নিতে চাইতো না শিক্ষিত প্রফেসর। দেশ স্বাধীন হয়েছে।

কেউ টাকায় বেড়েছে, কেউ জ্ঞানে, কেউ বা পদ পদবিতে। শুরু হয়েছে বিভাজন। কেউ আবার আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। ভেতরে ভেতরে শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করা পুরো জাতি এখন কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি না।

একজন রিকশাওয়ালাও একজন শিক্ষিত মানুষকে নিজের চেয়ে বড় ভাবতে নারাজ। আমাদের সামাজিক অবক্ষয় আমাদের ভেতরে ধারণা দিয়ে দিয়েছে, আমিই সেরা। আরও খোলাখুলি বলতে গেলে, আমিই শ্রেষ্ঠ।

আমি একটা সাধারণ বিষয় ধরতে পারি না, কী হতো ওই ডাক্তার ম্যাডাম একটু বিনীত হলে বা নিজের কার্ডটা দেখিয়ে দিলে?

অথবা একজন পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা ম্যাজিস্ট্রেটের কতটা দায়িত্বে অবহেলা হতো একজন মহিলা যিনি অ্যাপ্রোন পরে, গাড়িতে স্টিকার নিয়ে যাচ্ছিলেন তাকে ছেড়ে দিলে?

একটা ‘ইগো’র যুদ্ধ হয়ে গেল। ডাক্তার ম্যাডাম ভাবলেন, কত বড় সাহস আমার কাছে কার্ড চায়? পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেট ভাবলেন, আমি কার্ড দেখতে চাইলাম, দিলো না এতো সাহস পায় কোথায়? কেউ জিতেনি। হারেনিও কেউ।

প্রকট হয়েছে আমাদের শ্রেষ্ঠত্বের দ্বন্দ্ব। আমরা ভাগ হয়ে গেছি, দেশের ডাক্তার জনগোষ্ঠী নিজেদের পেশার লোকের পক্ষে এবং বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সমর্থকগোষ্ঠী অবস্থান পরিষ্কার করেছেন তাদের সদস্যদের পক্ষে।

অথচ আমি কার পক্ষ নেবো বুঝতে পারছি না, উভয়েই জনগণের সেবক! যার যেখানে লাভ সেই পেশার মানুষের পক্ষেই অবস্থান নিয়ে দেদার মন্তব্য করে যাচ্ছে ফেসবুকে। নিরপেক্ষ চিন্তা করতে কেউ চাই না।

আমরা সবাই পাওয়ারফুল! হারিয়ে গেছে বিনয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সুন্দর ব্যবহার! মানবিক, মানবতার দায়িত্বশীল আচরণ কেউ করতে চাই না। কারণ আমাদের প্রচুর ইগো। কে কত বড় মানুষ। কার কত ক্ষমতা। কার কত টাকা।

অথচ আমাদের একজন ডাক্তার বললো না, ডাক্তার ম্যাডাম ভুল করেছেন। ডাক্তার আপা ক্ষেপে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন, এটা ঠিক হয়নি। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বললো না, পুলিশ এমন না করলেও পারতো। দিন শেষে, কেউ আসলে সত্যটা কে বলল সেটা জানতে চায় না।

জানতে চায়, আমাদের ছোট করে কথা কে বললো? কার এতো বড় সাহস...হায় মানবিকতা, হায় করোনা !

লেখক: আহ্বায়ক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কসবা উপজেলা শাখা

ঢাকাটাইমস/২০এপ্রিল/এসকেএস